বাংলার ভোর প্রতিবেদ
যশোর বিমানবন্দর হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা ছাত্র আন্দোলন তীব্রতর হচ্ছে। স্কুলের বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা অভিযুক্ত ২ শিক্ষকের পদত্যাগ দাবি করে এক দফার আল্টিমেটাম দিয়েছে।
এদিকে একজন প্রাক্তন শিক্ষার্থীর আবেদনের প্রেক্ষিতে স্কুলের প্রধান শিক্ষক মনোজ কুমার হালদার ও সহকারী শিক্ষক শফিকুজ্জামানের বিরুদ্ধে উত্থাপিত সকল অনিয়ম, দুর্নীতি ও নিয়োগের বৈধতা তদন্তে তিন সদস্য বিশিষ্ট বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা শিক্ষা অফিস। আগামী ৫ সেপ্টেম্বর তদন্ত কমিটি অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকসহ ২ জন শিক্ষক ও আবেদনকারীসহ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসারের কার্যালয়ে ডেকে পাঠিয়ে চিঠি ইস্যু করেছেন সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার রবিউল ইসলাম। তদন্ত কমিটির সদস্যরা হচ্ছেন যশোর সদর উপজেলার একাডেমিক সুপার ভাইজার এস এম আশিক আহমেদ, ছাতিয়ানতলা-চুড়ামনকটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফজলুর রহমান ও মুন্সি মেহেরুল্লাহ একাডেমির প্রধান শিক্ষক আবু কালাম।
সূত্র বলছে, ২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর জালিয়াতির মাধ্যমে মনোজ কুমার হালদারকে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ দেয় তৎকালীন স্কুল ম্যানেজিং কমিটি। নিয়োগ পরীক্ষার আগেই তৎকালীন উপজেলা শিক্ষা অফিসার কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীরের মাধ্যমে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মাসুদুল হক প্রার্থী মনোজ কুমারের সঙ্গে ১২ লাখ টাকার চুক্তিতে নগদ ৮ লাখ টাকা গ্রহণ করে নিয়োগ চূড়ান্ত করেন। একই ভাবে স্কুলের সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত শফিকুজ্জামানের নিয়োগও চরম ভাবে ত্রুটিপূর্ণ। অভিযোগ হচ্ছে ২০১৫ সালের ২ অক্টোবর জাতীয় দৈনিক অগ্নিশিখা ও স্থানীয় দৈনিক সমাজের কাগজে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের কথা বলে ওই পদে আবেদন আহবান করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, ২ আক্টোবর আন্ডারগ্রাউন্ড পত্রিকা অগ্নিশিখা প্রকাশিত হলেও মুল পত্রিকায় যশোর বিমানবন্দর হাই স্কুলের কোন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছাপা হয়নি।
গত বছর স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নিলেও প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক শফিকুজ্জামানের চরম অসহযোগিতার কারণে সেই অনুষ্ঠান শেষ পর্যন্ত ভেস্তে যেতে বসে। টিআর শফিকুজ্জামান অনুষ্ঠানের আয়োজকদের সাফ জানিয়ে দেন অনুষ্ঠানের জন্য স্কুলের কোন বেঞ্চ বা চেয়ার টেবিল ব্যবহার করা যাবে না। স্কুল থেকে বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে হলে তার জন্য পেমেন্ট করতে হবে।
প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের এই মিলন মেলাকে ঘিরে স্কুল কর্তৃপক্ষের এই অসহযোগিতার কারনে ছাত্ররা সে সময় চরম ভাবে ফুসে ওঠে। শুরু হয় ছাত্র আন্দোলন। সেই আন্দোলনের অংশ হিসেবে প্রাক্তন ছাত্র শরিফুল ইসলাম গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর প্রধান শিক্ষক মনোজ কুমার হালদার ও সহকারী শিক্ষক শফিকুজ্জামানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তের দাবি জানিয়ে রিখিত আবেদন করেন।
সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে গত বছরের ২৯ অক্টোবর শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এর পক্ষে শিক্ষা কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক পত্রে জেলা শিক্ষা অফিসারকে উক্ত অভিযোগ তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেন। যার স্মারক নং- ৩৭.০২.০০০০.১০৭.৩১.৩০৯.২০২৩-৩৩৩৬.।
সেই পত্রের আলোকে গত ১৬ এপ্রিল সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার রবিউল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক পত্রে উক্ত অভিযোগ তদন্তের জন্য তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। যার স্বারক নং- উমাশিআ/সদর/যশোর/২৪-১৩৬।
ওই কমিটিকে আগামি ৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ঘটনা তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তারই প্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটির আহবায়ক উপজেলা একাডেমিক সুপার ভাইজার এস এম আশিক আহমেদ গত ২৭ আগস্ট স্বাক্ষরিত এক পত্রের মাধ্যমে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক মনোজ কুমার হালদার ও সহকারী শিক্ষক শফিকুজ্জামান কে আগামি ৫ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ তার দপ্তরে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন । যার স্বারক নং- উমাশিঅ/সদর/যশোর-২৪-২৭৯।
এদিকে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক মনোজ কুমার হালদার ও সহকারী শিক্ষক শফিকুজ্জামানের অপসারন ও বিচারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা তাদের আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন।