বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) ইউজিসি অনুমোদন বহির্ভুত পদে নিয়োগ প্রদান করায় প্রাক্তন উপাচার্য প্রফেসর ড. আব্দুস সাত্তারসহ ছয় শিক্ষক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদক যশোর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক জালাল উদ্দিন সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ে সোমবার বিকেলে এই মামলা দায়ের করেন।
মামলায় দুর্নীতি, অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে অনুমোদনহীন পদে নিয়োগ দিয়ে সরকারি ৫২ লাখ টাকার ক্ষতিসাধনের অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদক যশোর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক জালাল উদ্দিন।
মামলার আসামিরা হলেন, যবিপ্রবি’র সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. আব্দুস সাত্তার, অনুমোদনহীন পদে নিয়োগপ্রাপ্ত বর্তমান সহকারী পরিচালক (হিসাব) শরিফুল ইসলাম (৪১), সাবেক উপপরিচালক (অর্থ ও হিসাব) জি এম আনিছুর রহমান (৬৩), যবিপ্রবি কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. বিপ্লব কুমার বিশ্বাস (৫১), সাবেক কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর শেখ আবুল হোসেন (৭২) ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের প্রফেসর ড. মো. আজিজুল ইসলাম।
মামলার এজাহার বলা হয়েছে, আসামি উপাচার্য প্রফেসর ড. আব্দুস সাত্তার যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নির্বাহী হিসেবে কর্মরত থাকাকালীন অপর ৫ আসামির সাথে যোগসাজসে আসামি শরিফুল ইসলামের কাছ থেকে অবৈধভাবে লাভবান হয়ে এবং লাভবান করার মানসে দুর্নীতি, প্রতারণা, ক্ষমতার অপব্যবহার, অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গ ও অপরাধমূলক অসদচারণের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন, সংবিধি, নিয়োগ নীতিমালা ও ইউজিসির নির্দেশনা সুস্পষ্টভাবে লঙ্ঘন করে শরিফুল ইসলামকে অবৈধভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিট এণ্ড একাউন্টস অফিসার পদে নিয়োগ প্রদান করেন। এর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় তথা সরকারি তহবিল হতে জুলাই/২০১৫ সাল হতে এপ্রিল/২০২৪ সাল পর্যন্ত বেতন-ভাতা বাবদ সর্বমোট ৫২ লাখ ২৬ হাজার ৬৮৫ টাকা সরকারি কোষাগার হতে উত্তোলনের সুযোগ করে উত্তোলন করে বর্ণিত পরিমাণ সরকারি অর্থের ক্ষতিসাধন করেন। এর মাধ্যমে তারা দণ্ডবিধি’র ৪২০/৪০৯/১০৯ ধারা তৎসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
মামলার বিবরণে বলা হয়েছে, দুর্নীতি দমন কমিশনের অনুসন্ধান সংক্রান্তে সংগৃহীত রেকর্ডপত্র ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের বক্তব্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন হতে ২২/১০/২০০৮ খ্রি. তারিখে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে হিসাব কর্মকর্তার ০১ (এক) টি পদসহ প্রাথমিকভাবে মোট ১০৮ জন জনবলের অনুকূলে মঞ্জুরীসহ বরাদ্দ প্রদান করা হয়। মঞ্জুরিকৃত পদসমূহের মধ্যে অডিট এণ্ড একাউন্টস অফিসার পদের মঞ্জুরী ছিল না। উক্ত মঞ্জুরিপত্রের প্রেক্ষিতে যবিপ্রবি নিয়োগ নীতিমালার শর্ত অনুযায়ী হিসাব কর্মকর্তাসহ অন্যান্য পদে নিয়োগের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। উক্ত বিজ্ঞপ্তিতে অডিট এণ্ড একাউন্টস অফিসার পদে কোন কর্মকর্তা চাওয়া হয়নি। আসামি মো. শরিফুল ইসলাম যবিপ্রবিতে সেকশন অফিসার (গ্রেড-২) পদে কর্মরত থাকায় তিনি ২৩/০৫/২০১৫ খ্রি. তারিখে অভ্যন্তরীণ প্রার্থী হিসেবে হিসাব কর্মকর্তা পদে নিয়োগ লাভের জন্য আবেদন করেন। একই পদে জনাব রাজু আহম্মেদও আবেদন করেন। হিসাব কর্মকর্তা পদে নিয়োগের লক্ষ্যে অনুষ্ঠিতব্য মৌখিক সাক্ষাৎকারে অংশগ্রহণের জন্য তাদের কার্ড প্রেরণ করা হয়। উক্ত নিয়োগের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় সংবিধি অনুযায়ী গঠিত ০৫ সদস্য বিশিষ্ট নিয়োগ নির্বাচনী বোর্ডে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন তৎকালীন উপাচার্য প্রফেসর ড. আব্দুস সাত্তার।
এছাড়াও বাছাই বোর্ডে সদস্য হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রফেসর শেখ আবুল হোসেন, ড. বিপ্লব কুমার বিশ্বাস, প্রফেসর ড. আজিজুল ইসলাম ও জি এম আনিছুর রহমান। এই নিয়োগ বোর্ডে ‘অডিট এণ্ড একাউন্টস অফিসার’ হিসেবে শরিফুল ইসলামকে ইউজিসি’র অনুমোদনহীন ও বিজ্ঞপ্তিহীন অডিট এন্ড একাউন্টস অফিসার পদে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়। পরবর্তীতে ৯/০৩/২০১৬ খ্রি. তারিখে অনুষ্ঠিত যবিপ্রবির ৩৩তম রিজেন্ট বোর্ড সভায় অডিট এন্ড একাউন্টস অফিসার পদে ০১ (এক) বছরের শিক্ষানবীশ হিসেবে নিয়োগের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। অর্থাৎ আসামি শরিফুল ইসলামকে বিজ্ঞপ্তিহীন ও ইউজিসি’র অনুমোদনহীন অডিট এণ্ড একাউন্টস অফিসার পদে নিয়োগ প্রদানের জন্য প্রফেসর ড. আব্দুস সাত্তার ও প্রফেসর শেখ আবুল হোসেন নিজেদের সুপারিশ নিজেরাই বাস্তবায়নের জন্য সিদ্ধান্ত প্রদান করেন।
মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, কোন ধরনের আনুষ্ঠানিকতা এবং নিয়ম-নীতিমালার তোয়াক্কা না করে কোন প্রকার উন্মুক্ত বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই ইউজিসির নির্দেশনা লঙ্ঘন করে আসামি মো. শরিফুল ইসলামকে অডিট এন্ড একাউন্টস অফিসার পদে স্থানান্তর করা হয় এবং তিনি উক্ত পদে কর্মরত থাকা অবস্থায় অভ্যন্তরীণ প্রার্থীর সুবিধা নিয়ে ২০২০ সালে জাতীয় বেতন স্কেলের ৭ম গ্রেডের সহকারী পরিচালক (হিসাব) পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে অদ্যাবধি উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত আছেন। তিনি জুলাই/২০১৫ সাল হতে এপ্রিল/২০২৪ সাল পর্যন্ত সরকারি তহবিল হতে বেতন-ভাতা বাবদ সর্বমোট ৫২ লাখ ২৬ হাজার ৬৮৫ টাকা উত্তোলন করেছেন এবং অদ্যাবধি বেতন-ভাতা উত্তোলন অব্যাহত রেখেছেন। আসামিগণ পরস্পর যোগসাজসে নিজেরা লাভবান হয়ে এবং লাভবান করার মানসে দুর্নীতি, প্রতারণা, ক্ষমতার অপব্যবহার, অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গ ও অপরাধমূলক অসদচারণের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন, সংবিধি, নিয়োগ নীতিমালা ও ইউজিসির নির্দেশনা সুষ্পষ্টভাবে লঙ্ঘনপূর্বক শরিফুল ইসলামকে অবৈধভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদনহীন অডিট এন্ড একাউন্টস অফিসার পদে নিয়োগ প্রদান করায় দন্ডবিধি’র ৪২০/৪০৯/১০৯ ধারা তৎসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় এই মামলা দায়ের করা হয়েছে।