বাংলার ভোর প্রতিবেদক
চলমান এসএসসি পরীক্ষা উপলক্ষে ৩৫ দিনের জন্য সারা দেশের সব কোচিং সেন্টার বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ওই নির্দেশ অনুযায়ী গত ১০ এপ্রিল থেকেই কোচিং সেন্টার বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু যশোরে সেই নির্দেশ মানা হচ্ছে না। এমনকি জেলা প্রশাসনের নাকের ডগায় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলছে কোচিং সেন্টার। তবে কোচিং সেন্টারগুলোর শিক্ষক ও পরিচালকেরা বলছেন, সরকারিভাবে বন্ধের কোনো নির্দেশ তাদের কাছে আসেনি। যে কারণে তারা কোচিং সেন্টার খোলা রেখেছেন।
গত ১৬ মার্চ ‘এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার জাতীয় মনিটরিং ও আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা’ অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায় সিদ্ধান্তে চলমান এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস, গুজব এবং অসাধু কার্যকলাপ রোধে সরকারের নির্দেশনায় দেশের সব কোচিং সেন্টার ৩৫ দিনের জন্য বন্ধ থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়। ১০ এপ্রিল থেকে শুরু হয়ে পরীক্ষার সব ধরনের কার্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ নির্দেশনা বহাল থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়। একই সঙ্গে সুন্দর পরিবেশ বজায় রাখতে পরীক্ষাকেন্দ্রের আশপাশে কোনো ধরনের ফটোকপি মেশিন চলানোর ক্ষেত্রেও কড়া বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছিল। তবে সে নির্দেশ মানা হচ্ছে না যশোরে।
যশোর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের দেড়শ’ গজ দূরে জিরো পয়েন্ট মোড়। যা সর্বসাধারণের কাছে বাদশা ফয়সাল স্কুল মোড় বা খেজুরগাছ চত্বর বলে পরিচিত। এই মোড়েই অন্তত ২০টির বেশি কোচিং সেন্টার।
শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছে এই মোড় কোচিং পাড়া হিসেবে পরিচিত। তৃতীয় শ্রেণী থেকে শুরু করে বিসিএস কোচিং পর্যন্ত কোচিং সেন্টারগুলো এখানে। গত কয়েক দিন ঘুরে দেখা গেছে এ জায়গায় সব কোচিং সেন্টার খোলা। মঙ্গলবারও বিকেলে শিক্ষার্থীদের ভিড় দেখা গেছে। কোচিং সেন্টারগুলোতে কেউ নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পোশাক পরিধান করে এসেছেন; কেউ বা সাধারণ পোশাকে এসেছেন কোচিংয়ের ক্লাস করতে। কোচিং সেন্টারগুলোর সামনে অভিভাবকদের ভিড়ও দেখা গেছে। এ সময় একাধিক অভিভাবকের সঙ্গে কথা হলে তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কোচিং সেন্টারগুলো থেকে বন্ধের কথা বলা হয়নি। যে কারণে তারা সন্তানদের নিয়ে এসেছেন।
ম্যাক্স কোচিং সেন্টারে দেখা গেছে তারা ক্লাস করছেন। ৮ম ও ১০ম শ্রেণীর কয়েক শিক্ষার্থী বলে, ‘আমাদের কোচিং সেন্টার বন্ধ না। নিয়মিত ক্লাস হচ্ছে।’
এই কোচিং সেন্টারের পরিচালক বায়জিদ বিল্লাহ সজিব বলেন, ‘কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার কোন চিঠি পাননি। তবে গণমাধ্যমের সংবাদ প্রকাশে জানতে পেরেছিলাম। এখন কোচিং সেন্টার খোলা থাকলেও অনিয়মিতভাবে ক্লাস চলছে। পরীক্ষা শেষ হলে নিয়মিতভাবে ক্লাস শুরু হবে।’
স্টেডিয়ামপাড়াতে এইচএসসি ম্যাথ উইথ পঙ্কজ স্যার কোচিং সেন্টারও মঙ্গলবার খোলা দেখা গেছে। কোচিং সেন্টারের পরিচালক ও সরকারি এম এম কলেজের গণিত বিভাগের প্রভাষক পঙ্কজ কুমার মন্ডল বলেন, ‘আমাদের কোচিং সেন্টার অন্য সব বাণিজ্যিক কোচিং সেন্টারের মতো না। আমরা মাঝে মধ্যে কয়েকজন শিক্ষার্থীদের পড়ায়। যে দিন এসএসসি পরীক্ষা থাকে; সেই দিন কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখা হয়।’
মঙ্গলবার বিকেলে স্টেডিয়ামপাড়া এলাকায় কোচিং সেন্টার থেকে ক্লাস শেষে বাড়ি যাওয়ার পথে কথা হয় যশোর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সঙ্গে। তারা জানায়, বন্ধের কথা কোচিং সেন্টার থেকে বলা হয়নি। তবে ৭ মে পর্যন্ত বন্ধ থাকবে সরকারি নির্দেশনা তারা জানে।
একই চিত্র দেখা গেছে শহরের পোস্ট অপিস পাড়া, প্রেসক্লাবের পার্শ্ববর্তী মুজিব সড়ক এলাকা, শহরতলীর উপশহর এলাকার কোচিং সেন্টারগুলোতে। এসব কোচিং সেন্টারগুলোর অধিকাংশতেই রাত ৮টা পর্যন্ত ক্লাস চলছে।
এই বিষয়ে যশোর জেলা শিক্ষা অফিসার মাহফুজুল হোসেন বলেন, ‘সুষ্ঠু নকল ও প্রশ্নফাঁস রোধে এসএসসি পরীক্ষা গ্রহণের আগে আমরা জেলার সকল উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের নিয়ে মিটিং করেছিলাম। সেখানে জেলার সকল কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখতে নির্দেশনা দেয়া হয়। কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখা সরকারেও নির্দেশনা। কোচিং সেন্টার খোলা রয়েছে, আপনার মাধ্যমে অবগত হলাম। তার পরেও যারা কোচিং সেন্টার খোলা রেখেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’