বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোরে চিকিৎসকের দায়িত্ব অবহেলায় এক নবজাতক কন্যার মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছেন স্বজনরা। তবে হাসপাতালে দায়িত্বরতরা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। বুধবার দুপুরে শহরের রেলরোড আদদ্বীন সখিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে।
অভিযোগে স্বজনরা জানান, শহরের নীলগঞ্জ সাহাপাড়ার আব্দুল গফফারের স্ত্রী লামিয়া বেগমের প্রসব বেদনা উঠলে বুধবার সকালে আদদ্বীন সকিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সকাল ১০টার দিকে হাসপাতালের নার্সরা তার স্বাভাবিক ভেলিভারি করান। এরপর নবজাতককে তারা এনসিইউতে নিয়ে যান। পরে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। দুপুর ১টার পর রোগীর স্বজনরা হাসপাতালে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন।
নবজাতকের ফুফু জান্নাতুল ফেরদৌস আঁখি বলেন, লামিয়া গাইনি বিশেষজ্ঞ শিলা পোদ্দারের রোগী। অথচ ডেলিভারির আগে তাকে কিছুই জানানো হয়নি। নার্সরা নিজেররাই ভেলিভারি করেছে। ডেলিভারির সময় নার্সরা দুইজন মিলে পেট চেপে বাচ্চা বের করেছে। লামিয়ার কষ্টে চিৎকার দিলেও নার্সরা বকা দিয়ে তাকে চুপ থাকতে বলে।তিনি আরো বলেন, নার্সদের কারণেই শিশুটি মারা গেছে। নবজাতকের পিতা আব্দুল গফফার বলেন, চিকিৎসকের উপস্থিতি ছাড়াই নার্স ও আয়া দিয়ে ডেলিভারি করানোর কারণেই তার সন্তানের মৃত্যু হয়েছে। এর প্রতিবাদ করলে হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্সসহ অন্যান্য কর্মচারী দুর্ব্যবহার করেন। অবহেলাজনিত এ মৃত্যর ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি দাবি করেন তিনি।
অবশ্য দায়িত্বরত নার্স ও চিকিৎসকসহ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
নার্স বিউটি মন্ডল বলেন, সকালে রোগীকে আনার পর পরীক্ষা করা হয়। নবজাতকের মাথা সামনে থাকায় স্বাভাবিক ডেলিভারি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। চিকিৎসক রিতা দাসও রোগীকে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখেন। সাধারণ ডেলিভারির ক্ষেত্রে নার্সরাই সকল কাজ সম্পন্ন করেন। সেই মোতাবেকই ডেলিভারি সম্পন্ন হয়েছে। ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর শিশুটি হাফসে যাওয়ায় তাকে এনসিইউতে পাঠানো হয়। সেখানেই শিশুটি মারা গেছে। এখানে কোন প্রকার অবহেলা হয়নি।
ডা. রিতা দাস বলেন, সকালে রোগীকে পরীক্ষার পর নবজাতকের মাথার সামনের দিকে থাকায় স্বাভাবিক ডেলিভারির জন্য স্যালাইন পুশ করা হয়। আমি রোগীকে ভালো অবস্থায় পেয়েছি। তাছাড়া রোগীর স্বজনরা কেউ সিজারিয়ান অপারেশনের কথা আমাদেরকে বলেননি। ফলে আমরা স্বাভাবিক ডেলিভারি করিয়েছি। প্রসূতির বয়স কম ও প্রথম সন্তান হওয়ায় শিশু চাপে হাফসে গেছে।
এনসিইউর ডা. কিশোর কুমার বিশ্বাস বলেন, শিশুটিকে আনার পর তাকে বাঁচানোর জন্য ভেন্টিলেশনসহ সকল প্রকার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তাদের পক্ষ থেকে কোনো অবহেলা ছিলো না।
হাসপাতালের ম্যানেজার মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, রোগীকে ভর্তির পরে ডাক্তার রিতা দাস থাকে দেখেছেন। নরমাল ডেলিভারির ক্ষেত্রে সকল কাজ তিনিই করে থাকেন। সেভাবেই ডেলিভারি হয়েছে। নবজাতক অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকেও সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এ মৃত্যুতে হাসপাতালের পক্ষ থেকে কোন অবহেলা ছিল না।
তিনি আরো বলেন,স্বজনদের সাথে কোন রকম দুর্ব্যবহার করা হয়নি। বরং তারাই উত্তেজিত হয়ে খারাপ ব্যবহার করেছেন।