মনিরুজ্জামান মনির
চলমান তাপপ্রবাহে সবজি জাতীয় ফসলের ক্ষতির আশংকায় রয়েছেন কৃষক। উচ্ছে, পটল, বেগুন, লাউ, ঢেড়স, ঝিঙ্গা ও শসাসহ আম, কাঁঠাল, এবং ড্রাগন ফলের ফুল-ফল ঝরে যাচ্ছে। গত কয়েকদিন ধরে তাপে পুড়ছে যশোর জেলার মানুষ। কৃষি কর্মকর্তাদের তথ্য মতে ১৫ মে হতে যশোরে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা আছে এবং কয়েকদিনের তাপমাত্রা ছিল সর্বোচ্চ ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি।
কৃষি অফিসের তথ্য মতে, আরো ৪ দিন এ অবস্থা বিরাজ করতে পারে। তাপের কারণে এবং পানির অভাবে গাছের ফল-ফুল শুকিয়ে সবজির উৎপাদন কমে যেতে পারে।
কৃষকরা জানিয়েছেন, এ তাপমাত্রায় লতা জাতীয় সবজি নেতিয়ে পড়ছে। অনেক গাছ শুকয়ে যাচ্ছে। ফল ধরার আগেই ঝরে যাচ্ছে ফুল। ফলন কমে আসছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, যশোর জেলার লেবুতলা, ইছালি, হৈবতপুর ইউনিয়নের মাঠে উচ্ছে, পটল গাছ লাল বর্ণের হয়ে গেছে। অনেক গাছ দুমড়ে গেছে। সবজিগুলো ছোট হয়ে লাল হয়ে যাচ্ছে। ঘন ঘন সেচ দিয়েও সবজি ক্ষেতে পানি ধরে রাখতে পারছেন না কৃষক।
যশোর আবহাওয়া অফিসের তথ্য মতে, যশোর জেলায় (১০ ও ১১ মে) রেকর্ড তাপমাত্রা ছিল ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি।
যশোর কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, জেলায় গ্রীস্মকালীন মোট সবজির লক্ষ্যমাত্রা ১৪ হাজার ৫ হেক্টর। সেখানে চাষ হয়েছে ৮ হাজার ৫শ’ হেক্টর। এ বছর সদর উপজেলায় করলার চাষ হয়েছে ২শ’ ৭৫ হেক্টর। এদিকে যশোরে মোট ফলের চাষ রয়েছে ১৩ হাজার ৩শ’ ৩০ হেক্টর। এর মধ্যে আম ৩ হাজার ৯শ’ ২৩ হেক্টর, লিচু ৬’শ ২৫ হেক্টর, পেয়ারা ৯শ’ ৯৯ হেক্টর, কাঁঠাল ৭শ’ ৫০ হেক্টর, ড্রাগন ২’শ ৭ হেক্টর। এছাড়াও বিভিন্ন প্রকারের ফল চাষ হয়েছে ৬ হাজার ৮শ’ ২৬ হেক্টর।
বীরনারায়নপুর গ্রামের আরিফুজ্জামান জানান, এই তাপে সবজি হবে না। কয়েক দিন ধরে দেখছি তাপের কারণে উচ্ছে গাছ বাড়ছে না। মাঠের অনেক গাছ লাল হয়ে যাচ্ছে। এ ভাবে তাপ পড়লে উচ্ছে বাজারে বিক্রি করা লাগবে না। গাছের আগা মোটা হয়ে কুকড়ে গেছে। উপরের পানি না পড়লে গাছ ভালো হয় না। বিঘার উপরে উচ্ছে গাছ নষ্ট হয়ে গেছে। এ বছরে চাষে তেমন আশা পাচ্ছি না।
কৃষক রফিকুল ইসলাম জানান, আকাশের পানির অপেক্ষায় ছিলাম। গরমে পুড়ছে ফসলের মাঠ। এ গরমে জমিতে পানি দেয়ার পরের দিন শুকিয়ে যাচ্ছে। এভাবে চললে পানি দিয়ে পারা যাবে না। আবার মাঠে কাজ করা যাচ্ছে না। দুপুরে উচ্ছে গাছ মনে হচ্ছে সব মরে গেছে। এ গরমে মাঠে দাঁড়ানো যাচ্ছে না।
চুড়ামনকাঠি গ্রামের নজরুল ইসলাম জানান, এ সময় একটু গরম পড়ে। তবে এ বছর একটু গরমের পরিমাণ বেশি। গরম পড়লেও আমরা কৃষক মানুষ সব সময় ছুটাছুটি করতে হয়। এ গরমে সবজির ক্ষতি হচ্ছে। ফলন কমে আসছে। গাছের ফুল-ফল কমে আসছে। ঘন ঘন সেচ দিলেও গাছের লাল বর্ণ কাটছে না।
হাপানিয়া গ্রামের জাকির হোসেন জানান, সকাল ১০ টার পরে মনে হয় আগুনে তাপ ধেয়ে আসছে। লতা জাতীয় সবজি এমন তাপে হয় না। পটলে এখন যেমন ফলন হওয়ার কথা তেমন হচ্ছে না। কারণ ফুল-ফল শুকিয়ে যাচ্ছে। এই গরমে আবার পোকার আক্রমণও বেশি। যে ভাবে রোদের তাপ এমন ভাবে আর কয়েকদিন হলে চাষের মজা সব শেষ।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মাসুদুজ্জামান বলেন, তাপদাহে সবজির ফল-ফুল কমে আসে। কারণ গাছের বাড়ন ক্ষমতা কমে যায়। অনেক সময় তাপে সবজির গাছসহ ফুল-ফল শুকিয়ে যায়। বর্তমান তাপমাত্রা অনেক। এ সময় সবজিতে ঘন ঘন সেচ দিতে হবে। যাতে গাছে পানির পরিমাণ কমে না যায়। এছাড়া পড়ন্ত বিকেলে সবজি গাছের উপরে পানি স্প্রে করলেও ভালো উপকার হবে।
যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তারের উপপরিচালক ড. মোশাররফ হোসেন বলেন, সাধারণত অতিরিক্ত তাপে মাটিতে পানির অভাব দেখা দেয়। এ ক্ষেত্রে কৃষকের করণীয় ঘন ঘন সেচ দেওয়া এবং জমিতে পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা করা। ফল জাতীয় গাছগুলোতে খড় বা আবর্জনা দিয়ে মালচিংয়ের ব্যবস্থা করে পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা করা। আগামী ১৫ মে থেকে তাপমাত্রা কমে আশার সম্ভাবনা রয়েছে এবং সেই সাথে বৃষ্টি হতে পারে। এ কয়েকদিন কৃষকদের সচেতন থাকতে হবে।