বাংলার ভোর প্রতিবেদক
দেশের চাহিদার সিংহভাগ তুলা আমদানি করতে হয়। চাহিদার তুলনায় খুবই কম পরিমাণে তুলা চাষ করেন দেশের কৃষকরা।

দেশে তুলা চাষ বৃদ্ধি করে আমদানি নির্ভরতা কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। তুল চাষে উদ্বুদ্ধ করতে চাষিদের বিজ, সার, কিটনাশকসহ প্রণোদনা দিচ্ছে তুলা উন্নয়ন বোর্ড। প্রণোদনা ও লাভজনক হওয়ায় যশোর অঞ্চলে বেড়েছে তুলার আবাদ। তবে দাম নিয়ে রয়েছে চাষিদের মিশ্রপ্রতিক্রিয়া। এবার বৃদ্ধি করে তুলার দাম নির্ধারণ করলে কৃষকরা উপকৃত হবেন। তুল চাষে কৃষকদের আগ্রহ আরও বাড়বে।

জানা যায়, এ বছর যশোর জোনের যশোর কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ-চুয়াডাঙ্গা জেলায় ২০ হাজার হেক্টর জমিতে তুলা চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ১৩ হাজার কৃষক ৩৯০ হেক্টর জমিতে তুলা চাষ করেছে। যশোর জোনে দুই হাজার ৬শ’ কৃষককে প্রণোদণার আওতায় আনা হয়েছে। এ বছর সরকারি প্রণোদনা ও আবহাওয়া অনুকূল, রোগবালাইয়ের আক্রমণ কম হওয়ায় বাম্পার ফলনে আশাবাদী চাষিরা। অন্য ফসলের তুলনায় তুলা চাষ লাভজনক। উৎপাদন খরচ বাদে তিন-চার গুণ লাভ হয়। যদিও সরকারের বেঁধে দেয়া দাম নিয়ে কৃষকদের মধ্যে মিশ্রপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। দাম বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন চাষিরা।

ঝিকরগাছা উপজেলার রঘুনাথনগর গ্রামের তুলা চাষি সাইফুল ইসলাম বলেন, এক বিঘা জমিতে তুলা চাষে ১৪-১৮ হাজার টাকা খরচ হয়। প্রতি বিঘায় খরচ বাদে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা লাভ হয়। লাভজনক হওয়ায় তুলা চাষ করছি।’ একই এলাকার তুলা চাষি আমিনুর রহমান বলেন, এ বছর ২২শতক জমিতে তুলা চাষ করেছি। সরকারি প্রনোদণার ৩০ কেজি ডিএপি, ৩৫ কেজি পটাশ, ১৪ কেজি ইউরিয়া, ৬শ’ গ্রাম বিজ ও কিটনাশক পেয়েছি। সরকারি প্রণোদনা পাওয়ায় উপকৃত হয়েছি। আবহাওয়া অনুকূল ও পোকামাকড়ের আক্রমণ কম থাকায় ভাল ফল এসেছে।’

আরেক চাষি শহিদুল ইসলাম বলেন, আমার পিতা তুলা চাষ করতেন। এখন আমি চাষ করছি। তুলা চাষে ৮ মাস সময় লাগে। বর্তমানে সরকার নির্ধারিত মূল্য প্রতিমণ ৪ হাজার টাকা। চাষ দীর্ঘমেয়াদী তাই দাম আরও বৃদ্ধি করতে হবে। নইলে কৃষকদের উপকার হবে না। তিনি আরও বলেন, তুলা চাষের একটা সুবিধা ক্ষেত থেকেই বিক্রি করা যায়। বাজারে নিতে হয় না। ক্রেতারা ক্ষেত থেকে তুলা কিনে নিয়ে যায়। বাড়ি বসেই ফসলের দাম পাই।’

যশোরের প্রধান তুলা উন্নয়ন কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, যশোর জোনের ২৬শ’ কৃষককে প্রণোদনার আওতায় এনেছি। কৃষকের মধ্যে তুলা চাষে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। অন্যবারের তুলনায় এবার ফলনও বৃদ্ধি পাবে। যশোরে ১৩ হাজার কৃষক তুলা চাষের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ১৫ হাজার করার টার্গেটে কাজ করছি।

তিনি আরও বলেন, আমদানি নির্ভরতা কমাতে হাইব্রিড জাতের তুলা চাষ ও চারা তৈরিতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করে দেশে ছড়িয়ে দিতে যৌথভাবে কাজ করছে তুলা উন্নয়ন বোর্ড ও কৃষি বিভাগ। দেশের মোট উৎপাদিত তুলার সিংহভাগ যশোর অঞ্চলের চাষিরা সরবরাহ করছে। তুলা আন্তর্জাতিক পণ্য হওয়ায় বিশ্ব বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করেই সরকার দেশের বাজারে তুলার দাম নির্ধারণ করে দেয়। এখানে সিণ্ডিকেট করার সুযোগ নেই।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, লাভজনক ফসল হওয়ায় তুলা চাষে কৃষকদের আগ্রহ বেড়েছে। সরকারিভাবে প্রণোদনা পাওয়ায় কৃষকরা উপকৃত হচ্ছে। এ অঞ্চলের চাষিদের উৎপাদিত তুলার মান খুবই ভাল। চাষ সম্প্রসারণে তুলা উন্নয়ন বোর্ডের পাশাপাশি কাজ করছে কৃষি বিভাগ।

তুলা উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল আমীন বলেন, যশোর-কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ চুয়াডাঙ্গার এই জোনে ২০ হাজার হেক্টর জমিতে তুলা চাষ হয়। মোট প্রণোদনার সিংহভাগ এই জোনেই দিয়ে থাকি। প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে, যান্ত্রিকরণ করা হচ্ছে।

ভালোমানের বিজ সরবরাহ করছি। কৃষকেরা যাতে নায্যমূল্য পায় সেই কাজটি করছে বোর্ড। লাভজনক ফসল তুলা চাষে কৃষকদের উৎসাহ বাড়াতে সব ধরনের চেষ্টা করছে তুলা উন্নয়ন বোর্ড। চলতি মৌসুমে সারাদেশে ১৭ কোটি টাকা প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। মোট প্রণোদনার সিংহভাগই যশোর জোনের তুলা চাষিরা পেয়েছেন।’

সরকারি কর্ম কমিশন সদস্য অধ্যাপক এএসএম গোলাম হাফিজ বলেন, কৃষি এবং পল্লী উন্নয়ন একটা নীতমালা রয়েছে। সেখানে তুলা চাষিদের ঋণের বিষয়ে কোন উল্লেখ নাই। তুলা চাষ যে কৃষির একটা ফসল সেটা গণ্য করা হয়নি। তুলা একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরি ফসল। এই ফসলটার উৎপাদন চাহিদার দুই শতাংশ। বাকি তুলা বিদেশ থেকে আমদানি করে। দেশে গার্মেন্টস পণ্য ৮৩ থেকে ৮৫ শতাংশ রপ্তানি করে দেশের চালিকাশক্তি ধরে রেখেছে; সেটার কাঁচামাল হলো তুলা। সেই তুলা বাংলাদেশে উৎপাদন হয় না। তাই সরকারের কাছে আমার পরামর্শ কৃষি ঋণের নীতিমালা পরিবর্তন করে তুলা চাষিদের জন্য আলাদা একটি ঋণের ব্যবস্থা করা। যাতে তুলা চাষের এলাকা বাড়ে, উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।

Share.
Leave A Reply Cancel Reply
Exit mobile version