স্বাধীন মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ
যশোরে চলতি বছরে রেকর্ড পরিমাণ আগাম জাতের শিম চাষ হয়েছে। গতবছরের তুলনায় এবার শিম চাষের পরিমাণ বেড়েছে। যদিও দীর্ঘদিনের অনাবৃষ্টি এবং তীব্র তাপদাহের কারণে শিমের ফলন কিছুটা ব্যাহত হয়েছিল। তবে সাম্প্রতিক বৃষ্টিপাত এবং অনুকূল আবহাওয়া চাষিদের মধ্যে নতুন স্বপ্ন জেগেছে। কৃষি অধিদপ্তরের দাবি, এ বছর শিমের উৎপাদন নিকট অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে। এবার ২৩৪ কোটি টাকার শিম বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা চাষিদের। কৃষকরা আশা করছেন, বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে, টার্গেট পূরণ হবে।
সবজি উৎপাদনের জোন হিসেবে পরিচিত যশোর জেলা। এ বছর যশোরে প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের সবজি চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৬ হাজার ১৯ হেক্টর জমিতে আগাম জাতের শিম চাষ হয়েছে। চলতি বছরে ২২ হাজার ৬৩১ মেট্টিক টন শিম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বাজারে শিমের প্রতি কেজি মূল্য ৬০ টাকা ধরলে, শিম বিক্রির মোট পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ২৩৪ কোটি টাকা।
শিম ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন যশোর সদর উপজেলার বারীনগর, মানিকদিহি, হৈবতপুর, খাজুরা, তীরেরহাট, চুড়ামনকাটি, শাহবাজপুর, আমবটতলা ও চৌগাছা উপজেলাসহ বিভিন্ন অঞ্চলের চাষিরা। ক্ষেতে শিমের ফুলে ভরে গেছে। মাঠে গাছে গাছে দেখা যাচ্ছে সবুজ এবং বেগুনি রঙের ফুলের বাহার। তাপমাত্রার অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি এবং পোকামাকড়ের উপদ্রব শিমের ফুল এবং ফলন নষ্ট করার পাশাপাশি চাষিদের ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন করেছে। তবে সম্প্রতি কয়েকদিনের বৃষ্টির পর শিমের গাছে নতুন ফুল এবং ফল দেখা যাচ্ছে। এই অবস্থায় কৃষকরা আশা করছেন, শিমের ফলন আগের চেয়ে ভালো হবে।
সদর উপজেলার শিম চাষি বশিরুল ইসলাম জানান, তিনি ১২ কাঠা জমিতে শিম চাষ করেছেন। তার খরচ হয়েছে প্রায় ১৬ হাজার টাকা। আর শিম বিক্রি করে তিনি ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকার বেশি আয় করতে পারবেন বলে আশা করছেন।
শিম চাষি ইলিয়াস আলী বলেন, আগে শিম চাষে কিছুটা ঝুঁকি ছিল। কিন্তু এই বছর আবহাওয়া ভাল থাকায় ভালো ফলন আশা করছি। বাজারও ভাল মন্দের মধ্যে চলে, তবে যদি সব ঠিক থাকে তাহলে আমরা লাভবান হব।
এদিকে, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ বছর কৃষকরা আগাম জাতের শিম চাষে বেশ লাভবান হচ্ছেন। অন্যান্য বছরের তুলনায় বাজারের দামও ভালো রয়েছে। যা চাষিদের উৎসাহিত করছে। কৃষক সমাবেশ এবং পরামর্শের মাধ্যমে চাষিদের মানসম্মত শিম উৎপাদনের জন্য উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। যশোরের শিম চাষিদের জন্য এ বছর একটি বিশেষ সুযোগ তৈরি হয়েছে। যেহেতু উন্নত শিম জাত এবং আবহাওয়ার সহায়তায় বড় অংকের লাভের সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী দিনগুলোতে আরও বেশি কৃষক শিম চাষে আগ্রহী হয়ে উঠবেন এমনটাই মনে করছেন স্থানীয় কৃষি বিশেষজ্ঞরা।
যশোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (শস্য) সমরেন বিশ্বাস জানান, কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের বিভিন্ন ধরনের কারিগরি সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। নিয়মিতভাবে কৃষকদের জন্য প্রশিক্ষণ কর্মশালা এবং মাঠ পর্যায়ের পরিদর্শন কর্মসূচি পরিচালিত হচ্ছে। কৃষকদের উন্নত জাতের শিম উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় সব পরামর্শ দেয়া হচ্ছে এবং মাঠ পর্যায়ে পর্যবেক্ষণ চলমান রয়েছে।