স্বাধীন মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ
রমজানে নিত্যপণ্যের দাম লাগামহীন। বাড়তি দামে পণ্য কিনতে হিমশিম খাচ্ছে ভোক্তা। এমন বাস্তবতায় ২৯ পণ্যের দাম নির্ধারণ করেছে সরকার। যশোরের বাজারে অধিকাংশ পণ্য মিলছে না নির্ধারিত দামে। বাজার মনিটরিং জোরদার না থাকায় সরকারের উদ্যোগের সুফল মিলছে না। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযানেও তোয়াক্কা করছে না অসাধু ব্যবসায়ীরা।
শুক্রবার রমজান উপলক্ষে মাছ-মাংসসহ ২৯টি নিত্যপণ্যের দাম বেঁধে দেয় কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কৃষি বিপণন আইন ২০১৮ এর ৪ (ঝ) ধারার ক্ষমতা বলে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর কৃষি পণ্যের যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করেছে। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত নিম্নোক্ত দামে কৃষিপণ্য বেচাকেনার অনুরোধ করা হলো।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর যশোরের সহকারী পরিচালক সৈয়দা তামান্না তাসনীম জানান, রোববার যশোর সদর উপজেলার রুপদিয়া এলাকায় তদারকি অভিযান চালানো হয়েছে। এসময় দুটি প্রতিষ্ঠানকে তিন হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জনস্বার্থে এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
রোববার যশোর শহরের বড়বাজার, রেলস্টেশন বাজার, চুয়াডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সরকার নির্ধারিত ২৯ টি পণ্যের দাম যথাযথভাবে কার্যকর হচ্ছে না। অধিকাংশ পণ্য চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। ৭টির মত পণ্য সরকার নির্ধারিত দামের মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। শহরের বড়বাজারে খুচরা প্রতি কেজি ছোলা ১০৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। যা বেঁধে দেয়া মূল্য ৯৮ দশমিক ৩০ টাকা। মুগডাল ২০০ টাকা। নির্ধারিত মূল্য ১৬৫ দশমিক ৪১ টাকা। আলু বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকা কেজি। যার বেঁধে দেয়া মূল্য ২৮ দশমিক ৫৫ টাকা। মসুরডাল (মোটা) ১১০ টাকা। নির্ধারিত মূল্য ১০৫ দশমিক ৫০ টাকা। মসুরডাল (চিকন) ১২০ টাকা। যা নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে ১০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে। খেসারিডাল বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা। নির্ধারিত মূল্য ৯২ দশমিক ৬১ টাকা। ডিম নির্ধারিত দামের চেয়ে ৪৯ পয়সা কমিয়ে ১০ টাকা পিস বিক্রি হচ্ছে।
অতিয়ার রহমান নামে এক মুদি দোকানি বলেন, সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়েও কম দামে কিছু পণ্য বিক্রি হচ্ছে। আবার কিছু পণ্য নির্দিষ্ট দামে বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না। বেশি দামে কেনা জিনিস কত লস করা যায়। নতুন দামে পাইকারি কিনতে পারলে খুচরা নির্ধারিত দামে বিক্রি করতে পারব।
এদিকে মাছ, মাংসের বাজার বেশ চড়া। সরকার নির্ধারিত ৬৬৪ দশমিক ৩৯ টাকার গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকা কেজি করে। ছাগলের মাংস এক হাজার ৩ দশমিক ৫৬ টাকা নির্দিষ্ট করলেও তা কেজি প্রতি ১১শ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মুরগির বাজারও দামে পিছিয়ে নেই। ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২১০ টাকা, কাঁটা বয়লার ২৪০ টাকা কেজি। নির্ধারিত মূল্য ১৭৫ দশমিক ৩০ টাকা। সোনালী মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩১০ টাকা। যার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ২৬২ টাকা। এদিকে পাঙগাস মাছ বিক্রি হচ্ছে ২৬০ টাকা কেজি। যার নির্ধারিত দাম ১৮০ দশমিক ৮৭ টাকা। কাতল মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকা কেজি। যার নির্ধারিত দাম ৩৫৩ দশমিক ৫৯ টাকা। অর্থাৎ মাছ, মাংসের বাজারে কোনো রকম নিয়ন্ত্রণ নেই।
মাংস কিনতে আসা তৌফিক হাসান জানান, সরকার গরুর মাংসের দাম ৬৬৪ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে। সেই মাংস সাড়ে ৭শ’ টাকায় কিনতে হচ্ছে। বাজার তদারকি নেই। যে যার মত বাজার কেন্দ্রীক দাম নির্ধারণ করে বিক্রি করছে। মধ্যবিত্তদের জন্য গরুর মাংস কেনা কষ্টকর। রোযায় বাজার নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে গরীব মানুষের অবস্থা খুব শোচনীয় হবে।
এদিকে কাঁচাবাজারে নির্ধারিত দামের চেয়ে কমে পেঁয়াজ, রসুন, সিম, টমেটো, বেগুন বিক্রি হচ্ছে। আঁদা বিক্রি হচ্ছে ২০০টাকা কেজি। যার নির্ধারিত দাম ১৮০ দশমিক ২০ টাকা। ফুলকপি, বাঁধাকপি নির্ধারিত দামের চেয়ে ১৫ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। কাঁচা মরিচের দাম নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে। তবে শুকনো মরিচের নির্ধারিত দাম ৩২৭ দশমিক ৩৪ টাকার বিপরীতে ৪২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মিষ্টি কুমড়া নির্ধারিত দামের চেয়ে ২ টাকা বেশি দরে ২৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। কাঁচা বাজারের ব্যবসায়ী হাসিব রহমান বলেন, হঠাৎ পেঁয়াজ, রসুনের দাম পড়ে গেছে। বাজারে সরবরাহ বেশি হওয়াতে দাম কমতে পারে।