শেখ জালাল
বিএনপি বড় রাজনৈতিক দল। তারা অতীতেও ক্ষমতায় ছিল। ৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পুলিশ প্রশাসনের অনুমতি নেয়া বিএনপির জন্য বাধ্যতামূলক ছিল। অনেক সময় আবেদন করেও পাওয়া যেত না অনুমতি। আবার দেয়া হলেও সেটা কর্মসূচি শুরুর এক কিংবা দুই ঘণ্টা আগে। পাশাপাশি পুলিশের বেঁধে দেয়া নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কর্মসূচি শেষ করা, কর্মসূচির মাঝপথে হামলা হওয়ার ভয় ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। সেই হামলায় উল্টো আসামি করা হতো বিএনপির নেতাকর্মীদের। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বিএনপির সেই অবস্থা কেটে গেছে। বাধাহীন পরিবেশে কর্মসূচি পালন করছে দলটি। অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের যোগ্য নেতৃতে ঘুরে দাঁড়িয়েছে জেলা বিএনপি। শুধু যশোর নয়, খুলনা বিভাগ ছাড়িয়ে কেন্দ্রীয় রাজনীতিতেও নজর কেড়েছেন তরুণ এ নেতা। উজ্জীবিত হয়েছে দলের নেতাকর্মীরা। তবে দলের বিতর্কিতদের লাগাম টানতে হিমশিম খাচ্ছে দলটির হাইকমান্ড। নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার জন্য দলটির সামনে রয়েছে নানা চ্যালেঞ্জও।
২০১৮ সালে তরিকুল ইসলামের মৃত্যুর পর পুরো যশোর অঞ্চলেই বিএনপির নেতৃত্বে এক ধরনের শূন্যতা তৈরি হয়। বিভেদের কারণে অনেকটাই ভেঙে পড়ে সাংগঠনিক ভিত্তি। এর সঙ্গে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের দমনপীড়ন, মিথ্যা মামলা, হামলা তো ছিলই। সেই সময়ই স্থানীয় বিএনপির হাল ধরেন বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত। অমিতের হাত ধরে এর পর কয়েক বছরে অনেকটাই গুছিয়ে উঠেছে বিএনপি। যশোরে জেলা বিএনপি তার নেতৃত্বে এখন সুসংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ। আন্দোলন-সংগ্রাম থেকে শুরু করে সাংগঠনিক দক্ষতা ও কর্মীবান্ধব হিসেবে তৃণমূলের কাছেও সমান সমাদৃত অমিত।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার আন্দোলনের ফলে আওয়ামী লীগ সকল নেতা পালিয়ে যায়। যশোরের রাজপথ দখলে নেয় বিএনপি। পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দল ও নেতাদের ভাবমূর্তি আরও বাড়িয়ে আগামী নির্বাচনে ক্ষমতায় যেতে চায় বিএনপি। তবে সুসংঘটিত দলটির সামনে এখনও দেখা দিয়েছে নানামুখি চ্যালেঞ্জ। কতিপয় নেতাকর্মীর বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে ক্ষুণ্ন হচ্ছে দলের ভাবমূর্তি। সাধারণ মানুষের অনেকেই আওয়ামী লীগের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের সঙ্গে বিএনপিকে তুলনা করছে। বিশৃংখল নেতাকর্মীদের লাগাম টানতে ব্যর্থ হলে সাধারণ মানুষের সমর্থন কমবে বলেও মনে করছেন অনেকেই। এ পরিস্থিতিতে যশোর জেলা বিএনপির নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও দখলদারির অভিযোগগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে শুরু করেছে বিএনপি। দলে শৃঙ্খলা ফেরাতে উপজেলা কমিটি স্থগিতসহ ৭০-৭৫ নেতা-কর্মীকে বহিস্কার করছে। সতর্ক করা হয়েছে ইন্ধনদাতা জেলা ও উপজেলার শীর্ষ নেতাদের।
খোজঁ নিয়ে জানা গেছে, এ অবস্থার জন্য একাধিক কারণ রয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, আগামী স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নিতে আওয়ামী ঘরোনাদের দলে ভেড়ানো। সেখানে বিগত আন্দোলনে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ নেতা কর্মী সক্রিয় ছিল হঠাৎ করে তা শতভাগে পৌঁছনো আর দুর্বল নেতা সবল হতে এলাকায় প্রভাব বিস্তারসহ নানা কারণ রয়েছে। দলের জেলা নেতৃবৃন্দ মনে করেন, কয়েকটি উপজেলায় মুষ্টিমেয় নেতাকর্মীর নেতিবাচক কাজের দায় দলের সবাইকে নিতে হচ্ছে। নানা কায়দায় যারা আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সুবিধা নিয়েছেন এখনও তারাই চাঁদাবাজি ও দখলদারিতে জড়িয়ে পড়ছেন। বিএনপি কার্যালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ৫ আগস্টের পর যশোরে ৭৫ জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকন বলেন, বিএনপি একটি বড় দল। তারপরেও চলমান পরিস্থিতিতে দলীয় নির্দেশনা অমান্য করার সুযোগ নেই। দলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীকে সতর্ক থাকতে হবে।
তিনি বলে, বিএনপি জনগণের দল। আমাদের দলীয় সন্তুষ্টি হচ্ছে, জনগণের ইস্যু নিয়ে গত ১৬ বছর আমরা আন্দোলন করেছি। এ সময় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যাননি এবং বিভিন্নভাবে নির্যাতিত হননি এমন নেতা কমই আছে। সেই কারণে বিদায়ী বছরটি বিএনপির জন্য অত্যন্ত সুখকর।
জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাড. সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু বলেন, নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে শুরু থেকেই কঠোর বার্তা দেয়া হয়েছে। কোনো অপকর্মে বিএনপি কর্মীদের ন্যুনতম সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। আন্দোলনে যশোরে মূল দল বিএনপির পাশপাশি দলের অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের ভূমিকা ছিল চোখে পড়ার মতো। পটপরিবর্র্তনের পাল্টে যায় বিএনপির ভাগ্য। বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের নেতৃত্বে যশোর জেলা বিএনপি নেতারা অনেক উজ্জীবিত, সুসংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ।