বাংলার ভোর প্রতিবেদক
ব্যবহার করা প্লাস্টিকের কাপে মিলেছে ক্ষতিকর ভারি ধাতু। এর ফলে মানবদেহে বাসা বাঁধতে পারে মরণব্যাধি ক্যানসার। শুধু তাই নয়; কপার, লেড ক্রোমিয়াম, ক্যাডমিয়ামের মতো বিষাক্ত পদার্থ ঘটাতে পারে কিডনি রোগসহ মারাত্মক স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা। প্লাস্টিকের কাপ ব্যবহারে ক্যান্সার, কিডনি রোগসহ মারাত্মক স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে। সম্প্রতি যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবির) একদল গবেষকের গবেষণায় উঠে এসেছে ভয়াবহ এ তথ্য। বিশ্বের সর্বত্র একক-ব্যবহার উপযোগী প্লাস্টিকের কাপের ব্যবহার হচ্ছে। যা ছোট টংয়ের দোকান থেকে শুরু করে অফিস, রেস্তোরাঁসহ নানা জায়গায় চা জাতীয় পানীয় পরিবেশনে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
বর্তমান বিশ্বে প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার ও এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে চলছে ব্যাপক গবেষণা। সম্প্রতি যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবির) একদল গবেষকের গবেষণায় পলিস্টাইরিনের (Polystyrene) তৈরি প্লাস্টিকের কাপ ব্যবহারের ফলে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি, বিশেষ করে কিডনি, ফুসফুস, লিভার ক্যানসারের মতো মরণব্যাধি সৃষ্টিকারী ভারি ধাতুর উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। যা প্লাস্টিকের কাপ থেকে খুব সহজে স্থানান্তরিত হয়ে পানীয়তে ও পরবর্তীতে মানবদেহে ঢোকে।
গবেষক দলটি যশোর শহরের বিভিন্ন দোকান থেকে পূর্ণ ব্যবহারযোগ্য পলিস্টাইরিন প্লাস্টিকের তৈরি একক-ব্যবহারে উপযোগী ২০টি কাপ সংগ্রহ করে। পাশাপাশি চিনি, চা, কোমল পানীয় এবং লাচ্ছির নমুনা তৈরি করে নির্দিষ্ট নিয়মে ও সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে সেগুলোর পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষার পর ১৭টি নমুনায় ভারি ধাতুর উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া যায়। পাশাপাশি তারা একই খাদ্যপণ্যগুলো সাধারণ কাচের পাত্রে পরীক্ষা চালিয়ে কোনো ভারি ধাতুর উপস্থিতির প্রমাণ পাননি।
গবেষণায় গ্রাফাইট ফার্নেস পারমাণবিক শোষণ স্পেকট্রোফোটোমেট্রি (জিএফএএসএস) ব্যবহার করে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, নমুনা প্লাস্টিকের কাপে বিভিন্ন পরিমাণে ভারি ধাতুর উপস্থিতি রয়েছে। সবচেয়ে বেশি রয়েছে কপার, তারপর লেড, ক্রোমিয়াম এবং ক্যাডমিয়াম। এ সমস্ত ভারি ধাতুর উপস্থিতির ওপর ভিত্তি করে গবেষক দল স্বাস্থ্যঝুঁকির মাত্রা নির্ণয় করেছেন। এজন্য একক-ব্যবহার উপযোগী প্লাস্টিক কাপে গরম পানীয় পরিবেশন নিষিদ্ধ করা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। এছাড়া একক-ব্যবহারের বিকল্প হিসেবে মাটির তৈরি কাপ বা কাগজের কাপ ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
এ বিষয়ে গবেষক দলের প্রধান ও এগ্রো প্রডাক্ট প্রসেসিং টেকনোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক বি. এম খালেদ বলেন, ‘প্লাস্টিকের ব্যবহার আমাদের দেশে সর্বত্র বিরাজমান। প্লাস্টিকের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে এটি মাটিতে মিশে যায় না। এছাড়াও বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা একক-ব্যবহার উপযোগী প্লাস্টিক থেকে ভারি ধাতু খাবারে স্থানান্তরিত হওয়ার প্রমাণ পেয়েছেন। কিন্তু তাদের গবেষণায় দেখা গেছে, কেউ এক ঘণ্টা, কেউ বা তার চেয়ে অধিক সময়ে খাবার প্লাস্টিক কাপে রেখে সেই সময়ের মধ্যে খাবারে স্থানান্তরিত ভারী ধাতুর উপস্থিতি নির্ণয় করেন। কিন্তু, কোনো গবেষণায় আমরা ঠিক যে সময়ের মধ্যে খাবারটি বা পানীয়টি খাই, সেই সময়ের মধ্যে ভারি ধাতুর স্থানান্তর হওয়ার হার দেখা হয়নি। তাই আমি ও আমার দল এই বিষয়ের প্রতি গুরুত্বারোপ করি।’
যবিপ্রবির এগ্রো প্রোডাক্ট প্রসেসিং টেকনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস বলেন, ‘সরকারের এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরির উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি কিছু আইনকানুন তৈরি করে ক্ষতিকারক এ পণ্যটি উৎপাদন বন্ধ করতে হবে।’
এদিকে যবিপ্রবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘প্লাস্টিক আগামী বিশ্বের জন্য এক মহাবিপদ। এটম বোমার চেয়েও বড় বিপদ এই প্লাস্টিক। ফলে সরকারকে ফুড গ্রেড প্লাস্টিকের ব্যবহার নিশ্চিতে নজর দিতে হবে।’
এ গবেষণায় বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের নিরাপদ খাদ্য অফিসার আদ্দা আন সিনা, এগ্রো প্রোডাক্ট প্রসেসিং টেকনোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এস.এম. শামিউল আলম, সহকারী অধ্যাপক মো. সুমন রানা, স্নাতকোত্তর পর্যায়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল নোমান, মারিয়া তাবাসসুম শাম্মী, ফাতিমা পারভীন, তামান্না নাজনীন, মো. মোজাফফর হোসেন ও রিফাত পারভীন প্রমুখ অংশ নেন।