# হাইকোর্টের রিটে ঝুলে গেছে ডিলারশীপ বাতিল প্রক্রিয়া
শেখ জাফি
যশোর পৌর এলাকায় আওয়ামী লীগ অনুসারী ১২টি ওএমএস ডিলার নিয়োগ বাতিলের উদ্যোগ নিয়েছে খাদ্য অধিদপ্তর। ওই স্থানে নতুন ডিলার নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। বিজ্ঞাপনের প্রেক্সিতে এবার নতুন ডিলারশীপের জন্য আবেদন পড়েছে ২৪৩টি। প্রত্যেকটি ডিলারের বিপরীতে গড়ে আবেদন পড়েছে ২০টি। আবেদনকারীদের অধিকাংশ বিএনপি ও জামায়াতের অনুসারী ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত। নতুন আবেদনগুলো মূল্যায়ন করছে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস। প্রাথমিক যাচাই বাচাই শেষে লাটলির মাধ্যমে ওএমএস ডিলারশিপ নির্ধারণ করা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সেফাউর রহমান। তবে ওএমএস ডিলারদের পক্ষ থেকে হাইকোর্টে রিট করায় নতুন ডিলারশিপ নিয়োগ প্রক্রিয়া ঝুলে গেছে। রিটের শুনানি শেষে ওএমএস ডিলারশিপ বাতিলের আদেশ স্থগিতসহ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সারা দেশের পূর্বের ডিলারগনকে বহাল রাখার আদেশ দিয়েছে হাইকোর্টে।
জানা য়ায়, নিম্ন আয়ের মানুষকে স্বল্প মূল্যে খাদ্য সহায়তা প্রদান এবং বাজার দর স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে পাবলিক ফুড ডিস্ট্রিবিউশনের আওতায় খোলা বাজারে খাদ্য শস্য বিক্রয় (ওএমএস) কার্যক্রমে চাল ও আটা বিক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সেই অনুযায়ী সারা দেশে ডিলার নিয়োগের মাধ্যমে স্বল্প মূল্যে অসহায় ও দরিদ্র মানুষ চাল ও আটা ক্রয় করে আসছে। সরকারি বেঁধে দেওয়া দরে ডিলাররা জনপ্রতি ৫ কেজি আটা (প্রতি কেজি ২৪ টাকা) ও ৫ কেজি চাল (প্রতি কেজি ৩০ টাকা) বিক্রি করছেন। ডিলাররা ৫ দিন নিয়মিত খাদ্যপণ্য বিক্রি করেন। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দলীয় বিবেচনায় যশোর জেলায় ৪২জন ডিলার নিয়োগ দেয়া হয়। এরমধ্যে যশোর পৌর এলাকায় ১২টি ওএমএস ডিলার দেয়া হয়। তারা হলেন, শহরের পূর্ব বারান্দীপাড়া ঢাকা রোড এলাকায় আবুল কাশেম বাবু, পূর্ব বারান্দী সরদারপাড়ায় হুমায়ুন কবির নাহিদ, ঘোপ সেন্ট্রাল রোডে রবিউল ইসলাম, হাটখোলা রোডে শ্যামল কুমার সাহা, পুরাতন কসবা আবদুল আজিজ রোডে হাসান ইকবাল, খড়কি কবরস্থান এলাকায় রোকন ব্যাপারী, ষষ্ঠীতলা মুজিব সড়কে লাইজুজ্জামান, শংকরপুর চোপদারপাড়া আকবরের মোড়ে বাহাউদ্দিন, রেল রোড চার খাম্বার মোড়ে তোতা মিয়া, বেজপাড়া গুলগুল্লার মোড়ে গোলাম মোস্তফা, বকচর হুশতলা খুলনা রোডে সালাউদ্দিন, ঝুমঝুমপুরের বিসিক এলাকার নিতাই চন্দ্র সাহা। সম্প্রতি খাদ্য মন্ত্রণালয় সব চলমান ডিলারদের নিয়োগ বাতিল করে নতুন ডিলার নিয়োগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। গত ২৩ অক্টোবর জেলা ওএমএস কমিটির সভায় নতুন করে এসব ডিলারশিপ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এ লক্ষ্যে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দপ্তর থেকে ২৪ অক্টোবর ডিলার নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। ৪ নভেম্বর ফরম জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ছিল। ডিলারশিপের জন্য আগ্রহী ২৪৩ জন আবেদন জমা দিয়েছেন বলে জানা গেছে। তাদের মধ্য থেকে বাছাই করে নতুন ডিলার নিয়োগ করা হবে বলে জানিয়েছে জেলা খাদ্য বিভাগ।
খাদ্য বিভাগের তথ্যমতে, যশোরে পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে ১২ ডিলার নিয়োগের বিপরীতে আবেদন পড়েছে ২৪৩টি। শহরের পূর্ব বারান্দীপাড়া ঢাকা রোড (ফুলতলা-বটতলা) এলাকায় বিক্রয় কেন্দ্রে ডিলারশিপপের জন্য আদেন করেছেন ৩৩ জন, ঘোপ সেন্ট্রাল রোডে(রাজুর মোড়, ছোট বউ বাজার) এলাকায় বিক্রয় কেন্দ্রে ডিলারশিপপের জন্য আদেন করেছেন ১৫জন, খালধার রোড়-লোন অফিস পাড়া বিক্রয় কেন্দ্রে ডিলারশিপপের জন্য আদেন করেছেন ২৫ জন, ঘোপ জেলখানা রোড় এলাকায় বিক্রয় কেন্দ্রে ডিলারশিপপের জন্য আদেন করেছেন ১১ জন, কাঁঠালতলা এলাকায় বিক্রয় কেন্দ্রে ডিলারশিপপের জন্য আদেন করেছেন ২৩ জন, এম এম কলেজ খড়কি কবরস্থান এলাকায় বিক্রয় কেন্দ্রে ডিলারশিপপের জন্য আদেন করেছেন ২৩জন, পিটিআই রোড় এলাকায় বিক্রয় কেন্দ্রে ডিলারশিপপের জন্য আদেন করেছেন ১৯ জন, তেতুলতলা মোড় এলাকায় বিক্রয় কেন্দ্রে ডিলারশিপপের জন্য আদেন করেছেন ১৬জন, টিবি ক্লিনিক মোড় এলাকায় বিক্রয় কেন্দ্রে ডিলারশিপপের জন্য আদেন করেছেন ৩০ জন, বেজপাড়া গুলগুল্লার মোড়ে এলাকায় বিক্রয় কেন্দ্রে ডিলারশিপপের জন্য আদেন করেছেন ২১ জন, বকচর হুশতলা খুলনা রোডে এলাকায় বিক্রয় কেন্দ্রে ডিলারশিপপের জন্য আদেন করেছেন ১৭ জন, ঝুমঝুমপুরের বিসিক এলাকায় বিক্রয় কেন্দ্রে ডিলারশিপপের জন্য আদেন করেছেন ১০ জন। আবেদনকারীদের অধিংকাই বিএনপি ও জামায়তের অনুসারী ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত বলে জানাগেছে।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সেফাউর রহমান জানান, শহরের গরীব মানুষের মাঝে খাদ্যপণ্য বিক্রির কার্যক্রম যাতে ব্যহত না হয়, সেজন্য নতুন ডিলার নিয়োগের আগ পর্যন্ত পুরোনো ডিলারশিপ এখনও বাতিল হয়নি।
তিনি জানান, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ওই জারিপত্রের বিরুদ্ধে কয়েকজন ওএমএস ডিলার হাইকোর্টে রিট করেন। ১২ নভেম্বর হাইকোর্টে রিটের শুনানি শেষে ওএমএস ডিলারশিপ বাতিলের আদেশ স্থগিতসহ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সারা দেশের পূর্বের ডিলারগনকে বহাল রাখার আদেশ দেন হাটকোর্টে। তবে এ রিটের বিপক্ষে দ্রুত আবেদন করা হবে।
তিনি আরও বলেন, নতুন আবেদনগুলো জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস মূল্যায়ন করছে। নীতিমালা অনুযায়ী যোগ্য আবেদনগুলোকে লাইসেন্স দেয়ার জন্য বিবেচনা করা হবে। প্রাথমিক যাচাই বাচাই শেষে লাটলির মাধ্যমে ওএমএস ডিলারশিপ নির্ধারণ করা হবে। খুব শিগগির নতুন ডিলার নিয়োগ কাজ শেষ হবে বলে জানিয়েছেন জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সেফাউর রহমান।