# দর নির্ধারণের বিষয়ে ব্যবসায়ীরা না জানলেও ক্রেতারা চান দ্রুত ইলিশের দাম নির্ধারণ হোক
কাজী নূর
যশোরের বড় বাজার, রেলস্টেশন, বাবলাতলা, চুয়াডাঙ্গা স্টাণ্ডসহ বিভিন্ন বাজারে গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে সবজির দাম প্রতি কেজিতে অন্তত ১০-৫০ টাকা বেড়েছে। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মাছ ও ঝালের দাম। চাহিদা অনুযায়ী বাজারে মাছের সরবরাহ থাকলেও দাম উর্ধমুখী। তবে কমেছে সব রকম চাল ও ডিমের দাম। স্থিতিশীল রয়েছে মুরগি ও মাংসের বাজার।
এদিকে, সরকারিভাবে ইলিশের দাম নির্ধারণের উদ্যোগের বিষয়টি জানেননা ব্যবসায়ীরা। তবে তারা বলেন, ইলিশ দ্রুত পচনশীল পণ্য। সরকার এটার দাম কিভাবে নির্ধারণ করবে সে বিষয়ে তাদের কোন ধারণা নেই।
আলাপকালে ব্যবসায়ীরা জানান, কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে বাজারে সবজির সরবরাহ এমনিতে কম। তার উপর সবজির গাছ নষ্ট হয়ে যাওয়ার শংকা তো রয়েছেই।
শুক্রবার যশোর বড় বাজার ঘুরে দেখা গেছে, উচ্ছে ১০০, বেগুন ১০০, ঢেড়শ ৬০, কাকরোল ৮০, বরবটি ৮০, করলা ৬০, কাঁচা ঝাল ১২০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে কিছু সবজিতে গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে ৫০ ভাগ। গত সপ্তাহে উচ্ছে ৫০, বেগুন ৬০, ঢেড়শ ২০, কাকরোল ৪০, বরবটি ৫০, করলা ৪০, কাঁচা ঝাল ৬০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে।
অপরদিকে পেঁপে মানভেদে ২৫-৩০, পটল ৩০, কচুরমুখী ৪০, কুমড়ো ৩০, আমড়া ৪০, কলা ৪০, পুঁইশাক ২০, ধুন্দল ৩০ ও কুশি ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। জানতে চাইলে সবজি ব্যবসায়ী ফারুক হোসেন জানান, গত কয়েকদিন ধরে টানা বৃষ্টিতে বাজারে মালের আমদানি কম। যার কারণে বেশি দামে আড়ত থেকে আমাদের মাল কিনতে হচ্ছে। তিনি আশঙ্কা করে বলেন, ইতোমধ্যে বিভিন্ন অঞ্চলে নিচু জমিতে বৃষ্টির পানি জমে সবজির গাছ মরে গেছে। অতি বৃষ্টিতে ঝাল গাছও মরে যায়। এসবের প্রভাবে বাজারে কাঁচা মালের দাম বাড়তি। যা আগামী কয়েকদিনে আরো বাড়তে পারে বলে তিনি জানান। তবে আলু পেঁয়াজ আদা রসুনের স্থিতিশীলত ক্রেতাদের কিছুটা হলেও স্বস্তি দিচ্ছে।
অপরদিকে মাছের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সব রকম মাছের দাম নাগালের বাইরে। ৪ কেজি ওজনের কাতলা মাছ ৪৮০ টাকা কেজি। যা গত সপ্তাহে ছিল ২৮০ থেকে ৩২০ টাকা। ৩ থেকে সাড়ে ৩ কেজি ওজনের রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা কেজি। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ৩৫০ টাকা কেজি। পাবদা মাছ আকার ভেদে প্রতি কেজি ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। যা গত সপ্তাহের তুলনায় ২০০ টাকা বেশি। চাষের কই ২০০, বড় পাঙাশ মাছ ২০০ টাকা প্রতি কেজি। এছাড়া সব রকম মাছের দাম বেশ বাড়তি হওয়ায় অস্বস্তিতে পড়েছেন ক্রেতা সাধারণ।
এদিকে, ইলিশ মৌসুমেও বাজারে ইলিশের সরবরাহ বেশ কম। শহরের বড়বাজারের মাছবাজারে হাতে গোনা ৪ থেকে ৫ জন ব্যবসায়ী ইলিশের পসরা সাজিয়েছিলেন গতকাল। এদিন ১ কেজি ওজনের ইলিশ ২৬০০ টাকা ও ৭০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ২০০০ টাকা দরে বিক্রি হয়।
ইলিশের আকাশচুম্বি দরের বিষয়ে জানতে চাইলে মাছ ব্যবসায়ী দিলীপ বিশ্বাস বলেন, আড়ত থেকে যেমন দামে কেনা; ঠিক তেমন দামে সামান্য লাভে বিক্রি করি। তবে দাম যে অস্বাভাবিক তা তিনি স্বীকার করেন। এ সময় সরকার ইলিশের দাম নির্ধারণ করে দিতে চাইছে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন ইলিশ দ্রুত পচনশীল পণ্য। সরকার এর মূল্য কিভাবে নির্ধারণ করবে তা আমার বোধগম্য নয়। তবে তিনি এও বলেন, যদি পাথরঘাটা-চাঁদপুর, চট্টগ্রামসহ ইলিশের মোকামে পাইকারি দাম নির্ধারণ করে তাহলে বাজারে কিছুটা হলেও প্রভাব পড়বে। এ বিষয়ে ইলিশ মাছ ব্যবসায়ী আলমগীর হেসেন জানান, আমরা কেজি প্রতি ৫০/৬০ টাকা লাভ রেখে ইলিশ বিক্রি করি। তার উপর জায়গা ভাড়া, খাজনা ইত্যাদি খরচ রয়েছে। এখানে রাষ্ট্র নির্ধারিত মূল্যে ইলিশ মাছ বিক্রি অসম্ভব বলে তিনি জানান।
তবে, এ সময় নতুন উপশহর থেকে বাজার করতে আসা কলেজ ছাত্র এস আব্দুল্লাহ জানান, ইলিশের গায়ে আগুন। এর দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারি উদ্যোগ দ্রুত কার্যকর জরুরি। তাহলে হয়তো আমাদের মত ছাপোষারা বছরে দুই একদিন হলেও ইলিশ খেতে পারবো।
অপরদিকে, কয়েক সপ্তাহ ধরে মুরগি বাজার স্থিতিশীল থাকলেও বিক্রি আশানুরূপ নয় বলে বড় বাজারের মুরগী ব্যবসায়ী বিসমিল্লাহ ব্রয়লার হাউজের মালিক মিলন হাওলাদার জানান, ঈদের পর থেকে বাজারে মুরগি ক্রেতার সংখ্যা কম। আমরা রোজ ঘাটতি দিয়ে ব্যবসা করে যাচ্ছি। বর্তমানে দেশি ৫৮০, লেয়ার ৩৩০, ব্রয়লার ১৭০, সোনালী ২৭০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া চালের বাজার ঘুরে দেখা গেছে সব রকম চালের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। বর্তমানে মোটা স্বর্ণ ৫২, মোটা হীরা ৪৯ থেকে ৫০, মিনিকেট ৬৪ থেকে ৬৬, ২৮ চাল ৬০ থেকে ৬২, বাসমতি ৮২ থেকে ৮৪ টাকা বিক্রি হচ্ছে। চাল ব্যবসায়ী আলম ট্রেডার্সের মালিক বদরুল আলম বলেন, অনেকদিন চালের দাম প্রায় একই রকম রয়েছে। এর কারণ হিসেবে তিনি জানান, অন্যান্য বছরের মতো এবার মজুদদাররা চাল মজুদ করতে পারেনি। প্রশাসনের কড়া নজরদারির কারণে এটা তারা করতে পারেনি। এছাড়া অটো রাইস মিল মালিকরা ধান কম কেনাও একটি কারণ।
ডিমের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, লাল ডিম ৩৪, সাদা ৩২ এবং হাঁসের ডিম প্রতি হালি ৬৪ টাকা বিক্রি হচ্ছে। যা গত সপ্তাহের তুলনায় হালি প্রতি ৪ থেকে ৬ টাকা কম।