হাসান আদিত্য
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বেঁধে দেয়া সময়সীমার পর্যন্ত যশোরে ৩৬৫টি অস্ত্রের মধ্যে ২৭০টি অস্ত্র জমা পড়েছে। তবে এখনো ৯৫টি অস্ত্র জমা হয়নি। একই সাথে প্রায় এক হাজার রাউন্ড গুলিও জমা পড়েনি। কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতার অস্ত্র লুট হওয়ায় ও আত্মগোপনে থাকাতে অস্ত্র জমা দিতে পারেনি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এদিকে, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শতভাগ জমা না দেয়ায় সব অস্ত্রই অবৈধ হিসেবে বিবেচিত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে যেকোন সময় যৌথ অভিযান চালানো হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসন। অবৈধ অস্ত্রসহ সুনির্দিষ্ট কিছু অভিযোগ নিয়ে বুধবার জরুরি মিটিং করেছেন জেলার যৌথবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা। এদিন বিকালে জেলা প্রশাসকের কক্ষে এই সভায় যৌথ অভিযান চালানোর রোডম্যাপ চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।
যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কমলেশ মজুমদার জানান, ‘জেলা ম্যাজিস্ট্রেসি থেকে ইস্যুকৃত লাইসেন্স এবং অন্যান্য জেলা ম্যাজিস্ট্রেসি থেকে যশোর জেলায় বসবাসরত বেসামরিক জনগণের অনুকূলে ইস্যুকৃত লাইসেন্সের বিপরীতে ক্রয়কৃত আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ সংশ্লিষ্ট থানায় ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জমা দেয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছিল। কিন্তু ৯৫টি অস্ত্র জমা হয়নি। এ আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। দেশের অন্যান্য জেলায়ও যশোরের ইস্যুকৃত অস্ত্র জমা হতে পারে। তাই হিসাব মেলানোর পর কার্যকর পদক্ষেপের পরিকল্পনা রয়েছে।
তিনি জানান, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে যশোরে যে কোন সময় যৌথ অভিযান পরিচালনা হবে। আজ (বুধবার) যৌথবাহিনীর সভা হয়েছে। তথ্য পেলেই অভিযান নয়; টিম যাচাই বাছাই করেই অভিযানে যাবে। অভিযানের নামে কেউ যাতে হয়রানি না হয়; সে ব্যাপারে কিছু তথ্য যাচাই বাছাই করা হচ্ছে। সভায় সুনির্দিষ্ট কিছু তথ্য অনুযাযী অভিযানের রোডম্যাপ তৈরি করা হয়েছে। প্রতিটি অভিযানেই একজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর একজন মেজর, বিজিবি, পুলিশ, র্যাব, আনসার বাহিনীর সদস্যরা থাকবেন।’
যশোর জেলা প্রশাসকের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (জেএম) শাখার তথ্যমতে, জেলায় লাইসেন্স ইস্যুকৃত অস্ত্রের সংখ্যা ১ হাজার ১শ’৩৫টি। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী জমা প্রদানের জন্য যশোর জেলায় চাহিত অস্ত্রের সংখ্যা ৩৬৫টি। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ৫ আগস্ট পর্যন্ত দেয়া লাইসেন্সকৃত অস্ত্র জমা দেয়ার শেষ তারিখ ৩ সেপ্টেম্বর। এই অস্ত্রের মধ্যে জমা পড়েছে ২৭০টি। জমা পড়েনি ৯৫টি। তবে বাইরের জেলা থেকে লাইসেন্সে করা যশোরের বসাবসরত এমন ৮টি অস্ত্র জমা পড়েছে। জেলায় লাইসেন্সধারী অস্ত্রের এক হাজার রাউন্ড গুলি জমা পড়েনি। মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) রাত ১২টার মধ্যে যেসব অস্ত্র এবং গোলাবারুদ সংশ্লিষ্ট থানায় জমা দেওয়া হবে না সেগুলোকে অবৈধ হিসেবে গণ্য করা হবে।
জেলা প্রশাসনের একটি সূত্রে জানা গেছে, যশোরে ৩৬৫ অস্ত্রের লাইসেন্স দেয়া হয় ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ৫ আগস্ট পর্যন্ত। আর ওই সময়ের মধ্যে বৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সের বেশিরভাগই পেয়েছিলেন আওয়ামী ঘরানার নেতা কর্মী ব্যবসায়ী ও পেশাজীবীরা। রাজনৈতিক কর্মসূচি ও প্রতিপক্ষকে ভয় দেখাতে প্রায়ই ওই বৈধ এবং গোপন অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শিত হয়েছে বিভিন্ন সময়। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠন হলে রয়েছে ক্ষমতাচ্যুত সরকারের সুবিধাভোগী নেতাকর্মী ও আওয়ামী ঘরানার ওই সব অস্ত্রধারী পলাতক হওয়ায় তাদের বৈধ ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের জোর দাবি ওঠে। আর প্রজ্ঞাপন জারি করে ওই অস্ত্র জমা দিতে বলা হয়।
সূত্রটির দাবি, তাদের কাছে এমন তথ্যও রয়েছে যে অনেকের নামে অস্ত্রের লাইসেন্স থাকলেও অস্ত্র তার দখলেই নেই এখন। আছে পলাতক ভক্ত সমর্থকদের কাছে। যে কারণে ইচ্ছা থাকলেও জমা দিতে পারছেন না অস্ত্র। আবার যারা অথোরাইজড ডিলারের কাছে আগেই আগ্নেয়াস্ত্র জমা রেখেছেন তারা থানায় শুধু জমার কাগজপত্র জমা দিলেই হবে। তবে তাও করেননি অনেকে। ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর আওয়ামী লীগের নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের বাড়ি লুট ভাংচুর অগ্নিসংযোগ হওয়ার সময়ে অনেকের অস্ত্র লুট হয়েছে বলে জানা গেছে। অস্ত্র লুট হলেও এমনকি তারা জানাতেও জিডি বা লিখিত অভিযোগ করেনি।
যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) ফিরোজ কবির বলেন, ‘নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অস্ত্র জমা না দেয়ায় সব অস্ত্রই অবৈধ হিসেবে গণ্য করা হবে। যৌথবাহিনী এই অভিযান পরিচালনা করবে এবং ওই অস্ত্রগুলো আমরা উদ্ধার করতে পারবো বলে আশাবাদী।’
##
শিরোনাম:
- সব রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখবে বাংলাদেশ: প্রধান উপদেষ্টা
- যশোর মটর পার্টস ব্যবসায়ী সমিতির নির্বাচন সংস্কার ও উন্নয়ন পরিষদের পক্ষে ২৭টি মনোনয়নপত্র ক্রয়
- ‘জুলাই বিপ্লবে আহতদের চিকিৎসায় অবহেলা বরদাস্ত করা হবে না’
- পদ্মাসেতু রেল সংযোগ প্রকল্প কোচ সংকটে শিগগিরই চালু হচ্ছে না ট্রেন চলাচল
- শব্দ থিয়েটারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী; যশোরে তিনদিনের নাট্য উৎসব হবে
- অভয়নগরে রবিউল হত্যা ওয়াহিদুলের রিমান্ড মঞ্জুর
- যশোর চেম্বার অব কমার্স সভাপতি মিজান খান ও সম্পাদক সোহান নির্বাচিত
- কেশবপুরে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের কুরআন ধরানো অনুষ্ঠান ও পরিচিত সভা