প্রতিবেদক
যশোর জেলা পরিষদের শতবর্ষী ভবন ভেঙে ফেলার অনুমতি দিয়েছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। ভবনটিকে অকেজো ঘোষণা করে তা নিলামে বিক্রি করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। গত ৫ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব জেসমিন প্রধানের সাক্ষরিত এক চিঠিতে এই সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে। ২০১৯ সালের ১৫ জানুয়ারি জেলা কনডেমনেশন কমিটি ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে। জেলা পরিষদ ভবন ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্তে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে সচেতন নাগরিক সমাজ।
জানা যায়, দুই বাংলার প্রথম জেলা যশোরের দ্বিতীয় প্রশাসনিক ভবন যশোর জেলা পরিষদের দ্বিতল বিশিষ্ট লাল এই ভবনটি। স্থানীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা পরিচালনার ক্ষেত্রে ১৯১৩ সালে এটি নির্মিত হয়েছিল। এটি এখন কালের সাক্ষী গর্বিত ঐতিহ্যের স্মারক। যশোরে যে ক’টি পুরনো ভবন ঐতিহ্যের স্মারক হিসেবে মাথা উঁচু করে আছে তার মধ্যে জেলা পরিষদ ভবন অন্যতম।
জেলা পরিষদের বর্তমানে দাপ্তরিক কার্যক্রম চালানো এই প্রাচীন ভবন ২০১৯ সালের ১৫ জানুয়ারি জেলা পরিষদের জেলা কনডেমনেশন কমিটরে সভায় ভবনটি পরিত্যাক্ত ঘোষণা করে। ঘোষণার পরে স্থানীয় সচেতল মহল এই প্রাচীন ভবনটি রক্ষার দাবিতে মানববন্ধন প্রতিবাদ জানায়। আন্দোলনের মধ্যে ভেঙ্গে ফেলার প্রক্রিয়া থেমে যায়। এর পর ভবনটি ভেঙ্গে ফেলার জন্য ২০২৩ সালের ৩০ অক্টোবর জেলা প্রশাসক ও জেলা পরিষদ যশোর যৌথভাবে আবারও চিঠি দেয় সংশ্লিষ্ঠ মন্ত্রণালয়ে।
সেই চিঠির পেক্ষিতে চলতি বছরের গত ৫ ফেব্রুয়ারি সংশ্লিষ্ঠ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব জেসমিন প্রধানের সাক্ষরিত এক চিঠিতে ভবনটিকে অকেজো ঘোষণা করে তা নিলামে বিক্রি করার নির্দেশ দেয়। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ‘জেলা কনডেমনেশন কমিটির সুপারিশ এবং জেলা পরিষদ যশোরের প্রস্তাবেব পেক্ষিতে যশোর জেলা পরিষদের ১৯১৩ সালের নির্মিত অতীব পুরাতন জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ জেলা পরিষদের অফিস ভবন’ পরিত্যক্ত ঘোষণা এবং ২৩ লাখ ১৩ হাজার ৮৮৭ টাকা (ভাঙ্গার খরচ বাদে) টাকার প্রাক্কলন অনুযায়ী নিলামে বিক্রয়ের প্রশাসনিক অনুমতি নির্দেশক্রমে প্রদান করা হলো।’
এদিকে, যশোরের কালের সাক্ষী গর্বিত ঐতিহ্যের স্মারক এই ভবনটি ভেঙ্গে ফেলার সিদ্ধান্তে ক্ষুদ্ধু যশোরের সচেতন মহল। যশোরের ঐতিহ্য রক্ষা সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক প্রবীণ সাংবাদিক বীরমুক্তিযোদ্ধা রুকুনউদ্দৌলাহ বলেন, ‘যশোরের রয়েছে সমৃদ্ধ ইতিহাস। এই ভবনটি যশোরের ইতিহাস ঐতিহ্যর একটি অংশ। এটা যদি ভেঙ্গে ফেলা হয়; লোকে চিনবে কি করে যশোর শহর প্রাচীন। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে যশোরের ইতিহাস, ঐতিহ্য জানার সুযোগ দিতে এই ভবনটি রাখা উচিত। কিন্তু অদূরদর্শীতা ও স্বার্থপ্রীতির কারণে আজ আমাদের ঐতিহ্যের স্মারকগুলো একের পর এক ধ্বংস করা হচ্ছে। এসময় জেলা পরিষদ ভবন ভাঙার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা না হলে বৃহৎ আন্দোলনের ডাক দেওয়ারও ঘোষণা দেন জেলার ঐতিহ্য রক্ষার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলনে ভুমিকা রাখা এই নেতা।
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব অ্যাডভোকেট মাহমুদুল হাসান বুলু বলেন, ‘দেশে শতবর্ষী ভবনগুলো হ্যারিটেজ, এই ভবনগুলো ভাঙ্গা যাবে না এটা বাংলাদেশের আইন। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রথমবার দায়িত্ব পালনের সময় ভবনটি ভাঙার টেষ্টা করে; কিন্তু যশোরবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে সেবার বন্ধ হয়। তার পরেও আবার ভাঙ্গার অনুমতি দেওয়া হলো। এই সিন্ধান্তে তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।’
এই বিষয়ে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিকুল সাংবাদিকদেও বলেন, ‘আমি এখনো চিঠি পায়নি। চিঠি না দেখে কিছু বলতে পারবো না।
তবে জেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা লুৎফর রহমান জানিয়েছেন, ‘চিঠি পেয়েছি। তবে এখনো টেন্ডার আহ্বান করা হয়নি। মিটিং হবে, তারপরে সিন্ধান্ত হবে।’