স্বাধীন মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্মচাপটি ঘূর্ণিঝড় ‘রেমালে’ রুপ নিয়েছে। নিম্নচাপের প্রভাব ছিলো যশোরেও। রবিবার দুপুর থেকে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির সঙ্গে বইতে থাকে ঝড়ো হাওয়া। যা অব্যহত থাকে গভীর রাত অবধিও। যশোর বিমান বাহিনী নিয়ন্ত্রীত আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে ঝড়ো বাতাসের সঙ্গে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়। বাতাসের গতিবেগ ছিলো সর্বোচ্চ ২৫ নটিক্যাল মাইল। এদিন রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত ৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এদিকে, ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে ঢাকা থেকে যশোরগামী ফ্লাইটগুলো বাতিল করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাব পড়ার কথা ছিলো যশোরে। দুপুরের পর থেকে আঘাত হানতে পারে খুলনা যশোর সাতক্ষীরা। সেই পূবভাস অনুযায়ী রবিবার দুপুর পর্যন্ত যশোরের আকাশ ছিলো রৌদ্রজ্জ্বল। দুপুরের পর থেকে আকাশে মেঘ জমতে থাকে। অন্যদিকে বইতে থাকে ঝড়ো বাতাস। ঘূর্ণিঝড় রেমালের খবরে শহরজুড়ে সাধারণ মানুষের ভিতরে ভীতি কাজ করছে। অনেক দোকানি বিকেল বেলা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছেন। শহরে মানুষের পদচারণা কিছুটা কমেছে। ইজিবাইক, রিস্কা চালকরা থেমে থেমে বৃষ্টিতে ভিজে যাত্রী খুঁজছেন। কিন্তু ঘর থেকে মানুষ কম বের হওয়াতে অনেকেই যাত্রী পাচ্ছেন না।
যশোর শহরের সার্কিট হাউজের সামনে কথা হয় রিক্সাচালক ইসারত খাঁর সাথে। তিনি বলেন, সকালে রিক্সা নিয়ে বের হয়েছিলাম। তেমন ভাড়া পাইনি। বিকেলে বের হয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত ৪০ টাকা আয় হয়েছে। শুনতেছি ঝড় হবে। সেই ভয়ে মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে না। অনেক দিন ঝড় বৃষ্টি হয়নি তো। মানুষের মধ্যে আতঙ্ক কাজ করছে। দেখি ভাড়া না পেলে আমিও বাড়ি চলে যাবো।
ইজিবাইক চালক ইকলাস মোল্যা বলেন, সকালের দিকে বাইরে লোকজন ছিলো। অনেক জন পরীক্ষা বন্ধ না জেনে পরীক্ষা দিতে এসেছিলো। সন্ধ্যার সময় ঝড় উঠবে শুনে সবাই ঘরে ফিরে যাচ্ছে। বাইরে লোকজন কম, ভাড়াও কম পাচ্ছি। ফল বিক্রেতা কামারুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন ফুটপাতে বসে ফল বিক্রি করি। আজ বেঁচা বিক্রি নেই। এখন দোকান গুছিয়ে বাড়ি যাবো।
আব্দুস সালাম নামে একজন পথচারি বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে যশোরে বৃষ্টি ও ঝড়ের প্রভাব সকাল থেকে দেখা যাচ্ছে। যদিও আমরা উপকূলের জেলার বাসিন্দা না। তারপরও সতর্ক থাকতে হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবে বাজার থেকে বাড়ি একটু দেরি করে ফেরা হয়। আজ সন্ধ্যায় রেমাল আঘাত হানতে পারে এমন খবর শুনে বাইরের কাজ সেরে দ্রুত বাসায় ফিরছি।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জেলা শহরসহ উপজেলা ও ইউনিয়নে ইউনিয়নে সাধারণ মানুষকে সতর্ক করতে মাইকিং করা হয়েছে। জেলা জুড়ে যথেষ্ঠ সতর্কতা ও আপদকালিন নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
এদিকে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে ২৬ মে ঢাকা থেকে যশোরগামী ফ্লাইটগুলো বাতিল করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। রোববার এক বার্তায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) বোসরা ইসলাম।
বিমান জানায়, যশোর বিমানবন্দর এখনো বন্ধ ঘোষণা করা হয়নি। বিমান এই রুটে ড্যাশ-৮ এয়ারক্রাফট দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা করে। বাতাসের তীব্রতার কারণে এই এয়ারক্রাফট দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা করা সম্ভব নয়। তাই এই রুটের ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। বোসরা ইসলাম বলেন, প্রতিকূল আবহাওয়ায় বিমানবন্দর বন্ধ ঘোষণা করায় ২৬ মে কলকাতা, কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম রুটের নির্দিষ্ট কয়েকটি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। অন্যান্য ফ্লাইটের বিষয়ে সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত সেগুলো স্বাভাবিক থাকবে বলে জানিয়েছে বিমান।