বাংলার ভোর প্রতিবেদক:
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে যশোরে ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টি হচ্ছে। রোববার দুপুর থেকে এ ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি শুরু হয়। সোমবারও সারাদিন ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টিপাত হয়েছে। এতে কয়েক দিনের অব্যাহত ভ্যাপসা গরম কমে কিছুটা শীতলতা অনুভূত হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ঝড়ো বাতাস ও বৃষ্টির খবর পাওয়া গেলেও বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির খবর এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। রিমালের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমাতে যশোর জেলা প্রশাসন সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
এদিকে, ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে শহরে ঘনঘন লোডশেডিং হলেও জেলার গ্রামাঞ্চলগুলোতে বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে। রোববার গভীর রাতে ঝড়ো বাতাসে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনে গাছ পড়ে মণিরামপুর, চৌগাছা, ঝিকরগাছা ও কেশবপুরের বিভিন্ন গ্রামে ভোর থেকেই সারাদিন বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিলো।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে রোববার দুপুর থেকে ঝড়ো বাতাস শুরু হয়। দুপুরের পর থেকে শুরু হয় গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি। দুপুর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ঝড়ো বাতাসের সঙ্গে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকে। এদিন যশোরের দুই মিলি মিটারের বৃষ্টিপাত রেকর্ড করে আবহাওয়া অফিস। সোমবার ভোররাত থেকে আবার শুরু হয় ঝড়ো বাতাস। বাতাসের সঙ্গে কখনও হালকা আবার কখনও ভারি বৃষ্টিতে ভেসে যায় যশোরে নিচু এলাকাগুলো। সকালের বৃষ্টিতে ভোগান্তিতে পড়েন অফিসগামী সাধারণ মানুষ, স্কুল- কলেজের শিক্ষার্থীরা। বৃষ্টি মাথায় নিয়ে কাজে বের হয়েছেন নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষ।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সোমবার ভোর থেকে বিকেল সাড়ে ৬টা পর্যন্ত ৩২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে। এছাড়া রোববার মধ্যরাতে ২৩ মিলিমিটার। সবমিলিয়ে রোববার দুপুর থেকে সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত ৫৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে যশোরে। বাতাসের গড় গতিবেগ ছিল ২২ থেকে ২৫ নট্টিক্যাল মাইল। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে জেলার ওপর দিয়ে সর্বোচ্চ ৪৫ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে গেছে।
এদিকে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে ঝড়ো হাওয়াতে রোববার মধ্যেরাত থেকে যশোরের বিভিন্ন উপজেলায় জেলায় বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত ওই অবস্থায় রয়েছে।
মণিরামপুর উপজেলার সরসকাঠি গ্রামের কৃষক আলতাপ হোসেন বলেন, ‘ঝড়ো হাওয়াতে বিদ্যুৎ নাই রোববার মধ্যরাত থেকে। আজও সারাদিন বিদ্যুৎ দেখা নাই। আজও যে পরিমাণ ঝড়ো হাওয়া বইছে, মনে হচ্ছে আজকেও আসবে না।’
বিষয়ে জানতে চাইলে পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-২-এর মহাব্যবস্থাপক আবদুল লতিফ বলেন, ‘ঝড়ো হাওয়াতে সঞ্চালন লাইনের ওপর গাছের ডাল ভেঙে পড়ছে। কোথাও জাম্পার লুজ হয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়েছিল। দ্রুত মেরামত করে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করা হয়েছে। চালু করা হলেও আবারও কোথাও না কোথাও সঞ্চালন লাইনের ওপর গাছের ডাল ভেঙে পড়ছে। এতে বিদ্যুৎ বিভ্রাট হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে সব জায়গায় বিদ্যুৎ সংযোগ যাবে। ঝড় বৃষ্টির মধ্যেও বিদ্যুৎ বিভাগ কাজ করছে।’
ভারি বর্ষণে কৃষকদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি গ্রামের কৃষক আমজাদ হোসেন বলেন, ‘গত চার মাসে তেমন বৃষ্টি হয়নি। এই সময়ে বৃষ্টি হওয়ার ফলে ধানের বিজতলা, পাট, আগাম জাতের কপিসহ সব ফসলের জন্য ভালো হলো।’
এদিকে, যশোরে ঘূর্ণিঝড় রিমাল মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। জেলার ২২৪৫ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত করা হয়েছে। একই সঙ্গে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ, রেড ক্রিসেন্ট, ফায়ার সার্ভিসসহ স্বেচ্ছাসেবক টিম প্রস্তুত রয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানানো হয়।
যশোরের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. নাজমুস সাদিক জানান, জেলার সকল স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে একটি করে মেডিকেল টিম। এর মধ্যে জেলা হাসপাতালসহ আট উপজেলায় আটটি মেডিকেল টিম প্রস্তুত করা হয়েছে। একই সঙ্গে সব স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে ১-২ জন অতিরিক্ত জনবল নিযুক্ত করা হয়েছে। জেলার সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়েছে।
যশোরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার বলেন, ‘রেমালের প্রভাব শেষ না হওয়া পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিস, স্বাস্থ্য বিভাগ এবং সড়ক বিভাগকে সর্বাধিক সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া সব নির্বাহী অফিসারকে নিজ নিজ উপজেলার সব পর্যায়ে জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সর্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতে ও যেকোনো দুর্ঘটনায় দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে বলা হয়েছে।’
যশোর রেড ক্রিসেন্টের সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হাসান টুকুন জানান, ‘ঘূর্ণিঝড় রিমাল মোকাবিলায় জেলা জুড়ে ১০০ স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রয়েছেন। পাশাপাশি আনুষাঙ্গিক সরঞ্জাম প্রস্তুত করা হয়েছে।
যশোর জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোহাম্মদ রিজিবুল ইসলাম বলেন, ‘জেলার ১২৮৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ৯৫৬টি মাধ্যমিক, মাদরাসা ও কলেজ প্রস্তুত রাখা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে। একই সঙ্গে পর্যাপ্ত চাল, শুকনো খাবার ও নগদ অর্থ রাখা হয়েছে।’