বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোরের শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র (বালক) থেকে এক বন্দি কিশোর পালিয়ে গেছে।

১৫ বছর বয়সী ওই কিশোর বুধবার (১০ ডিসেম্বর) দুপুরের দিকে অভ্যন্তরীণ সীমানা প্রাচীর ডিঙিয়ে পালিয়ে যায়। বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত শিশুটির কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।

পালিয়ে যাওয়া কিশোর নড়াইল সদর উপজেলার গোবরা গ্রামের বাসিন্দা। গত ৯ ডিসেম্বর একটি চুরির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে সে ওই কেন্দ্রে প্রবেশ করে। এই ঘটনায় যশোর কোতয়ালী মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ। শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রটি অবস্থিত যশোর সদর উপজেলার পুলেরহাট এলাকায়।

কেন্দ্র সূত্র ও থানা সূত্রে জানা গেছে, বুধবার সকালে অভ্যন্তরীণ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট চলছিলো। সেখানে অনেকেই খেলছিলো; আবার অনেকেই দর্শক ছিলেন। দুপুর ১২ টার দিকে খেলা শেষে খাবারের সময়ে ওই কিশোরকে পাওয়া যায়নি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, খেলাধুলার কোন এক পর্যায়ে সে কৌশলে কেন্দ্রের অভ্যন্তরীণ সীমানা প্রাচীর ডিঙিয়ে পালিয়ে যায়।

দায়িত্বরত কর্মীরা বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে টের পাননি। পরে গণনার সময় একজন অনুপস্থিত পাওয়া গেলে খোঁজ নিয়ে নিশ্চিত হয় যে কিশোরটি কেন্দ্র থেকে পালিয়ে গেছে। তবে সে কীভাবে পালাতে সক্ষম হলো, নিরাপত্তায় কোনো ঘাটতি ছিল কিনা, তা খতিয়ে দেখতে ইতোমধ্যে অভ্যন্তরীণ তদন্ত শুরু করেছে কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ।

শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের সহকারী পরিচালক মঞ্জুরুল হাসান বলেন, ‘খেলাধুলা শেষে একজনকে কম পাওয়ায় খোঁজাখুঁজি করে পাওয়া যায়নি। এমনকি সিসি ক্যামেরায়ও তার পালানোর কোন দৃশ্য ধরা পড়েনি। ধারণা করছি, প্রাচীর ডিঙিয়ে পালিয়ে গেছে। ছেলেটি নতুন এসেছে। এই ঘটনায় থানায় জিডি করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ওই কিশোরের পরিবারকে বিষয়টি সম্পর্কে জানানো হয়েছে। তারা বলছে বাড়িতে আসলে কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেয়া হবে। বন্দি পালিয়ে গেলেও নিরাপত্তা ঘাটতি নেই বলে দাবি করেন এই কর্মকর্তা।

যশোর কোতয়ালী মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কাজী বাবুল হোসেন বলেন, ‘পালানো বন্দিকে আটক করতে প্রয়োজনীয় আইনগত প্রক্রিয়া ও অনুসন্ধান শুরু করা হয়েছে। এছাড়া আশপাশের এলাকা, পরিবহন স্ট্যান্ড ও সম্ভাব্য লুকিয়ে থাকার স্থানগুলোতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। বিষয়টি তারা গুরুত্বের সাথে দেখছে।’

প্রসঙ্গত, এই শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রগুলোকে আগে কিশোর সংশোধন কেন্দ্র বলা হত, পরে সে নাম পরিবর্তন করা হয়। মূলত বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে অভিযুক্ত শিশু কিশোরকে এখানে সাজার পরিবর্তে সংশোধনের জন্য ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত রাখা হয়। বাংলাদেশে মোট তিনটি শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র আছে। এর মধ্যে টঙ্গি ও যশোরের দুটি ছেলেদের জন্য এবং গাজীপুরে মেয়েদের জন্য একটি শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র রয়েছে। যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে এই মুহূর্তে ২৬২ জন শিশু-কিশোর রয়েছে।

এর আগেও অন্তত ৭ থেকে ৮ বার বন্দি পালানোর ঘটনা ঘটে এ কেন্দ্রটিতে। কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রায় দেড় বছর পর গত বুধবার কোন বন্দি পালানোর ঘটনা ঘটলো।

২০২০ সালের ৬ ডিসেম্বর একসাথে জানালা ভেঙ্গে ৮ কিশোর পালানোর ঘটনা ঘটে। একই বছরে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ১৩ আগস্ট কেন্দ্রটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ১৮ বন্দি কিশোরের ওপর নির্যাতন চালান বলে অভিযোগ ওঠে।

এতে তিন কিশোর নিহত হয় এবং ১৫ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এ ঘটনায় ৫ কর্মকর্তা ও ৭ বন্দি কিশোরের নামে মামলা হয়। এই ঘটনায় নানা সমালোচনা সৃষ্টি হয় কেন্দ্রটি নিয়ে।

Share.
Leave A Reply Cancel Reply
Exit mobile version