বাংলার ভোর প্রতিবেদক 

ট্রেন লাইন আটকে রেখে বিক্ষোভ করেছে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত যশোরের শিক্ষার্থীরা। আজ

বুধবার (১৭ জুলাই) দুপুর সোয়া ৩টার দিকে যশোর শহরের রেলগেটে অবস্থান নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জগামী মহানন্দা লোকাল ট্রেন আটকে তারা এ বিক্ষোভ করেন। এ সময় তারা কোটা বিরোধী নানা স্লোগান দেয়। প্রায় ২০ মিনিট পর তারা অবরোধ তুলে নিয়ে শহরের দড়াটানা মোড়ে গিয়ে কর্মসূচি শেষ করে।

এদিকে, কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনে নিহত শিক্ষার্থীদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় পৃথক গায়েবানা জানাজার আয়োজন করে জেলা আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও ছাত্রলীগ।

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে,

কোটা সংস্কারের দাবিতে যশোরের শিক্ষার্থীরা সকাল সাড়ে ১১টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি শহরতলীর চাঁচড়া চেকপোস্ট মোড়ে গিয়ে অবস্থান নেয়। এরপর তারা তিন ঘণ্টা যশোর-বেনাপোল, যশোর ঝিনাইদহ যশোর খুলনা বাইপাস সড়ক অবরোধ করে রাখে। দুপুর আড়াইটার দিকে আন্দোলনকারীরা একই স্থানে আন্দোলনে শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে গায়েবানা জানাজা আদায় করেন। এরপর তারা শহর অভিমুখে মিছিল নিয়ে ফেরার পথে সোয়া তিনটার দিকে আন্দোলনকারী কয়েক হাজার শিক্ষার্থী যশোর শহরের রেলগেট এলাকায় অবস্থান নিয়ে রেলপথ অবরোধ করে। এসময় তারা খুলনা থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জমুখী মহানন্দা লোকাল ট্রেনটি আটকে দেয়। ট্রেনটি এগোনোর চেষ্টা করলে শিক্ষার্থীরা লাইনের পাথর ছুঁড়তে থাকে। এরপর ট্রেনটি থেমে যায়। এ সময় তারা কোটা বিরোধী নানা স্লোগান দেয়। প্রায় ২০ মিনিট পর তারা অবরোধ তুলে নিয়ে শহরের দড়াটানা মোড়ে গিয়ে কর্মসূচি শেষ করে।

এদিকে দুপুর দুইটার দিকে জেলা বিএনপির দলীয় কার্যালয় শহরের লাল দীঘির পাড়ে গায়েবানা জানাযার আয়োজন করে যশোর জেলা বিএনপি। জানাযায় আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু। তিনি বলেন, ‘নিজেদের দাবি আদায়ে আমাদের সাতজন সন্তান রাজপথে নিহত হয়েছে। এই আওয়ামী লীগ সরকার তাদের গুন্ডা বাহিনী, ছাত্রলীগ এবং অতি উৎসাহী পুলিশের দ্বারা দেশের মানুষকে জিম্মি করে রাখতে চাইছে। যে আশায় মুক্তিযোদ্ধারা দেশ স্বাধীন করেছিল, এই সরকারের সময়ে দেশের মানুষের সেই আশা, স্বাধীনতা ভূলুণ্ঠিত হয়ে যাচ্ছে। এ সময় তিনি অবিলম্বে কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ন্যায়সংগত দাবির প্রতি জেলাবাসীকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান। জানাযায় উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকন, সদস্য অ্যাডভোকেট ইসহাক, মুনির আহমেদ সিদ্দিকী বাচ্চু, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আনসারুল হক রানা প্রমুখ। এছাড়া বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন।

অন্যদিকে বিকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে কোটা আন্দোলনে নিহত তিন ছাত্রলীগ কর্মীদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে গায়েবানা জানাযা পড়েছে জেলা আওয়ামী লীগ। শহরের গাড়িখানাস্থ দলীয় কার্যালয়ের সামনে এই গায়েবানা জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন, সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মীর জহুরুল হক, দপ্তর সম্পাদক মজিবুদ্দৌলা কনক, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক হারুনুর রশিদ, যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক জিয়াউর হাসান,বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল কবির বিপুল ফারাজী, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান আসাদ, সাধারণ সম্পাদক এস এম মাহমুদ হাসান বিপু, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তৌহিদ চাকলাদার ফন্টু, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম নিয়ামত উল্লাহ, ৬ নাম্বার কাউন্সলির আলমগীর কবির সুমন, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রওশন ইকবাল শাহী, সভাপতি সালাউদ্দিন কবির পিয়াসসহ জেলা আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ অংশ নেয়। এর আগে গায়েবানা জানাযার আয়োজন করে জেলা ছাত্রলীগ।।

এর আগে বিকালে শিক্ষার্থীদের ন্যায়সঙ্গত কোটা সংস্কার আন্দোলনে সারাদেশে বর্বরোচিত হামলা ও গুলির প্রতিবাদে প্রেস ক্লাব যশোরের সামনে মানববন্ধনের আয়োজন করে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতা। মানববন্ধনে বক্তরা দ্রুতই সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়া আহ্বান জানান। একই সাথে সারাদেশে নিহত শিক্ষার্থীদের পরিবারকে রাষ্ট্র কর্তৃক আর্থিক ক্ষতি পূরণ দেওয়া। হামলার ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করে প্রকৃত আসামীদের আটক ও শাস্তির দাবি জানান। ২০১৮ ও ২০২৪ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করার দাবি জানান।

Share.
Exit mobile version