হাসান আদিত্য
যশোরের বাঘারপাড়া ও অভয়নগর উপজেলা পরিষদের ভোট গ্রহই আজ। ইভিএম পদ্ধতিতে সকাল আটটা থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোট প্রদান করবেন উপজেলা দুটির ভোটারা। উপজেলা দুটিতে চেয়ারম্যানসহ পুরুষ ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদের বিপরীতে ২২ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। অভয়নগরে ভাইস চেয়ারম্যান পদে আখতারুজ্জামান তারু ইতিমধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণের লক্ষ্যে কেন্দ্রে কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে নির্বাচনী সরঞ্জাম। মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত ভোটগ্রহণ কর্মকর্তারা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সাথে নির্বাচনী সরঞ্জাম নিয়ে কেন্দ্রে কেন্দ্রে চলে যান।
এদিকে, ভোটের সার্বিক প্রস্তুতি থাকলেও ভোটার উপস্থিতি নিয়ে সংশয় থাকছেই। এর অনেক কারণের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, বিএনপি এ নির্বাচন বর্জন করায় ও দলীয় প্রতীক না থাকায় এই দুই উপজেলায় ভোটের লড়াই হবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগ। নিজেদের মধ্যে ভোট প্রতিদ্বন্দ্বিতাতে অন্যদলের সমর্থিত ভোটাররা ভোট দেওয়ার আগ্রহ কম। তবে এ নির্বাচন বর্জন করায় আওয়ামী লীগের কাছে বিএনপি পরিবারের ভোটারদের গুরুত্ব বেড়ে গেছে দু’উপজেলায়ই। প্রার্থীরা বিএনপি পরিবারের ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আনতে গ্রহণ করছেন নানা কৌশল।
ত্রিমুখি লড়াই বাঘারপাড়ায়
বাঘারপাড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মাঠে রয়েছেন ছয় প্রার্থী। এর মধ্যে আলোচনায় আছেন তিন প্রার্থী। তবে ভোটের মাঠে কারও একক আধিপত্য নেই। কাজেই এবার ত্রিমুখী লড়াই হবে এমনটাই বলছেন সাধারণ ভোটাররা। বাঘারপাড়ায় চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল কবীর বিপুল ফারাজী (মোটরসাইকেল), উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি আব্দুর রউফ মোল্যা (দোয়াত কলম), উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক ও সাবেক সংসদ সদস্য রণজিৎ রায়ের বড় ছেলে রাজীব রায় (ঘোড়া), উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীরমুক্তিযোদ্ধা হাসান আলী (আনারস), বন্দবিলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা মাসুম রেজা খান (হেলিকপ্টার) ও জেলা আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেলিম রেজা বাদশা (কাপ পিরিচ)। বাঘারপাড়ায় ভোটের মাঠে ৬ জন প্রার্থী থাকলেও এখানে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে তিন প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার বিপুল ফরাজী, আব্দুর রউফ মোল্যা ও রাজীব রায়ের মধ্যে। এ তিন প্রার্থীর জয় পরাজয় নির্ধারণ হবে বিএনপি’র ভোটের মাঠে আসা না আসা নিয়ে। বিশেষ করে মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার বিপুল ফরাজী ও দোয়াত কলম প্রতীকের প্রার্থী আব্দুর রউফ মোল্যার জয় পরাজয় নির্ভর করছে বিএনপি ঘরাণার ভোটারদের উপস্থিতির উপর। এই দুই প্রার্থী চাইছেন বিএনপির ভোটাররা ভোটের মাঠে আসুক। তাদের ভোটের মাঠে আনার জন্য নানা কৌশল অবলম্বন করছেন বিপুল ও রউফ। অন্যদিকে রাজীব রায় চাইছেন বিএনপি ঘরাণার ভোটাররা যেন না আসে।
উপজেলায় সাধারণ ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন সাতজন। তারা হলেন, নারিকেলবাড়ীয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আসাদুজ্জামান চিশতী (টিউবওয়েল), বাঘারপাড়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নাজমুল হুসাইন নান্নু (চশমা), পৌর যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক এনায়েত হোসেন লিটন (মাইক), উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক বিএম শাহাজালাল (বই), কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য তাওহিদুর রহমান (উড়োজাহাজ) বাঘারপাড়া বণিক সমিতির সভাপতি জয়নাল আবেদিন (টিয়া) ও জহুরপুর এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম ছরোয়ার (তালা)। এছাড়া নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান বিথিকা বিশ্বাস (পদ্মফুল), উপজেলা মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক শামছুন নাহার লিমা (ফুটবল), ধলগ্রাম ইউনিয়ন যুব মহিলা লীগের সভাপতি রেকসোনা খাতুন (কলস) ও সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান দিলারা জামান (প্রজাপতি)। একজন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটারসহ বাঘারপাড়া উপজেলায় মোট ভোটার রয়েছে এক লাখ ৮৯ হাজার ৫১১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৯৫ হাজার ৪০৬ জন ও মহিলা ভোটার ৯৪ হাজার ১০৪ জন। এখানে কেন্দ্র ৭০ টি।
অভয়নগরে অলিয়ার ব্যাচা সমানে সমান
অভয়নগর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন দুই বলয়ের দুই আওয়ামী লীগ নেতা। মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে ভোটযুদ্ধে নেমেছেন অভয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র সরদার অলিয়ার রহমান। তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বি রাজঘাট নওয়াপাড়া শিল্পাঞ্চল শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর কাউন্সিলর রবিন অধিকারী ব্যাচা লড়ছেন আনারস প্রতীক নিয়ে। অভয়নগর উপজেলার রাজনীতিতে এই দুই নেতা ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে। দুজনেরই রয়েছে নিজস্ব বলয়। সরদার অলিয়ার রহমান স্থানীয় সংসদ সদস্য এনামুল হক বাবুল বলয়ের প্রার্থী। অপরদিকে রবিন অধিকারী ব্যাচা সাবেক সংসদ সদস্য রনজিৎ রায়ের অনুসারী বলে প্রচার রয়েছে।
রবিন অধিকারী ব্যাচা বিএনপি ও জামায়াত ঘরাণার ভোটারদের ভোটের মাঠে আনতে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মুখে মুখে শোনা যাচ্ছে। পক্ষান্তরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সরদার ওলিয়ার রহমানের অপেক্ষাকৃত ভরসা আওয়ামী লীগের ভোটেই। তবে স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, পরীক্ষিত এই দুই আওয়ামী লীগ নেতার লড়াই হবে সমানে সমান। খুব সামান্য ভোটে জয় পরাজয় নির্ধারণ হবে বলেও মত তাদের। অভয়নগর উপজেলায় নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন মোট তিনজন। ফুটবল প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান ডাক্তার মিনারা পারভিন, কলস প্রতীক নিয়ে লড়ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক লায়লা খাতুন ও উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ডাক্তার সাফিয়া খাতুন লড়ছেন হাঁস প্রতীক নিয়ে। এছাড়া পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান তারু ইতিমধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। ৮ টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে অভয়নগর উপজেলা গঠিত। দুইজন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটারসহ এখানে মোট ভোটার রয়েছে দুই লাখ ১৮ হাজার ৯০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ৮ হাজার ৩৩৫ জন ও মহিলা ভোটার এক লাখ ৯ হাজার ৭৫৩ জন। এখানে কেন্দ্র রয়েছে মোট ৮১ টি।
এদিকে, ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপের এ ধাপে যশোরের বাঘারপাড়া ও অভয়নগর উপজেলার ১৫১টি কেন্দ্রের নির্বাচনী কর্মকর্তাগণসহ সরাঞ্জম পাঠানো হয়েছে। দুই উপজেলায় ভোট গ্রহণের লক্ষ্যে গতকাল দুপুর ১২টা থেকে কেন্দ্রে কেন্দ্রে নির্বাচনী সরাঞ্জম পাঠানো শুরু হয়। এর আগে যশোর পুলিশ লাইনে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার সাংবাদিকদের জানান, ‘শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন করতে দুই হাজার পুলিশ, ২ হাজার ৪শ’ আনসার সদস্যের পাশাপাশি আরো ৫শতাধিক র্যাব, বিজিবি ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। সর্বোচ্চ নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে একটি শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণ করার সকল উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা থাকবে সমগ্র নির্বাচনী এলাকা।’