বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোরে ড. মিজানুর রহমান আজহারীর ওয়াজ মাহফিলে গিয়ে পদদলিত হয়ে অন্তত ৫ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। শুক্রবার রাতে শহরতলী পুলেরহাটস্থ আদ্-দ্বীন সকিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চত্বর ও আশপাশ এলাকায় এই ঘটনা ঘটেছে। আহতরা যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। রাত ১০টার দিকে এ তথ্য বাংলার ভোরকে নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার বজলুর রশিদ।
হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট ও আহতরা বাংলার ভোরকে জানান, শুক্রবার রাতে তারা পুলেরহাটে মিজানুর রহমান আজহারীর ওয়াজ মাহফিলে যাচ্ছিলেন। মাহফিল স্থলের প্রধান ফটকের সামনে যশোর বেনাপোল-মহাসড়কে অতিরিক্ত মানুষের সমাগমে বন্ধ হয়ে যায় চলাচল। এসময় সড়কের উপরে মানুষের ভিতরে আগে যাওয়া আসাকে কেন্দ্র করে হট্টগোল শুরু হয়। এ সময় মানুষের ধাক্কাধাক্কিতে অনেকেই পড়ে যান। এতে পদদলিত হয়ে অনেকেই আহত হন। এ সময় স্থানীয়রা আহতদেরকে উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করে। এর মধ্যে গুরুতর আহত অবস্থায় পাঁচজন যশোর জেনারেল ভর্তি হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে বাংলার ভোর। এদিকে, ঘটনার পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও মাহফিলে দায়িত্বরত স্বেচ্ছাসেবীরা জানায় অন্তত ৩০ জন আহতের ঘটনা ঘটেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একাধিক মৃত্যুর খবরও রটেছে। যদিও এ বিষয়ে যশোর কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারেনি।
এই বিষয়ে যশোর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার বজলুর রশিদ বাংলার ভোরকে বলেন, ‘যশোর জেনারেল হাসপাতালে পাঁচজন ভর্তি হয়েছে।
এদিকে আদ্-দ্বীন ফাউণ্ডেশন আয়োজিত তিনদিন ব্যাপি তাফসিরুল কোরআন মাহফিলের শেষ দিনে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের ঢল নামে। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান বক্তা মিজানুর রহমান আজাহারীর আসার খবরে মাহফিল প্রাঙ্গনে কয়েক লাখ মানুষের সমাগম ঘটে। শুক্রবার সকালে থেকেই শীত উপেক্ষা করে মানুষ জমায়েত হয়। বিকেল থেকে মাহফিল স্থান ছাপিয়ে সড়ক, মহাসড়কেও শিশু, নারী, পুরুষের ঢল নামে। সকাল থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ আসা শুরু করে। দুপুরের পর সড়কে যানজট দেখা দেয়। এজন্য অনেকেই পায়ে হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছায়। সব সড়কের ঢেউ গিয়ে মিশে পুলেরহাটে। এদিন সন্ধ্যায় আস সুন্নাহ ফাউণ্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শায়খ আহমাদুল্লাহও বক্তব্য রাখেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, শুক্রবার সকাল থেকেই যশোর-বেনাপোল, যশোর-ঝিনাইদহ, যশোর-মাগুরা, যশোর-খুলনা মহাসড়কসহ বিভিন্ন সড়ক ধরে লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লি শহরতলীর পুলেরহাটের অভিমুখে রওনা হয়েছে। দুপুরের পর সড়ক ও মহাসড়কগুলোতে যানবাহনের চাপ বাড়ে। বাসের পাশাপাশি ট্রাক, মাইক্রো, ইজিবাইক, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহনে চড়ে মানুষ গন্তব্যে রওনা হন। এছাড়াও ট্রেনে চড়েও অনেকে যশোর স্টেশনে নামেন। সেখান থেকে হেঁটে, যানবাহনে চড়ে অনেকে গন্তব্যে যান। গোটা শহরতলীতে মানুষের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়। সন্ধ্যার পর পায়ে হাঁটা মানুষের সংখ্যা বেড়ে যায়। অনেকেই মূল অনুষ্ঠানে স্থলে পৌঁছাতে পারেননি। দূর থেকেই বক্তব্য শোনেন। বাংলার ভোর পত্রিকা তাদের ফেসবুক পেজে অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করে।
শহরের নিউমার্কেট এলাকা থেকে আসা সাজ্জাদ হোসেন বাংলার ভোরকে বলেন, গাড়ি পাচ্ছি না। তাই আমরা দল বেঁধে হাঁটা শুরু করেছি। ওয়াজ শুনতে যাচ্ছি। রাস্তায় প্রচন্ড ভিড়। জানি না কতদূর পর্যন্ত পৌঁছাতে পারবো।
শহরের সার্কিট হাউজের সামনে মুজিব সড়কে পথচারি রহিমা বেগম বাংলার ভোরকে বলেন, কোর্টের মোড় থেকে যানজট শুরু হয়েছে। সামনে যত যাচ্ছি, ততই ভিড়। পুলেরহাট এখনো অনেকদূর। মাহফিলের জায়গায় পৌঁছাতে পারবো কিনা জানিনা।
শহরের রেলগেট এলাকায় যানজটে দাঁড়িয়ে থাকা ইজিবাইকের যাত্রি সাদ্দাম হোসেন বাংলার ভোরকে বলেন, আজহারী সাহেব আসছেন শুনে এসেছি। মাহফিলে যাচ্ছি। কিন্তু পথে প্রচন্ড জ্যামের আটকে আছি। খুব ধীরে যাচ্ছে যানবাহন। রোডে প্রচুর মানুষের ভিড়।’
মণিরামপুর থেকে মাহফিল শুনতে আসা মিলন রহমান বাংলার ভোরকে বলেন, গতকাল শহরে বোনের বাড়ি এসেছি মাহফিল শুনতে যাবো বলে। হাঁটতে হাঁটতে যাচ্ছি। ওদিকে গাড়ি যাচ্ছে না। আজহারির ওয়াজ ইন্টারনেটে অনেক শুনেছি। সরাসরি একটু দেখার ইচ্ছা তাই যাচ্ছি।
লিমন হোসেন নামে এক রিকসা চালক বাংলার ভোরকে বলেন, চাঁচড়া পুলেরহাটের দিকে রিকসা নিয়ে যাওয়া যাচ্ছে না। অনেক লোকের ভিড়। দুপুরের পর থেকে রিকসা নিয়ে ডালমিল পার হতে পারিনি। এখন যাত্রীরা সব হেঁটে যাচ্ছে। রেলগেট পার হলেই আর সামনে আগানো যাচ্ছে না।
নাসিমা খাতুন নামে একজন বাংলার ভোরকে বলেন, ছেলে মেয়ে সাথে নিয়ে মাহফিল শুনতে যাচ্ছি পুলেরহাট। আজ শেষ দিন মিজানুর রহমান আজহারীর ওয়াজ শুনবো বলে যাচ্ছি। পিঁপড়ার সারির মত লোক লাইন দিয়ে যাচ্ছে। শহরে যারা থাকে তাদের বাড়ি দূর দূরন্ত থেকে মেহমান এসেছে ওয়াজ মাহফিল শোনার জন্য। মাহফিলে যাচ্ছি প্রিয় বক্তার জ্ঞান গর্ব আলোচনা শোনার জন্য।
শহর ও শহরতলীর প্রায় প্রত্যেকটি সড়ক মহাসড়ের চিত্র একই। শহরের চাঁচড়া মোড় থেকে পুলেরহাট অভিমুখে সবচেয়ে বেশি মানুষের ঢল নামে। এসব সড়কের মানুষের ভোগান্তিও ছিল চোখে পড়ার মত।
এদিকে, মাহফিল উপলক্ষে চার দিনব্যাপি ইসলামী বই মেলা ও প্রদর্শনী করা হয়েছে। মেলায় ২২টি স্টল রয়েছে। একই সাথে শিশুদের জন্য ‘কিডস জোন’ করা হয়েছে।
আদ্-দ্বীন ফাউন্ডেশনের মানব সম্পদ কর্মকর্তা জাহেদ হোসাইন বাংলার ভোরকে জানান, আদ্-দ্বীন ফাউন্ডেশন শুধু ওয়াজ মাহফিলের মধ্যে সীমাবদ্ধ করেনি। এখানে ইসলামী কৃষ্টিকালচার তুলে ধরা হচ্ছে। দেশের প্রখ্যাত লেখকদের বই পাওয়া যাচ্ছে বই মেলার স্টলে। গার্ডিয়ান, সত্যায়ন, বিন্দু, সিয়ানসহ ২২টি প্রকাশনী এখানে স্টল নিয়েছে। পড়াশোনার অভ্যাসের জন্য এ বই মেলার আয়োজন করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এখানে শুধু ওয়াজ মাহফিল নয়; এখানে হজ্বের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। বিনোদনেরও ব্যবস্থা রয়েছে। শিশুদের জন্য ‘কিডস জোন’ রয়েছে।
আদ্-দ্বীন ফাউন্ডেশনের পাবলিক রিলেশনস অফিসার তরিকুল ইসলাম তারেক বাংলার ভোরকে জানান, দেশের প্রখ্যাত ছয় জন আলেম নিয়ে এটাই প্রথম কোন বড় অনুষ্ঠান হচ্ছে। এ ব্যতিক্রমী আয়োজনে জন্য আদ্-দ্বীন ফাউন্ডেশনের নিজস্ব ১৫০ বিঘা জমিসহ আশেপাশের আরও ২০০ থেকে ৩০০ বিঘা জমি জুড়ি এ মাহফিলে মাঠ। ৮-১০ লাখ লোকের জন্য আলো, পানি বাথরুম ও ওযু খানার ব্যবস্থা রয়েছে। ২০টি এলইডি স্কিন মাধ্যমে লাইভ দেখানো হচ্ছে। মূল মাঠসহ আশেপাশে ৪টি মাঠে এ এলইডি স্কিন। এছাড়া বিশেষ করে নারীদের বসার জন্য পুলেরহাট মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পুলেরহাট বালিকা বিদ্যালয় এবং আদ্-দ্বীন সকিনা মেডিকেল কলেজ গেট এলাকায় স্থান করা হয়েছে।