শেখ জাফি
বাজারে ক্রমাগত বাড়ছে ভোজ্য তেলের দাম, যা সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। এই অবস্থা থেকে রেহাই পেতে যশোরের কৃষকরা প্রতিবছর সরিষা আবাদে ঝুঁকছেন। এতে একদিকে যেমন কৃষকদের নিজেদের ভোজ্য তেলের চাহিদা মিটবে, তেমনি প্রয়োজন অতিরিক্ত সরিষা বিক্রি করে লাভবান হওয়ার আশা তাদের। যশোরের অধিকাংশ ফসলের মাঠে এখন হলুদ সরিষা ফুলের সমারোহ, মৌমাছির ভোঁ ভোঁ শব্দ। ফসলের মাঠে হলুদ সরিষার এমন দৃশ্য দেখা যায় যশোর-রাজগঞ্জ সড়কের দুই ধারে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে সরিষার বাম্পার ফলনে লাভবানের আশা কৃষকের। হাসি ফুটেবে তাদের মুখে। আর সরিষা চাষ বাড়াতে কৃষকদের প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। যশোর জেলায় মোট ২৬ হাজার কৃষককে প্রণোদনা হিসেবে বিজ ও সার দেয়া হয়েছে। এ বছর সরিষা উপাদনের লক্ষ্যমাত্র ধরেছে ৩২ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে।
যশোর কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পতিত জমিতে অনেকেই আগাম সরিষা আবাদ করেছে। ইতোমধ্যে সে সব ক্ষেতে সরিষায় ফুল আসতে শুরু করেছে। এছাড়া এখনও অনেকেই বপণ করছে। গত মৌসুমে যশোর জেলায় ২৯ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। কিন্তু উৎপাদন হয়েছিল ৩১ হাজার ৫৮০ হেক্টর জমিতে। কৃষি বিভাগ এ বছর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্র ধরেছে ৩২ হাজার ৫০০ হেক্টও জমিতে। ইতোমধ্যে যশোর জেলার আট উপজেলায় মোট ২৫ হাজার ২৫৫ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ হয়েছে।
কৃষি বিভাগের দেয়া তথ্য মতে, রোববার পর্যন্ত যশোর জেলার সদর উপজেলায় এ বছর সরিষা আবাদ হয়েছে ৩ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে। শার্শা উপজেলায় এ বছর সরিষা আবাদ হয়েছে ৬ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে। চৌগাছা উপজেলায় এ বছর সরিষা আবাদ হয়েছে ৩ হাজার ৫৮০ হেক্টর জমিতে। অভয়নগর উপজেলায় এ বছর সরিষা আবাদ হয়েছে এক হাজার ৯৬০হেক্টর জমিতে। বাঘারপাড়া উপজেলায় এ বছর সরিষা আবাদ হয়েছে ২ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে। মনিরামপুর উপজেলায় এ বছর সরিষা আবাদ হয়েছে ২ হাজার ৬৬০ হেক্টর জমিতে। কেশবপুর উপজেলায় এ বছর সরিষা আবাদ হয়েছে এক হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে।
কেশবপুরের উপজেলার গোপসেনা গ্রামের সরিষা চাষি হাসান আলী জানিয়েছেন, বাজারে সয়াবিন বা ভোজ্য তেলের দাম প্রতি লিটার ১৭০ থেকে ১৯০ টাকা। এক লিটার তেল এত টাকা দিয়ে কিনে খেতে কষ্ট হয়। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য তারা সরিষার আবাদ বাড়িয়েছেন। এ বছর দুই বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছেন তিনি। হাসান বলেন, আগে আমাদের এ জমিতে মুগ, মসুর ও খেসারি কলাই চাষ করতাম।
একই গ্রামের সিয়াম মোড়ল বলেন, ‘বাজারে তেলের খুব দাম। তাই আমরা সরিষা লাগিয়েছি। এই সরিষা থেকে তেল হবে আর সেই তেল আমরা সারা বছর খাব। সারা বছর তেল কিনতে হবে না। তিনি বলেন, বাজারের সয়াবিনে ভেজাল থাকে। কিন্তু আমাদের উৎপাদিত তেলে কোনো ভেজাল থাকছে না।
কিশোর দাস নামের এক চাষি বলেন, গাছে যেভাবে ফুল বা ফল এসেছে তাতে মনে হয় ফলন ভালো হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে সরিষার বাম্পার ফলনে লাভবানের আশা করছেন ।
যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মোশাররফ হোসেন বলেন, তেলজাতীয় ফসল চাষের ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। কৃষকদের সরিষা চাষের জন্য উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। যশোর জেলায় ৩২ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদেও লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সরিষা চাষ বাড়াতে যশোর জেলায় মোট ২৬ হাজার কৃষককে প্রণোদনা হিসাবে বিজ ও সার দেয়া হয়েছে।