বিবি প্রতিবেদক
বিচ্ছিন্ন দু’ একটি সহিংসতা ছাড়া যশোরের ৬টি আসনে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচনে সকালের দিকে ভোটারের উপস্থিতি কম ছিল। দুপুর ১২টার পর ইউনিয়ন পর্যায়ে ভোটারের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। সেই তুলনায় যশোর সদর আসনের শহরের কেন্দ্রগুলোতে উপস্থিতি বাড়েনি। এর কারণ হিসেবে স্থানীয়রা বলছেন, ভোটের আগের রাতে ও ভোটের দিন সকালে শহরের অন্তত ১৫টি স্থানে ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটে। পাশাপাশি ভোট চলাকালে ৬টি আসনের বিভিন্ন স্থানে নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ১২টি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে প্রায় ২০ জন জখম হয়েছেন। যাদের মধ্যে ১০ জন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, যশোর-৩ (সদর) আসনে শহরের শংকরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ককটেল বোমা বিস্ফোরণ করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল ভোট শুরু হওয়ার আধা ঘণ্টা আগে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্য মণিরামপুর উপজেলার এড়েন্দা গ্রামের বাসিন্দা মারুফ হোসেন (২২) আহত হয়েছেন। এর আগে শনিবার রাত ৮টার দিকে যশোর শহরতলীর শংকরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোটকেন্দ্রে ককটেল বোমা বিস্ফোরণ করে দুর্বৃত্তরা। রাত সাড়ে ৮টার দিকে ওই এলাকার সরকারি এনএম খান প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের পেছনে পরপর তিনটি ককটেল নিক্ষেপ করে দুর্বৃত্তরা। এছাড়া এদিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে যশোর শহরের বকচর এলাকার মার্কেট সংলগ্ন যশোর-৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহিত কুমার নাথের (ঈগল) কার্যালয়ের সামনে ককটেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এ সময় হাতেনাতে এক যুবককে আটক করে পুলিশে দেয় স্থানীয়রা। এই আসনে ভোট দেয়াকে কেন্দ্র করে বিএড কলেজ কেন্দ্রে ছুরিকাঘাতে তিনজন আহত হয়েছেন। এতে গুরুতর আহত হয়েছেন সদরের ঘোপ সেন্ট্রাল রোডের আসাদ (২১)। আহত আসাদকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে আইসিইউতে ভর্তি রাখা হয়েছে। শংকরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ককটেল বিস্ফোরণে আনসার সদস্য মারুফ হাসান আহত হন।
আসনটির কয়েকজন ভোটারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ভোট গ্রহণের আগের রাতে শহরের বিভিন্ন স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে একধরনের আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। এর প্রভাবে ভোটার উপস্থিতি কিছুটা কমেছে। রোববার সকাল ১০টার দিকে শহরের শংকরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটারদের কোনো লাইন দেখা যায়নি। যারা ভোট দিতে আসছেন, দ্রুত ভোট দিয়ে চলে যাচ্ছেন। এই কেন্দ্রের ভোটার নজরুল ইসলাম বলেন, ‘এখনো ভোট দেইনি। ভোটের আগের রাতে ও ভোটের দিন সকালে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটেছে। এতে এলাকার ভোটাদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই আসেনি ভোট দিতে।’
শহরের আমিনিয়া আলিয়া মাদ্রাসা, আদর্শ বহুমুখি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, সম্মিলনী ইনস্টিটিউট, আব্দুর রাজ্জাক মিউনিসিপ্যাল কলেজ, এমএম কলেজ, জিলা স্কুল, কালেক্টরেট স্কুল, এমএসটিপি স্কুলসহ ১০টি কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি খুবই কম দেখা গেছে। তবে উপশহর ডি ব্লক প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র, উপশহর বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্র, বিরামপুর শিলা রায় চৌধুরী কেন্দ্রের ভোটার উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত।যশোর আমিনিয়া আলিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রে মোট ভোটার ২৯৬০। দুপুর ১২টা পর্যন্ত মাত্র ৪৩৭ ভোট পড়ে। এ তথ্য দেন প্রিজাইডিং অফিসার সুদীপ কুমার ঘোষ। যশোর আদর্শ বহুমুখী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার স্বরূপ কুমার দাস বলেন, এ কেন্দ্রের মোট ভোটার ২৮২৩। দুপুর ১২টা পর্যন্ত ভোট পড়ে ২৭০টি। সম্মিলনী ইনস্টিটিউট কেন্দ্রে মোট ভোটার ২৫৭৪। দুপুর ১২টা পর্যন্ত ভোট কাস্ট হয়েছে ৩৬৭। প্রিজাইডিং অফিসার মাকসুদ আল হাবীব এ তথ্য জানান।
যশোর-৬ আসনে (কেশবপুর) শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন হয়েছে। তবে ভোটারদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো ছিলনা। দুপুর ১২টার দিকে উপজেলার বাড়িহাটি-হাসানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে ভোটার উপস্থিতি কম। অবশ্য কেন্দ্রের বাইরে ছিল মানুষের ভিড়। অনেকে ভোট প্রয়োগ না করলেও কেন্দ্রের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
কেন্দ্রে আসা শারীরিক প্রতিবন্ধী আবদুল মান্নান জানান, দীর্ঘ এক যুগ ধরে আমি সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে বাড়িতে বসে আছি। তাই হুইল চেয়ারে করে এসে ভোট দিলাম। একই কেন্দ্রের শিক্ষার্থী পল্লব পাল জানান, আমি প্রথমবারের মতো জাতীয় নির্বাচনে ভোট প্রদান করলাম। ভোট দিতে পেরে ভালো লাগছে। এই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার জিএম মিজানুর রহমান জানান, এখানে ভোটারদের উপস্থিতি ভালো ছিল। বিশেষ করে মহিলারা ভোট দিয়েছেন বেশি। প্রতাপপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আসা রবিউল আলম বলেন, ভোটে কোন বাঁধা ছিলনা। শান্তিপূর্ণ পরিবেশ রয়েছে সব স্থানে। ভোটার উপস্থিতি কম হবার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিএনপিসহ অন্য দল নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় ভোটাররা আসেনি।
নারায়ণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আসা বৃদ্ধ মনোতোষ বসু বলেন, কেশবপুরের সব স্থানে রয়েছে সুষ্ঠু পরিবেশ। যারা কেন্দ্রে এসেছেন তারা সবাই উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট প্রদান করেছেন।
যশোর-৪ আসনে প্রায় প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। সরেজমিনে দেখা যায়, তরুণ ভোটারদের মধ্যে ভোট দেয়ার বিষয়ে ব্যাপক উচ্ছ্বাস দেখা গেছে। ভোটকেন্দ্রের আশপাশ এলাকা উৎসবে পরিণত হয়েছে। শীত উপেক্ষা করে সকাল থেকে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে। কোথাও কোথাও ঘণ্টা খানেক লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দেয়ার সুযোগ মিলছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভোটার বলেন, ‘অনেক দিন পর এত সুন্দর পরিবেশে ভোট দিতে পেরে খুবই আনন্দিত। এ আসনে কার জেতার সম্ভাবনা বেশি, সেই প্রশ্নের সরাসরি জবাব না দিয়ে তিনি বলেন, আমরা যে নেতাকে চেয়েছিলাম, তিনি এবার প্রার্থী হয়েছেন। আমরা পরিবারের সবাই তাকে ভোট দিয়েছি।
নির্বাচনকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর রয়েছে। সকাল ৯টার দিকে নওয়াপাড়া পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ড শরখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দেন যশোর-৪ আসনে নৌকার মাঝি এনামুল হক বাবুল।
ভোটকেন্দ্র থেকে বেরিয়ে এনামুল হক বাবুল বলেন, ভোটের প্রচারের সময় যেভাবে মানুষের ভালোবাসা, দোয়া ও আশীর্বাদ পেয়েছি তাতে আমি শতভাগ আশাবাদী এ আসনে নৌকা জয়ী হবে। অত্যন্ত সুন্দর, সুশৃঙ্খল ও উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটগ্রহণ চলছে। ভোটারদের রায় মাথা পেতে নেব বলেন তিনি।
যশোর-৪ আসনে নৌকার এনামুল হক বাবুল ছাড়া জাতীয় পার্টির (লাঙ্গল) জহুরুল হক, বিএনএমের সুকৃতি কুমার মণ্ডল (নোঙর), তৃণমূল বিএনপির এম সাব্বির আহমেদ (সোনালী আঁশ) এবং ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী ইউনুছ আলী (মিনার), স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য ও বাঘারপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রণজিৎ কুমার রায় (ঈগল), নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।
শিরোনাম:
- সব রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখবে বাংলাদেশ: প্রধান উপদেষ্টা
- যশোর মটর পার্টস ব্যবসায়ী সমিতির নির্বাচন সংস্কার ও উন্নয়ন পরিষদের পক্ষে ২৭টি মনোনয়নপত্র ক্রয়
- ‘জুলাই বিপ্লবে আহতদের চিকিৎসায় অবহেলা বরদাস্ত করা হবে না’
- পদ্মাসেতু রেল সংযোগ প্রকল্প কোচ সংকটে শিগগিরই চালু হচ্ছে না ট্রেন চলাচল
- শব্দ থিয়েটারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী; যশোরে তিনদিনের নাট্য উৎসব হবে
- অভয়নগরে রবিউল হত্যা ওয়াহিদুলের রিমান্ড মঞ্জুর
- যশোর চেম্বার অব কমার্স সভাপতি মিজান খান ও সম্পাদক সোহান নির্বাচিত
- কেশবপুরে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের কুরআন ধরানো অনুষ্ঠান ও পরিচিত সভা