বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোরে বাবার সামনেই উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যায় সদর উপজেলার পাগলাদাহ মালোপাড়ায় এই ঘটনা ঘটেছে। নিহত রিকসাচালক আব্দুস শহিদ (৪৫) পাগলাদাহ এলাকার বশির আহমেদের ছেলে। ঘটনার পর রক্তাক্ত ছেলের প্রাণ বাঁচাতে রিকসায় উঠিয়ে হাসপাতালে আনেন বৃদ্ধ বাবা বশির। কিন্তু বৃদ্ধ বাবার প্রাণপণ এই চেষ্টা বৃথা যায়। হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনলেই শহিদকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। পরে পুলিশ নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছে। পুলিশ বলছে, ‘শহিদের বিরুদ্ধে মাদকসহ একাধিক মামলা রয়েছে। মাদক সংক্রান্ত পূর্ব বিরোধের জের ধরে একই গ্রামের কয়েকজন চিহ্নিত যুবকের সঙ্গে শহিদের কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে তারা শহিদকে ছুরিকাঘাত করে ফেলে পালিয়ে যায়। এই ঘটনায় জড়িতদের আটকে পুলিশ অভিযান শুরু করেছে।

হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মেঝেতে নিহত শহিদের পিতা বসিরকে ঘিরে স্বজনদের আহাজারি করতে দেখা গেছে। বসিরের সমস্ত শরীর ছেলের রক্তে ভেজা। সবাই তাকে জড়িয়ে কান্না করলেও চোখের সামনে সন্তানের উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতের পরে নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখে বাকরুদ্ধ তিনি। কিছুক্ষণ পর বসির আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘তার তিন ছেলে তিন মেয়ে। শহিদ সকলের বড়। শনিবার সন্ধ্যার দিকে শহীদ রিকশা চালিয়ে বাসায় ফিরছিল। মালোপাড়ার রহমানের দোকানের সামনে একই এলাকার জাহাঙ্গীরের চার ছেলে আসিফ, মিরাজ, আলিফ, রিয়াজ এবং মানিক মিয়ার ছেলে ইরানের সাথে কথা কাটাকাটি হচ্ছিল। গন্ডগোল শুনে তিনি বাড়ি থেকে বের হন। তিনি ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই আসিফ চাকু দিয়ে তার বুকে পিঠে উপর্যুপরি আঘাত করে। আশেপাশে নারী পুরুষ চেয়ে দেখলেও দুর্বৃত্তদের হাতে চাকু থাকায় এগিয়ে যায়নি কেউ।

বসির কান্নাজড়িত কন্ঠে বলছিলেন, তিনি চেষ্টা করেও কাউকে ঠেকাতে পারেননি। চাকু দিয়ে বুকে পিঠে আঘাত করায় শহিদ মাটিতে পড়ে যায়। পরে দুর্বৃত্তরা চলে গেলে তিনি স্থানীয় একজন রিকসাচালককে সাথে নিয়ে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসেন কিন্তু জরুরি বিভাগের চিকিৎসক শহিদকে মৃত ঘোষণা করেন।

নিহতের বোন শাহিদা খাতুন জানান, গত শুক্রবার দুপুরে ওই দুর্বৃত্তদের সাথে তার ভাইয়ের কথাকাটকাটি হয়েছিল। তারা তার ভাইয়ের রিকশা কেড়ে নিতে চেয়েছিল। আজ শনিবার বিকেলে ফের তার ভাইয়ের রিকশা কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করে। সে সময় বাধা দিলে তার সাথে তর্ক বিতর্ক হয়। তখনই দুর্বৃত্তরা চাকু দিয়ে তাকে আঘাত করে হত্যা করে। মূলত বিরোধটা কি নিয়ে? এ প্রশ্ন করা হলে  শাহিদা জানিয়েছেন, এদের মাঝেমধ্যে একসাথে ঘোরাফেরা করতে দেখা যেত। তার ভাইয়ের কাছে কিছু টাকা পায় আসিফ। ওই টাকা নিয়েই বিরোধের সূত্র ধরে তাকে হত্যা করা হতে পারে বলে তিনি জানিয়েছেন। জরুরি বিভাগের চিকিৎসক বিচিত্র মল্লিক জানান, ‘হাসপাতালে আনার পরই শহিদকে মৃত ঘোষণা করা হয়। তার তার বুকের বাম পাশে ও উপরে বড় দুটি আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। যশোর কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক কাজী বাবুল হোসেন বলেন, ‘শহিদের বিরুদ্ধে মাদকসহ একাধিক মামলা রয়েছে। প্রাথমিক ধারণা করছি, মাদক সংক্রান্ত বিরোধ ও টাকার নিয়ে দ্বন্দ্ব নিয়েই এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। চিহ্নিত হত্যাকারীদের আটকে অভিযান শুরু করেছে পুলিশ। একই সাথে পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থা তদন্ত শুরু করেছে।’

Share.
Exit mobile version