হাসান আদিত্য
যশোর-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের নেতৃত্বধীন দুইটি রাজনৈতিক বলয় সক্রিয় রয়েছে। এই দুই বলয়ের বাইরে সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত খালেদুর রহমান টিটোর অনুসারীদের নিয়ে আরেকটি বলয় রাজপথে সক্রিয় হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রয়াত বর্ষিয়ান রাজনীতিক খালেদুর রহমান স্মরণে যশোর শহরের চারখাম্বা মোড়ে এই রাজনীতিকের অনুসারীরা সমাবেত হয়। সমাবেশ শেষে শহরে মিছিল বের করে শক্তির মহড়া দেয়া হয়।
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন প্রয়াত খালেদুর রহমানের ছেলে আইনজীবী খালিদ হাসান জিউস। খালিদ হাসানের বক্তব্যের সময় মঞ্চে হাজির হন সদর উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী। মোস্তফা ফরিদ আহমেদ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা যুবলীগের সভাপতি। মোস্তফা ফরিদ আহমেদ সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। কিন্তু নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেনকে সমর্থন দিয়েছেন কাজী নাবিল আহমেদ। অন্যদিকে শাহীন চাকলাদার সমর্থন দিয়েছেন তাঁরই চাচাতো ভাই যুবলীগের নেতা তৌহিদ চাকলাদার ফন্টুকে। যে কারণে মোস্তফা ফরিদ আহমেদ কাজী নাবিল আহমেদের বলয় ত্যাগ করে নতুন বলয় সৃষ্টির চেষ্টা করছেন।
অনুষ্ঠানে মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘যশোরের মানুষ অপরাজনীতির বলাইয়ের বাইরে আসতে চায়। যশোরের রাজনীতিতে পরিবর্তন করতে চায়। আজ খালেদুর রহমানের অনুসারীরা আমাকে যে সম্মান দিলো তা হৃদয়ের মনি কোঠায় নিলাম আপনাদের। এই মঞ্চ থেকে যশোরের রাজনীতি প্রতিবাদ, প্রতিরোধ হবে।
তিনি বলেন, আজ থেকে রাজনীতিতে নতুন পরিবেশ সৃষ্টি হলো। শুধু নির্বাচন নয়; রাজনীতির প্রতিটি ক্ষেত্রে আমরা এক ও অভিন্ন হয়ে পথ চলবো। খালিদ হাসান জিউসকে সাথে নিয়ে আমাদের নতুন যাত্রার সূচনা হলো।
সমাবেশে খালেদ হাসান বলেন, যশোরের রাজনীতিক প্রেক্ষাপট আজ ভিন্ন। বিত্তশালী আর অবৈধ অর্থশালীদের হাতে আজ যশোরের রাজনীতি। তাদের কাছ থেকে রাজনীতি ছিনিয়ে আনতে হবে। বিত্তশালীরা টাকা ছড়িয়ে রাজনীতি দখলে নিয়েছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, টাকার চেয়ে মানুষের ভালোবাসা শক্তিশালী। সেটি আমার বাবার ছিলো। তিনি বলেন, আমি কথা দিচ্ছি রাজনীতির নতুন সূর্য এনে দিবো। এজন্যে আপনাদের সহযোগিতা চাই। খন্ড বিখন্ডের রাজনীতি থেকে বেরিয়ে একতাবদ্ধ হবো আমরা।
চেয়ারম্যান প্রার্থীদের বিষয়ে তিনি বলেন, খুনের মামলার আসামিরাও প্রার্থী হয়েছেন। আদর্শিক রাজনীতিক হিসেবে আমরা মোস্তফা ফরিদ আহমেদকে সমর্থন করছি। আপনারা তাকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করবেন। আগামি উপজেলা নির্বাচনে ১৫টি ইউনিয়ন ও ৯টি ওয়ার্ড রয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে এক হাজার করে ভোট প্রার্থনা করেন তিনি। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আইনজীবী শরিফুল ইসলাম মিলন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন নেওয়াজ শাহীন।
আরেকটি বলয় সক্রিয় হয়ে উঠা নিয়ে জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম মিলন বলেন, ‘যশোরের রাজনীতি এত সস্তা না। নির্বাচনের সময় পাওয়া না পাওয়া নিয়ে মনোক্ষুণ্ন হয় অনেকেই প্রার্থী। এতে গ্রুপ বিভক্ত হয়। খালেদুর রহমান টিটুর অনুসারীরা দীর্ঘদিন জনগণ থেকে বিছিন্ন। রাজনীতিতে কালো টাকার ছড়াছড়ি চলছে এটা সত্য। তবে কারা ছড়াচ্ছে, সেটা সবাই জানে। যশোর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এসব কালো টাকাতে বিক্রি হয় না। ভোটের সময় দলের ভিতর দ্বন্দ্ব বিভিক্ত হয়; ভোট শেষ সবাই আবার এক হয়ে যাবে।’
এদিকে, যশোরে ক্ষমতাধীন দল আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে নতুন বলাইয়ে আত্মপ্রকাশে কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে মোড়ে পুলিশের অবস্থান দেখা গেছে। অপ্রতিকর ঘটনা এড়াতে সর্তক অবস্থানে ছিলো পুলিশ।