স্বাধীন মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ
বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে এইচএমপিভি ভাইরাস। বাংলাদেশেও হিউম্যান মেটানিউমো ভাইরাসে (এইচএমপিভি) আক্রান্ত নারী মারা গেছেন। দেশের বৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোল সীমান্তে সতর্কবস্থা রয়েছেন স্বাস্থ্যকর্মিরা। যশোর জেলা সিভিল সার্জন অফিস থেকেও প্রত্যেক সরকারি অফিস ও হাসপাতালে জনসচেতনতা বাড়াতে সতর্কতার চিঠি দেওয়া হয়েছে। যশোরে এই ভাইরাসে অক্রান্ত হওয়ার খবর এখনও পাওয়া যায়নি। জেলায় এইচএমপিভি মহামারি আকার ধারণ করার সম্ভাবনাও নেই বলছে স্বাস্থ্য বিভাগ। মাইকিং বা প্রচারপত্র বিতরণ শুরু হয়নি। তবে জনসচেতনা বাড়াতে স্বাস্থ্য বিভাগের দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ না থাকাতে ক্ষুদ্ধ সচেতন নাগরিক সমাজ।
এদিকে, এইচএমপি ভাইরাসে নবজাতক শিশু বেশি আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও জেলার কোনো শিশু এই রোগে আক্রান্ত হয়নি। শিশু বিশেজ্ঞরা বলছেন জ¦র সর্দি বা ঠান্ডা জনিত রোগে আক্রান্ত হলে বাচ্চাদের দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার জন্য। বেনাপোল স্থলবন্দরে ভারত থেকে আসা অনামিকা সাহা বলেন, এইচএমপি ভাইরাসে আক্রান্তের খবর পাওয়া যাচ্ছে। ভারত থেকে বাংলাদেশে আসার সময় বেনাপোল ইমিগ্রেশনে তাদের শরীরের তাপমাত্রা মাপা হয়েছে। মাস্ক পরা নিশ্চত করানো হয়েছে।
যশোর শিশু হাসপাতালে নাজমা খাতুন নামে এক অভিভাবক বলেন, তার বাচ্চা ঠান্ডা জনিত কারণে হাসপাতালে ভর্তি। ভাইরাসের কথা শুনে সন্দেহ থেকে হাসপাতালে আনা হয়। স্বাভাবিক ঠান্ডা জ¦রে আক্রান্ত হয়েছে। ডাক্তার বলেছে ভয়ের কিছু নেই।
বেনাপোল স্থলবন্দরে দায়িত্বরত উপসহকারী মেডিকেল অফিসার আব্দুল মজিদ বলেন, জেলা সিভিল সার্জনের পরামর্শ মোতাবেক বন্দরে মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। ভারত ফেরত ও ভারতে যাওয়া সব যাত্রীদের স্ক্যানিং করা হচ্ছে। ৯ জানুয়ারি থেকে এই কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত এইচএমপি ভাইরাসে আক্রান্ত কোনো রোগী শনাক্ত করা যায়নি।
বেনাপোল স্থল বন্দরের ইমিগ্রেশন পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইমতিয়াজ মো. আহসানুল কাদের ভূঁইয়া বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগের সাথে পুলিশ প্রশাসন একযোগে কাজ করছে। যাত্রীদের মাস্ক পরা নিশ্চিত করা হচ্ছে।
যশোর শিশু হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা: সৈয়দ নূর ই হামীম বলেন, এখনও ঠান্ডাজনিত রোগে শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে। নবজাতক শিশু এইচএমপিভি ভাইরাসে অক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও এখনও পর্যন্ত ভাইরাসে আক্রান্ত কোনো শিশু পাওয়া যায়নি। আগত রোগীদের সচেতন করতে কাজ করছেন তারা। জ¦র সর্দি কাশিতে আক্রান্ত হলে কালক্ষেপন না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরার্মশ নিয়ে চিকিৎসা নিতে হবে। এছাড়া নবজাতক শিশুর শুধু মাত্র মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর পরামর্শ দেন তিনি।
নাগরিক অধিকার আন্দোলন যশোরের সমন্বয়ক মাসুদুজ্জামান মিঠু বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগ যথাযথভাবে সবাইকে সচেতন করতে না পারলে জনসাধারণ সহজে এই ভাইরাস সম্পর্কে জানতে পারবে না। করোনার সময় যেমন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য ঘোষনা দেওয়া হয়েছিল। এখন তেমন ঘোষনা দেওয়া জরুরি। পরবর্তীতে কোন ভ্যারিয়েন্ট, প্রতিষেধক কি এসব বিষয় নিয়ে কাজ করা উচিৎ।
যশোরের সিভিল সার্জন ডা. মো. মাসুদ রানা বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক জেলার সিভিল সার্জন কাজ করছে। এইসএমপিভি ভাইরাস নিয়ে ভয়ের কিছু নেই। সচেতনতা বাড়াতে হবে। সকলের নিরাপদ দূরÍ বজায় রেখে চলতে হবে। এছাড়া নিয়মিত মাস্ক পরিধান করাসহ হাত জীবাণু মুক্ত করতে স্যানিটাইজেশন ব্যবহার করতে হবে। জেলায় এখনও মাইকিং বা প্রচারপত্র বিতরণ করা হয়নি। এইচএমপিভি ভাইরাস বাংলাদেশে এর আগেও ২০০১, ২০০৭ ও ২০২৪ সালে শনাক্ত হয়েছিল। মহামারি আকার ধারণ করার সম্ভাবনা দেখলে জনসচেতনা বাড়াতে পরবর্তীতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।