♦ প্রার্থীরা মাঠ কাঁপালেও ভোটারদের আগ্রহ কম
♦ বিএনপি ও মহাজোটের শরিক দল না থাকায় ভাটা
বাংলার ভোর প্রতিবেদক
দেশে চলছে ৬ষ্ঠ উপজেলা নির্বাচনি কার্যক্রম। ইতিমধ্যে প্রথম ধাপের নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। এ ধাপে যশোরের দুটি উপজেলায় ভোটগ্রহণ হয়। আর দ্বিতীয় ধাপে আগামী ২১ মে ও তৃতীয় ধাপে ২৯ মে অনুষ্ঠিত হবে আরও ছয়টি উপজেলায়।
এবারের নির্বাচনে বিএনপি ও মহাজোটের শরীক দল নেই। ফলে আওয়ামী লীগের নিজেদের মধ্যেই লড়াই হচ্ছে। এই লড়াইয়ে কঠিন পরীক্ষার সম্মুখিন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। কারণ বিএনপির ভোট বর্জন ও সাধারণ মানুষের আগ্রহ কম হওয়ায় কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কমছে। সদ্য সমাপ্ত কেশবপুর ও মণিরামপুর উপজেলায় প্রার্থী ও তার কর্মীরা ভোটের দিন বাড়ি বাড়ি গিয়েও আশানুরূপ ভোটার উপস্থিতি বৃদ্ধি করতে পারেননি। ওই দুই উপজেলায় ৩০ ভাগের কম ভোট পড়েছে।
জামানত হারিয়েছেন অনেকেই। তাই বাকি ৬টি উপজেলায় কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে নানা কৌশল নিচ্ছেন প্রার্থীরা।
কেশবপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দেখা গেছে, এখানে মোট ভোটার সংখ্যা দুই লাখ ২০ হাজার ৯৫৪ জন। এর মধ্যে ভোট পড়েছে মাত্র ৬২ হাজার ৮১টি। শতকারা মাত্র ২৮ দশমিক ১০ ভাগ। ভোটাররা উপস্থিত না হওয়ায় তিনজন চেয়ারম্যানসহ ৬ জন প্রার্থী জামানত হারিয়েছেন। অপর তিনজন হচ্ছেন ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী। তিনটি পদে মোট ১৪ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। অপরদিকে, মণিরামপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ১৬৫টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলায় মোট ভোটার ৩ লাখ ৬০ হাজার ৭৩৫ জন। এর মধ্যে মাত্র ১ লাখ ১৩ হাজার ৩৯০ জন ভোট প্রদান করেন।
যশোরের দ্বিতীয় ধাপে চৌগাছা, ঝিকরগাছা ও শার্শা এবং তৃতীয় ধাপে সদর, বাঘারপাড়া ও অভয়নগর উপজেলায় ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এই ছয় উপজেলায় অর্ধশতাধিক প্রার্থী মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। ভোটাররা বলছেন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় পরিচয় ও নৌকা প্রতীক না থাকলেও মূলত আওয়ামী লীগের গ্রুপ ও উপ-গ্রুপের নেতারা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন।
দেশের বড় দল বিএনপি সরাসরি এ নির্বাচনে অংশ নেয়নি। যশোরে দলীয় সিদ্ধান্ত কেউ অমান্যও করেনি। আবার এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শরিক দলগুলো কোনো প্রার্থী দেয়নি। ফলে নির্বাচনে একদলের মধ্যে লড়াই হচ্ছে। এসব কারণে সাধারণ মানুষের আগ্রহ নেই বলে জানান তারা। তারপরও উপজেলায় উপজেলায় পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে গেছে। প্রতীক বরাদ্দের পর চলছে সুর ও ছন্দে মাইকে প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারণা। ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে কর্মীরা যাচ্ছেন ভোটারদের বাড়ি বাড়ি। দিচ্ছেন লিফলেট, চাচ্ছেন ভোট। প্রার্থীরা কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে আছেন প্রচারে। প্রায় প্রতিদিন সকাল, বিকেলে ও সন্ধ্যায় ইউনিয়ন অথবা পৌরসভার ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে বৈঠক করছেন। আবার কোথাও কোথাও নির্বাচনি পথসভা করছেন প্রার্থীর। ভোটারদের আস্থা অর্জনে দিচ্ছেন উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি। প্রার্থীরা সাধারণ ভোটারদের কাছে ভোট প্রার্থনার পাশাপাশি মেলাচ্ছেন রাজনৈতিক নানা সমীকরণ।
মণিরামপুর-কেশবপুর উপজেলার মত বাকি ছয় উপজেলাতেও ভোটার উপস্থিতি কম হবে বলে মনে করেন যশোর সদর উপজেলার ভোটার বামনেতা জিল্লুর রহমান ভিটু। তিনি বলেন, ‘ঘরের মধ্যে ভোট হচ্ছে। তাও আবার ওই দলের অনুসারীদের মধ্যে ত্যাগী আদর্শবান নেতা-কর্মীরা বিমুখ হয়ে আছেন। আর সাধারণ মানুষ দ্রব্যমূলের লাগাম ছাড়া ঘোড়ার কারণে জীবনই চালাতে পারছেন না। ভোট নিয়ে তাদের ভাবার সময় কোথায়? ‘নিজেরা করির’ মধ্যে লড়াই হয় না। মহাজোটের শরিক দলের প্রার্থীরাও অংশ নিলে ভোটার উপস্থিতি হয়তো একটু বাড়তো।’
ঝিকরগাছা উপজেলার কায়েমকোলা গ্রামের চা দোকানি রবিউল ইসলাম বলেন, দোকান না খুললে সংসার চলে না। ভোটের ব্যাপারে নিজের কোনো আগ্রহ নেই। প্রার্থীরা আসেন-যান। আর তাদের সাথে থাকেন দলের সুবিধাভোগীরা। আমাদের ভোট দিয়েই বা কি, আর না দিয়েই বা কি। আমার সংসার আমাকেই চালাতে হবে।’
বাঘারপাড়া উপজেলার নারকেলবাড়িয়া গ্রামের ভোটার দীপংকর বিশ্বাস জানান, ‘যে জনপ্রতিনিধি হন ও তার কিছু সাগরেত লাভবান হয়ে থাকেন। সাধারণ মানুষ ও সমাজের উন্নয়ন কতটুকু হয়? তাহলে ভোট দিয়ে লাভ কি আপনিই বলেন। কাজ বাদ দিয়ে ভোট দেয়ার কোনো আগ্রহ নেই।’
এদিকে, কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জেলা বিএনপি ভোট বর্জনের জন্য দলীয় নেতা এবং কর্মী সমর্থকদের সাথে দফায় দফায় সভা করছে। ইতিমধ্যে মণিরামপুর এবং কেশবপুরে সাধারণ মানুষের মাঝে ভোট বর্জনের আহ্বান জানিয়ে বিলি করা হয়েছিল হ্যান্ডবিল।
জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট সাবেরুল হক সাবু বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচন বয়কটের বিষয়ে দল যে সিদ্ধান্ত দিয়েছে আমরা মাঠ পর্যায়ে সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কাজ করছি। তিনি আরও বলেন, দলের হাইকমান্ডের নির্দেশে বিএনপি এই নির্বাচনে কোনো প্রার্থী দেয়নি, এমনকি দলের নেতাকর্মীরাও নির্বাচনের মাঠে নেই। এক দলের প্রার্থীদের মধ্যে নির্বাচন হচ্ছে। জনগণ এসব নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে। প্রত্যাখ্যাত এই নির্বাচনে কোনো আমেজ নেই, নেই কোনো উৎসব।’
যশোর পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) বেলাল হোসাইন বলেন, উপজেলা পরিষদের ১ম ধাপে যশোরের মণিরামপুর ও কেশবপুরে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২য় ধাপে শার্শা, ঝিকরগাছা ও চৌগাছা এবং ৩য় ধাপে সদর, বাঘারপাড়া ও অভয়নগর উপজেলা নির্বাচন সম্পন্নের সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। যারা নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করবে, তারা যে দলরই হোক না কেন কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।
জেলা প্রশাসক আবরাউল হাছান মজুমদার বলেন, উৎসবমুখর পরিবেশে উপজেলা ভোট গ্রহণের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দুই উপজেলায় ভোটার উপস্থিতি বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছি। ভোট জালিয়াতির কোন সুযোগ নেই। তাই ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে জনপ্রতিনিধি বিজয়ী করবেন।