স্বাধীন মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ
যশোর শহরের ষষ্ঠীতলা পাড়ার বাসিন্দা মধ্যবয়স্ক জামাল হোসেন। পেশায় একজন পায়ে চালিত রিকসার চালক। ভাড়ার জন্য প্রতিদিন শহরের জজকোর্ট মোড়ের বটতলায় রিকসা নিয়ে বসে থাকেন।
বৃহস্পতিবার বিকেলেও তাকে নিশ্চুপ রিকসার উপর বসে থাকতে দেখা গেছে। বাজারের দরদাম বিষয়ে কথায় হয় তার সাথে। শেষ কবে গরুর মাংস খেয়েছে জানতে চাইলে অবুঝ বালকের মত হেসে বলেন ‘কুরবানির সময় খাইছি। আর খাওয়া হয়নি। অত টাকা এক সাথে জোগাড় করবো কি করে। পায়ের রিকসা চালায়ে তিন বেলা ভাত জুটানো কষ্ট। গরুর গোস্ত কই পাবো।’
পাশেই বসে আছেন আতিয়ার রহমান নামে আর একজন চালক। মণিরামপুর থেকে প্রতিদিন শহরে রিকসা চালাতে আসেন। ডিমের দাম কেমন জানতে চাইলে বলেন, ‘গোশ কিনতে পারি না ঠিকমত।
আত্মীয় স্বজন না আসলে গোশই খাওয়া হয়না। সপ্তাহে দুই এক দিন ডিম খাওয়া হয়। ডিমের দাম ১৩ টাকা করে। এত দাম বাড়লে ডিমও কেনা হবে না। ছেলে মেয়েরা অর্ধেক ডিম খেতে চায় না। ডিম কিনতে গেলে মাথা গুনে কিনতে হয়।’
শহরের রিকসা চালক, দিনমজুর, বেসরকারি, সরকারি চাকুরিজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে বাজারে মাছ, মাংস ও ডিমের দাম উর্ধমুখী। মানুষের শরীরের আমিষের চাহিদা পূরণে এই খাদ্যপণ্য ৩ টি গুরুত্ববহন করে।
সাধারণ মানুষ অত্যন্ত সপ্তাহের একটা দিন মাছ, মাংস বা ডিম খাবারের তালিকায় রাখতে দিন রাত পরিশ্রম করে। মাংসের বাজার চড়া গেলে মাছ আর মাছের বাজার চড়া গেলে ডিম খেতে হয় তাদের। বর্তমানে বাজারে এই তিনটি খাদ্যপণ্য সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে শহরের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি পিস মুরগির ডিম খুচরা বিক্রি হচ্ছে ১৩ টাকা। পাইকারি দোকান থেকে ৩০ পিস খাচি বিক্রি হচ্ছে ৩৫৫ থেকে ৩৬০ টাকা।
এই হিসাবে প্রতি পিস ডিমের দাম পড়ছে ১১ টাকা ৬০ পয়সা থেকে ৮০ পয়সা।
শহরের জেল রোড়ের পাইকারি ডিম পরিবেশক ভাই ভাই এন্টারপ্রাইজের মালিক সিরাজুল ইসলাম বলেন, তারা ডিম ক্রয় বিক্রয়ের তৃতীয় পক্ষ। দুই পার্টির হাত বদল হয়ে তাদের হাতে ডিম আসে। যখন যেমন ডিম কিনেন তখন তেমন বিক্রি করেন। শহরের ডিম সরবরাহ করে আফিল ও চাঁদ ফিড।
তাদের কাছ থেকে ডিম কিনে পরিবহন খরচ, মজুরি খরচ, লাভ যোগ করে তাদের ডিম বিক্রি করতে হয়।
এদিকে, মংসের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিকেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭শ’ টাকা কেজি দরে। খাশির মাংসের দাম ১১শ’ টাকা কেজি। শহরের কাঠেরপুল এলাকার প্রিয় মাংসের ঘর দোকানের মালিক ফয়সাল হোসেন বলেন, বেশ কিছুদিন হলো গরুর মাংস ৫০ টাকা কমিয়ে ৭শ’ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তা
রা বাজার থেকে গরু ক্রয় করে কেটে মাংস বিক্রি করেন। যখন যেমন দামে গরু ক্রয় করতে পারে তখন তেমন দামে বিক্রি করেন।
তিনি আরও বলেন, গরু ও মুরগির খামারি বেশি দামে খাদ্য কিনে খাওয়াচ্ছে। যে কারণে তারা বেশি দামে বিক্রি করছে। এর প্রভাব পড়ছে সাধারণ ক্রেতাদের উপর।