বাংলার ভোর প্রতিবেদক
ফেব্রুয়ারির তুলনায় মার্চ মাসে যশোর জেলার আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছিল। ৬টি খুন, ৮টি ধর্ষণ ও ১৭টি শিশু নির্যাতনের ঘটনায় ঘটে। ফেব্রুয়ারির তুলনায় মার্চের আইনশৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ে জনমনে বিরুপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। রোববার জেলা আইনশৃংখলা কমিটির সভায় মার্চ মাসের জেলার আইনশৃংখলা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয়। সভায় সড়ক দুর্ঘটনা ও অনলাইন জুয়া চক্রের তৎপরতা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলামের সভাপতিত্বে সভার শুরুতে যশোর জেলার মার্চ মাসের অপরাধ চিত্র তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনে দেখা গেছে, মার্চে খুন হয়েছে ৬ টি, ধর্ষণ ৮টি, শিশু নির্যাতন ১৭টি। এসিড নিক্ষেপের ঘটনায় ১টি, গরু চুরি ৫টি, সড়ক দুর্ঘটনা ৯টি, অন্যন্যা মামলা ৮৮টি, মাদকদ্রব্যে ৮৫টি মামলা দায়ের হয়েছে। যদিও ফেব্রুয়ারি মাসে খুন ছিল ৩টি, ধর্ষণ ৩টির মামলা হয়। শিশু নির্যাতন ও এসিড নিক্ষেপের ঘটনা ছিলো না। গরু চুরি ৪টি, অন্যান্য মামলা ৫১টি ও মাদকদ্রব্যের ৭০টি মামলা ছিল। অন্যদিকে অপরাধ কমেছে দস্যুতা, মানবপাচার ও অপহরণের ঘটনায়।
পুলিশ সুপার রওনক জাহান বলেন, সম্প্রতি শার্শায় অনলাইন জুয়া চক্রের ৭ জনকে আটক করা হয়েছে। সাইবার টিমকে পুনর্গঠন করেছি। জুয়ার ওয়েবসাইট নিয়ে কাজ করছি। জুয়ার সাথে নারী কেলেংকারির লিংক থাকে অনেক সময়। আমরা সেটা নিয়েও কাজ করছি।
অনলাইন জুয়ায় শহর ও গ্রামের কিশোর যুবক ও বৃদ্ধরা জড়িয়ে পড়ার বিষয়টি সভায় উত্থাপন করেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকন ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যশোরের আহবায়ক রাশেদ খান।
সড়ক দুর্ঘটনার বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন সভার সভাপতি ও জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম। তিনি বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় যে মানুষটি মারা যায় সেই মানুষটা আপনার জেলার। গাড়ি আপনার জেলার নাও হতে পারে। সড়ক-মহাসড়কে গাড়ির অতিরিক্ত গতি নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে তিনি বাস মালিক সমিতির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
বাস মালিক সমিতির সভাপতি বদিউজ্জামান বাবু বলেন, মহাসড়কে থ্রি-হুইলারের কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে। মহাসড়কে বাসের গতি থাকে ঘন্টায় ৭০ কিলোমিটার। এছাড়া সড়কে কিশোররা বেপরোয়াভাবে মটরসাইকেল চালাই। বেপরোয়া গতির কারণেও দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকে।
যশোর চেম্বর অব কমার্স এণ্ড ইণ্ডাস্ট্রির সভাপতি মিজানুর রহমান খান বলেন, রাস্তায় যাত্রী তুলতে তুলতে বাস যায়। পরে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে গন্তব্যে পৌঁছাতে গতিতে গাড়ি চালায়। গাড়ির উচ্চগতি নিয়ন্ত্রণ করতে মালিক সমিতির কার্যকর পদক্ষেপ আশা করেন তিনি।
এ বিষয়ে জেলার পুলিশ সুপার রওনক জাহান বলেন, গাড়ির উচ্চ গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য হাইওয়ে পুলিশ না বরং মালিক সমিতিকে দায়িত্ব নিতে হবে।
নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতার বিষয়ে মামলা রেকর্ডের তাগিদ দিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, এই রেকর্ডকৃত মামলাগুলো পরবর্তীতে বিচারের মাধ্যমে রায় হবে। মামলা রেকর্ড হলে অপরাধ প্রবণতা কম হবে।
প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন বলেন, বাস মালিক সমিতি ও পুলিশ সুপার মিলে আশেপাশে জেলার প্রশাসন ও সমিতির নেতাকর্মীদের নিয়ে জরুরি মিটিং করে সিদ্ধান্ত নেয়া হোক। এক জেলার বাস অন্য জেলায় গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটায়। এ বিষয়ে প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে।
সভায় উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক ও যশোর পৌরসভার প্রশাসক রফিকুল হাসান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কমলেশ মজুমদার, জেলা জামায়াতের আমীর অধ্যাপক গোলাম রসূল প্রমুখ।
জেলা প্রশাসক আজাহারুল আসলাম বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রাণালযের নির্দেশে ৪১ সদস্য বিশিষ্ট জেলার আইন শৃংখলা কমিটি গঠন করা হয়েছে। চোরাচালান ও গ্রাম আদালতে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির তাগিদ দেন জেলা প্রশাসক।