বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোরে নির্মিত দেশের বৃহত্তম ‘বঙ্গবন্ধু স্মৃতি ম্যুরাল’ এক্সকেভেটর দিয়ে ভেঙ্গে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। একই সাথে শহরের বিভিন্ন স্থানে শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল-ভাস্কর্য ও শেখ হাসিনার স্মৃতিফলক ভাঙচুর করা হয়। এ সময় ‘নারায়ে তাকবির আল্লাহু আকবরসহ ফ্যাসিবাদ বিরোধী নানা স্লোগান দিয়ে গত বুধবার মধ্যরাত থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ভাংচুর করে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। তারা বলছেন, ভারতে বসে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছেন গণঅভ্যুত্থানে বিতাড়িত হাসিনা। তাকে ও তার দল আওয়ামী লীগকে কোনভাবেই পুনরুত্থানের ডালপালা মেলতে দিবেন না আন্দোলনকারীরা।
বৃহস্পতিবার বিকেল চারটা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শহরের বকুলতলা মোড়ে দেশের সর্ববৃহৎ বঙ্গবন্ধু স্মৃতি ম্যুরাল এক্সকেভেটর দিয়ে ভেঙ্গে ফেলে বিক্ষুব্ধ জনতা। এ সময় উপস্থিত ইসলামী ছাত্র মজলিসের নেতৃবৃন্দ ঘোষণা দেন ম্যুরাল স্থানে নির্মিত হবে ‘২৪ গণঅভ্যুত্থানে’ নিহত যশোরের দুই শহীদের নামে স্মৃতি ম্যুরাল। এদিকে ভাংচুর চলাকালীন ম্যুরাল চত্বরে যেমন চলছিলো ফ্যাসিবাদ-বিরোধী নানা স্লোগান অন্যদিকে বাজানো হচ্ছিলো প্রতিবাদী বিভিন্ন গান। ভাংচুর চলাকালীন ম্যুরাল প্রাঙ্গনে উৎসুক জনতার ভিড় লক্ষ্য করা যায়। যদিও গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের দিন ম্যুরালটি আংশিক ভাংচুর করে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে ইসলামিক গ্রাফিতি সেঁটে দিয়েছিলেন বিক্ষুব্ধ ছাত্র জনতা।
গণঅভ্যুত্থানে পতনের পর পালিয়ে থাকা শেখ হাসিনার অনলাইনে ভাষণের ঘোষণা দেয়ার প্রতিবাদে এই ভাংচুর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। তারা বলেন, ‘এখনো আমাদের ভাইদের রক্তের দাগ শুকায়নি। তারপরও খুনি হাসিনা প্রকাশ্যে ভাষণ দেয়ার দুঃসাহস দেখায় কিভাবে? তাই আমরা এই বাংলার মাটি থেকে ফ্যাসিবাদী সরকারের রেখে যাওয়া শেকড় উপড়ে ফেলবো।’
ইসলামী ছাত্র মজলিস যশোর শহর শাখার সেক্রেটারি আবু দারদা নাঈম বলেন, ‘শেখ মুজিবুর রহমান এই বাংলাদেশের শত্রু ছিলো। বাবার মতো মেয়েও স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থা কায়েম করেছে। আমরা শেখ হাসিনাকে উৎখাত করেছি। আমরা চায় না, এই মাটিতে আওয়ামী লীগ টিকে থাকবে। আমরা আওয়ামী লীগকে উৎখাত করেছি, এই জাতির সামনে আওয়ামী লীগ আর মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে না। সেই বিষয়টি লক্ষ্য করে আমরা অনেকদিন ধরে চেষ্টা করেছি যশোরের এই ম্যুরালটি গুড়িয়ে দিতে। আজ যশোর পৌরসভাতে যেয়ে একটি এক্সকেভেটরের আবেদন করেছিলাম। তারা আমাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে এক্সকেভেটর দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘এই স্থানে সম্পূর্ণ শিক্ষার্থীদের অর্থায়নে ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে নিহত যশোরের দুইজন শহীদ ইমতিয়াজ আহমেদ জাবির আর শহীদ আবদুল্লাহর নামে স্মৃতি ম্যুরাল নির্মাণ করা হবে।’
জেলা প্রশাসন, বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর ও জেলার মুক্তিযোদ্ধারা জানান, ২০০৯ সালের ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে শেখ মুজিবুর রহমানকে সম্মান ও শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাতে যশোরের চৌরাস্তায় মুক্তিযোদ্ধা অশোক রায় কালো কাপড়ের ওপর কাগজের বঙ্গবন্ধুর অস্থায়ী ম্যুরাল তৈরি করেন। এ অস্থায়ী ম্যুরালেই শ্রদ্ধার্ঘ অর্পণ করা হয়। বিষয়টি তৎকালীন জেলা প্রশাসক মহিবুল হককে জানানো হয়। অনুপ্রাণিত হয়ে জেলা প্রশাসক মহিবুল হক যশোরের সুধী সমাজের কয়েকজন প্রতিনিধিদের নিয়ে অস্থায়ী ম্যুরাল পরির্দশন করেন। এ সময় অভিভূত হয়ে তিনি অস্থায়ী ম্যুরালের স্থায়ী রূপ দেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। এর দু’দিন পরে ১৭ আগস্ট জেলা আইনশৃংখলা কমিটির সভায় মণিরামপুর উপজেলার তৎকালীন চেয়ারম্যান স্বপন ভট্টার্চায যশোরে ‘বঙ্গবন্ধু স্মৃতি ম্যুরাল’ স্থাপনের প্রস্তাব করেন। সর্বসম্মতিক্রমে এ প্রস্তাব গৃহীত হয়। এসময় ম্যুরাল তৈরির কার্যক্রম সম্পন্ন করতে একটি নাগরিক কমিটি ও বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করা হয়। ১৬ ফুট উচ্চতার দৃষ্টিনন্দন শৈল্পিক অবয়বের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি ম্যুরালের নকশা তৈরি করেন বুয়েটের স্থাপত্য বিদ্যা বিভাগের ছাত্রী তাসনিভা রহমান মুমু। ম্যুরাল শিল্পী হিসেবে কাজ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সহকারী অধ্যাপক আব্দুল আজিজ। ম্যুরালটি পরিপূর্ণ রূপ লাভ করে ২০১২ সালের শেষের দিকে। ম্যুরাল স্থাপনে ব্যয় হয় ২৯ লাখ ৯ হাজার ৯৫ টাকা। এ সম্পূর্ণ টাকা যশোরের ব্যবসায়ী মহল ও সাধারণ মানুষের অনুদান থেকে সংগৃহীত। ২০১২ সালের ২০ ডিসেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন।
এদিকে, গণঅভ্যুত্থানে পতনের পর পালিয়ে থাকা শেখ হাসিনার অনলাইনে ভাষণের ঘোষণা দেয়ার প্রতিবাদে বুধবার রাতে যশোরে ৭টি স্থানে শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাংচুর করা হয়। এদিন রাত সাড়ে ১১ টা থেকে শুরু করে মধ্যে রাত পর্যন্ত বিক্ষুব্ধ ছাত্র জনতা ছাতুড়ি দিয়ে ভাংচুর করেন। রাত সাড়ে ১১ টার দিকে বিক্ষুব্ধ ছাত্র জনতা প্রথমে যশোর পৌরসভার ভিতরে শেখ মুজিবর রহমানের আবক্ষ ভাস্কর্য ভাংচুর করে গুড়িয়ে দেয়। এরপর মোটরসাইকেল স্লোগান দিতে দিতে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনের শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল, জেলা পরিষদের ভিতরে ম্যুরাল, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শেখ হাসিনার স্মৃতিফলক, মণিহার বিজয় স্তম্ভের প্রাচীরে মুক্তিযুদ্ধের সময়কালের দৃশ্যপট খোদাই করা ভাস্কর্য ভাংচুর করে। সেখান থেকে বিক্ষুব্ধ জনতা সদর উপজেলা পরিষদের ভিতরে শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাংচুর করে গুড়িয়ে দেয়। এছাড়া অভয়নগর, ঝিকরগাছা, কেশবপুরে উপজেলা পরিষদের ভাস্কর্য ভাঙচুর করার ঘটনা ঘটে।
যশোর কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কাজী বাবুল হোসেন বলেন, ‘কয়েকটি স্থানে ভাংচুর হয়েছে বলে শুনেছি। কে বা কারা করেছে সেটা জানা নেই। এর বেশি কিছু বলতে চাননি তিনি।’
আর বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যশোরের আহ্বায়ক রাশেদ খানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।
শিরোনাম:
- যশোরে সরকারি গুদামে আমন ধান সংগ্রহ ব্যর্থ
- মুক্তেশ্বরী নদীর জায়গা দখল স্বীকার আদ্-দ্বীনের
- ঝড়-বৃষ্টির পূর্বাভাসে ক্ষেতের পাকা ধান নিয়ে চিন্তিত কৃষক
- ইজারাদার দুই পক্ষ আদালতে, খাস কালেকশনে পৌর কর্তৃপক্ষ
- যশোরে সাহিত্য সভা অনুষ্ঠিত
- যশোর ইপিজেড প্রকল্পের ভূমি উন্নয়নে ১৫৪ কোটি ব্যয় অনুমোদন
- যশোরে খাবারে চেতনানাশক মিশিয়ে একই পরিবারের ৫জনকে অচেতন
- চৌগাছায় আ.লীগ নেতার বিরুদ্ধে জমি দখল চেষ্টার অভিযোগ