বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোরে সোমবার সারাদিন ৪৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। মঙ্গলবার দিনভর বর্ষণে শহরের নিচু এলাকায় হাঁটু পানি জমে যায়। এ দিন সন্ধা সাত পর্যন্ত ১৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা। গত দুই দিনে ৬৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতে চরম দুর্ভোগে পড়ে মানুষ। আগামী ১৭ জুলাই পর্যন্ত যশোর বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে যশোর বিমানবাহিনী নিয়ন্ত্রণাধীন আবহাওয়া অফিস।
গত দুই দিনের বৃষ্টিতে শহরের বেশির ভাগ সড়কই পানিতে তলিয়ে গেছে। এমনকি অনেকের বাড়িঘরেও পানি ঢুকেছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন পৌর শহরের দক্ষিণ অংশের বাসিন্দারা। এসব বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ড্রেন ঠিকমত পরিস্কার না হবার ও ড্রেন নির্মাণ কাজের কারণে পানিপ্রবাহের পথ রুদ্ধ হয়ে পড়েছে। যে কারণে ভারি বৃষ্টি হলেই শহরে জমে যায় পানি।
ফলে ভোগান্তি নিয়েই বসবাস করছেন শহরের দক্ষিণ অংশের অর্ধলক্ষাধিক বাসিন্দা। তবে পৌর কর্তৃপক্ষ বলছেন, মূলত অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনার কারণে ওই এলাকার পানি নিস্কাশিত হচ্ছে না। এতে ভোগান্তি বেড়েছে শহরবাসীর।
যশোর বিমানবাহিনী নিয়ন্ত্রণাধীন আবহাওয়া অফিস সূত্র জানায়, সোমবার যশোরে মোট ৪৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। দুই দিনে ৬৪ মিলিমিটার বৃষ্টিতে পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের কমপক্ষে ১৫-২০টি সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
গতকাল মঙ্গলবার বৃষ্টি হয়েছে। আজ বুধবার বৃষ্টিপাত হওয়ার কথা জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আগামী ১৭ জুলাই থেকে স্বাভাবিক হতে পারে আবহাওয়া।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, গতকালের ভারি বৃষ্টিতে শহরের বিভিন্ন সড়কে পানি জমে আছে। খড়কি এলাকার শাহ আবদুল করিম সড়ক, নাজির শংকরপুর, বিভিন্ন সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। দুর্ভোগে পড়েন পথচারী ও এলাকাবাসী।
শহরের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শহরের ভিতর ও পাশ দিয়ে ভৈরব ও মুক্তেশ্বরী নামে দুটি নদ-নদী বয়ে গেছে। এর মধ্যে ভৈরব নদ দিয়ে শহরের উত্তরাংশ ও মুক্তেশ্বরী নদী দিয়ে শহরের দক্ষিণাংশের পানি নিষ্কাশিত হয়। কিন্তু গত দেড় দশক শহরের দক্ষিণাংশের পানি মুক্তেশ্বরী নদী দিয়ে নামতে পারছে না। পয়ঃনিষ্কাশন নালার মাধ্যমে শহরের পানি হরিণার বিল দিয়ে মুক্তেশ্বরী নদীতে যেত। কিন্তু ২০১০ সালে হরিণার বিলে যশোর মেডিকেল কলেজ স্থাপিত হয়। এরপর আশপাশে আরও অনেক স্থাপনা গড়ে উঠেছে। এতে বিল দিয়ে পানি আগের মতো নিষ্কাশিত হতে পারছে না। ওই পানি বের করার জন্য খালের মাধ্যমে মুক্তেশ্বরী নদীর সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে হবে। কিন্তু পৌরসভা গত দেড় দশকেও সেই উদ্যোগ নিতে পারেনি।
শহরের শাহ আব্দুল করিম সড়কে পানি জমে আছে। পায়ের জুতা হাতে নিয়ে অনেককে হেঁটে চলাচল করতে দেখা যাচ্ছে।
ওই এলাকার বাসিন্দা মিলন হোসেন বলেন, এখানে ১৫-২০ বছর ধরে জলাবদ্ধতার সমস্যা। বৃষ্টি হলে মানুষের ভোগান্তির শেষ থাকে না। অপরিকল্পিত ড্রেন নির্মাণ করাতে শহরের পানি চলাচল বাধাগ্রস্ত হওয়াতে এই জলাবদ্ধতা দেখা যাচ্ছে।
খড়কি এলাকার শাহ আবদুল করিম সড়কের বাসিন্দা তুষার হোসেন বলেন, ১২ মাসই এই সড়কে সমস্যা থাকে। বর্ষাকালে সমস্যা দ্বিগুণ হয়। বর্ষাকালে প্রতিদিনই হাঁটু পানি থাকে। পাশেই সরকারি এম এম কলেজ। এখানকার শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগ ছাত্রাবাস খড়কিতে। এখানে মেসগুলোতে সড়ক ও এলাকায় জলাবদ্ধতার কারণে উঠতে চায় না। বারবার এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা পৌরসভাকে বলেছে, তবে তারা তেমন কোন ব্যবস্থা নেয় না।
পৌরসভা সূত্র মতে, যশোর শহরে ২৫২ কিলোমিটার পয়ঃনিষ্কাশন নালা (ড্রেন) রয়েছে। এর মধ্যে ৫৫ কিলোমিটার আরসিসি, ৬০ কিলোমিটার ইট, ৫ কিলোমিটার পাইপ ও ১৩০ কিলোমিটার কাঁচা নালা রয়েছে। এর মধ্যে নগর উন্নয়ন প্রকল্পসহ কয়েকটি প্রকল্পের মাধ্যমে গত ১৪ বছরে ৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪০ কিলোমিটার আরসিসি ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে পৌরসভার প্রশাসক রফিকুল হাসান বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে আমরা কাজ করছি। এ বছর আগে ভাগেই জলাবদ্ধতা নিরসনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে সব ড্রেন পরিস্কার করা হয়েছে। যার সুফল মিলেছে এবারের বর্ষায়। এ বছর আশা করছি গতবারের মত সমস্যা প্রকট হবে না।