বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোরে স্থানীয় সরকারে চার স্তরের এক হাজার ৩২৩জন জনপ্রতিনিধি রয়েছেন। এদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।
গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর অধিকাংশ জনপ্রতিনিধি আত্মগোপনে চলে যান। তাদের অনেকেই রোববার নিজ নিজ কর্মস্থলে যোগ দিতে গিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের বাধার সম্মুখিন হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সকালে থেকেই দপ্তরের সামনে লাঁঠিসোটা নিয়ে অবস্থান নেয় নেতাকর্মীরা।
কোথাও কোথাও হামলা চালিয়ে ভাংচুর করা হয়েছে দপ্তর। লুট করা হয়েছে জনপ্রতিনিধিদের হাজিরা বইসহ গুরুত্বপূর্ণ নথিও। এসব ঘটনায় নিরাপত্তার দাবিতে জেলা প্রশাসক ও নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন কয়েকজন ভুক্তভোগী জনপ্রতিনিধি। তবে অভিযোগ মিথ্যা দাবি করেছে জেলা বিএনপি। আর প্রশাসন বলছেন, বিষয়টি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে জানানো হবে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার বলেন, ‘জনপ্রতিনিধিদের বাঁধা দেয়ার ঘটনা দুঃখজনক। অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি আমরা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে জানাবো।’
জানা যায়, যশোরে জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভায় এই চার স্তরে ১ হাজার ৩২৩ জন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি রয়েছেন। এর মধ্যে ৯১টি ইউনিয়নে এক হাজার ১৮৩ জন, ৮টি উপজেলায় ২৪জন, ৮টি পৌরসভায় ১০৪ জন এবং জেলা পরিষদের ১২জন জনপ্রতিনিধি রয়েছেন।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে আওয়ামী লীগ সমর্থিত জনপ্রতিনিধিরা আত্মগোপনে চলে যান। তাদের অনেকেই রোববার অনেকে নিজ নিজ কর্মস্থলে যোগ দিতে গিয়ে বাধার সম্মুখিন হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সদর উপজেলা চেয়ারম্যান তৌহিদ চাকলাদার ফন্টু বলেন, ‘রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে অফিসে যেতে পারেননি। আজ (রোববার) সকালে অফিসে যাওয়ার পথে শুনি সন্ত্রাসীরা অফিসের নিচে অবস্থান করছে। অফিসে হামলা চালিয়েছে। নিরাপত্তার ঝুঁকি থাকায় আমি আর অফিসে যাইনি। নিয়মিত অফিস যাওয়ার ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে ও যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য লিখিত দিয়েছি।’
বাঘারপাড়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল কবীর বিপুল ফারাজী বলেন, ‘সরকারের নির্দেশনা ও জনগণের দায়বদ্ধতা থেকেই আজ (রোববার) সকাল ৯ টা ৭ মিনিটে আমি উপজেলা পরিষদে প্রবেশ করি।
এর কিছুক্ষণ পর বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের কয়েকশত নেতাকর্মী লাঠিসোটা নিয়ে উপজেলা পরিষদের মধ্যে জড়ো হয়। বিগত আমলে নির্বাচিত কোন জনপ্রতিনিধিকে দায়িত্ব পালন করতে দেয়া হবেনা বলে তারা বিক্ষোভ করতে থাকে।
একপর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরামর্শে আমি সাড়ে ১০ টার দিকে সরকারি গাড়িতে করে গ্রামের বাড়ি চলে আসি।’
বাঘারপার উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মশিয়ার রহমানের নেতৃত্বে বিএনপির নেতাকর্মীরা মিছিল সহকারে প্রবেশ করে বাঘারপাড়া পৌরসভা কার্যালয়ে। ওই সময় পৌর মেয়র কামরুজ্জামন বাচ্চু উপস্থিত ছিলেন না।
তবে অফিসে বসা কয়েকজন কাউন্সিলরকে বের করে দেন নেতাকর্মীরা। মারধর ও লাঞ্ছিত করেন ৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শহিদুল ইসলামকে। তিনি বলেন, আমরা পৌরসভাতে নিয়মিত কার্যক্রম করছিলাম।
এমন সময় স্লোগান দিতে দিতে বিএনপির নেতাকর্মীরা পৌরসভাতে হামলা করে। এসময় কয়েকজন কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিত করে ও বের করে দেয়। হাজিরা খাতা ও গুরুত্বপূর্ণ নথি তারা নিয়ে যায়।
তিনি বলেন, টানা ২২ বছর কাউন্সিলর আমি। কাউকে অপমান অপদস্ত করেনি। অথচ আজ নোংরা রাজনীতির বলি হতে হলো।’
এদিকে, যশোর পৌরসভার মেয়র মুক্তিযোদ্ধা হায়দার গণি খান পলাশ রোববার পৌর ভবনে গেলে সেখানে আগে থেকে অবস্থান নেয়া বিএনপির নেতাকর্মীরা তাকে লাঞ্ছিত করেন।
তাদের সঙ্গে যোগ দেন বিএনপিপন্থী কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। লাঞ্ছিত হয়ে নেতাকর্মীদের তোপের মুখে তিনি আর দপ্তরে অফিস করতে পারেননি। এই বিষয়ে তিনি মন্তব্য করতে চাননি।
সদর উপজেলার রামনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহমুদ হাসান লাইফ বলেন, ‘৫ আগস্টের পর একদিন মাত্র অফিসে গেছি। বিএনপি নেতাকর্মীদের হুমকিতে যেতে পারছি না।
তিনি জানান, রোববার সকাল ১০টার দিকে ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক ডা. আব্দুল আজিজের নেতৃত্বে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী নিয়ে অবস্থান নেয় ইউপি কার্যালয়ে। একপর্যায়ে সকল মেম্বারদের তিনি বের করে দেন।
কাউকে অফিস করতে দেবেন না বলে তিনি জানান। অনেক মেম্বারদের হুমকি দিয়েছেন তিনি। এমন অবস্থায় তো পরিষদ চালানো যায় না।’
এ বিষয়ে যশোর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু সাংবাদিকদের বলেন, কেন্দ্র থেকে কঠোর নির্দেশনা রয়েছে, প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের উপর হামলা না করার। সেইভাবে আমরা নেতাকর্মীদের জানিয়ে দিয়েছি। আজ (রোববার) জনপ্রতিনিধিদের যোগদানের কথা ছিলো শুনেছি।
তবে বাধা দেয়া হামলা করার এমন কোন নির্দেশনা দেয়নি আমরা। নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ মিথ্যা। সরকার যতদিন তাদের রাখবে, তারা ততদিন জনপ্রতিনিধি। আমাদের কোন নেতাকর্মী তাদের বাঁধা দেবে না।’