বাংলার ভোর ডেস্ক:
চেন্নাই সুপার কিংসের শুরু থেকে অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি। কিন্তু তিনি আর কতদিন থাকবেন? তার পরে তো এই দলটির নেতৃত্ব নিতে হবে কাউকে না কাউকে। সে লক্ষ্যে ২০২২ সালে রবিন্দ্র জাদেজার কাঁধে নেতৃত্ব তুলে দেয়া হয়। কিন্তু অধিনায়ক হয়েই জাদেজা নিজে যেমন হারিয়ে যেতে বসেছিলেন, তেমনি দলকেও হারাতে বসেছিলেন তিনি। বলা হয়, চেন্নাই কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয় জাদেজার।
যার ফলে টুর্নামেন্টের মাঝপথেই অনভিপ্রেত পরিস্থিতিতে নেতৃত্বের দায়িত্ব ফিরিয়ে নিতে হয়েছিল ধোনিকে। তবে চেন্নাই সুপার কিংস তখন থেকেই পরের অধিনায়ক ঠিক করার দিকে নজর দেয়। ওই সময়ই তরুণ ওপেনিং ব্যাটার রুতুরাজ গায়কোয়াড়কে গড়ে তুলতে শুরু করেন ধোনি। গত দু’বছর ধরে ধোনির ছায়ায় অধিনায়ক হিসেবে নিজেকে তৈরি করেন রুতুরাজকে।
২০২৩ আইপিএলেও চেন্নাইকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ধোনি। দলকে চ্যাম্পিয়নও করেছিলেন; কিন্তু নেপথ্যে পরবর্তী অধিনায়ককে তৈরি করার কাজও এগিয়ে চলেছিলো তখন। রবিন্দ্র জাদেজার সঙ্গে চেন্নাই কর্তৃপক্ষের দূরত্ব মেটানোর দায়িত্ব ধোনি নিলেও তাকে আর অধিনায়ক করার কথা ভাবা হয়নি। কারণ ২০২২ সালেই রুতুরাজকে বার্তা দেয়া হয় নিজেকে তৈরি করার জন্য। ধোনি নিজেই দায়িত্ব নেন রুতুরাজকে তৈরি করার।
সে কথা নিজেই জানিয়েছেন চেন্নাইয়ের বর্তমান অধিনায়ক। রুতুরাজ বলেন, ‘২০২২ সালের সেই দিনটা আমার এখনও মনে রয়েছে। যে দিন আমাকে প্রথমবার নেতৃত্বের কথা বলা হয়েছিল। বলা হয়- পরের বছর নয়, সম্ভবত তারপর থেকে তোমাকে নেতৃত্ব দিতে হবে। সে ভাবে নিজেকে প্রস্তুত কর। তখন থেকে নিজের মতো করে প্রস্তুতি শুরু করি। সত্যিই আমার কাছে নেতৃত্ব আসবে, না অন্য কাউকে বেছে নেওয়া হবে, সেটা নিয়ে তেমন ভাবিনি। দল থেকে যেটা বলা হয়েছিল, সেটাই শুনেছিলাম।’
কে আপনাকে প্রথম নেতৃত্বের কথা বলেছিলেন? রুতুরাজ বলেন, ‘সত্যি বলতে, ধোনি ভাই আমাকে প্রথম বলেন। খুব বেশি কথা হয়নি তখন। খুব সাধারণ আলোচনার সময় কথাটা বলেছিলেন। একদিন অনুশীলনের মাঝে এগিয়ে এসে কথাটা আমাকে বলেছিলেন ধোনি ভাই। শুনে ভাল লেগেছিল। একই সঙ্গে তার মতো ক্রিকেটারের জুতোয় পা গলানোর বিষয়টাও মাথায় এসেছিল। প্রাথমিকভাবে শুধু ভেবেছিলাম, দায়িত্ব পেলে দলের এতদিনের সংস্কৃতিকে বজায় রাখার চেষ্টা করব।’
ধোনি ছাড়াও চেন্নাই কোচ স্টিফেং ফ্লেমিংও নেতৃত্ব নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন রুতুরাজকে। তিনি বলেছেন, ‘গত মৌসুমে কোচ ফ্লেমিং আমার সঙ্গে আলোচনা করতেন। নেতৃত্বের নানা দিক নিয়ে আলোচনা করতেন। কি করা উচিত, কি নয় বোঝাতেন। বোলিং পরিবর্তন, ফিল্ডিং সাজানোর কৌশল নিয়ে আলোচনা করতেন। প্রতিটা ম্যাচের পর আমাকে নিয়ে আলাদা করে বসতেন।’
এবার আইপিএলে অধিনায়কদের ছবি তোলার আগের দিন চেন্নাইয়ের নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ান ধোনি। নতুন অধিনায়ক হিসেবে ঘোষণা করা হয় রুতুরাজের নাম। কেমন অভিজ্ঞতা হচ্ছে অধিনায়ক হিসাবে? রুতুরাজ বলেন, ‘আমি মনে করি না অধিনায়কের আলাদা কোনও চরিত্র থাকা জরুরি। আমাকে যেগুলো বলা হয়েছে, সেভাবেই কাজ করার চেষ্টা করছি। ধোনি ভাই আর ফ্লেমিং স্যরের কথা অনুসরণ করছি। দলের সংস্কৃতি ধরে রাখার চেষ্টা করব। কারণ ওই সংস্কৃতি আমাদের সাফল্য দিয়েছে। বিশ্বাস করি আগামী দিনেও দেবে। আমাদের সংস্কৃতির কোনও কিছু পরিবর্তন করতে চাই না। আমি যেমন সিদ্ধান্ত নেব, তেমনই সতীর্থদের যথেষ্ট স্বাধীনতা দেওয়ার চেষ্টা করব। যখন থেকে চেন্নাইয়ের হয়ে খেলছি, এমনই দেখে এসেছি। এই দলে কারও উপর কিছু চাপিয়ে দেওয়া হয় না। যে পরিবেশ আমি উপভোগ করেছি এত দিন, চাইব সেটাই বজায় থাকুক।’
আইপিএলের শুরুটা ভাল হয়নি চেন্নাইয়ের। প্রথম দু’টি ম্যাচ জেতার পর দু’টি ম্যাচ হারতে হয়েছে। তাহলে কি সব কিছু ঠিকঠাক হচ্ছে না? রুতুরাজ বলেছেন, ‘আইপিএলের মতো প্রতিযোগিতায় কখনও ১৪টা ম্যাচই জেতা সম্ভব নয়। সাফল্য এবং ব্যর্থতা দুই থাকবে। চারটা, পাঁচটা, ছ’টা বা সাত ম্যাচ হারার জন্য প্রস্তুত থাকতে হয়। তার মানে এই নয় আমরা চেষ্টা করব না। প্রতিটা ম্যাচ জেতার চেষ্টা করব মাঠে নেমে। কখনও প্রতিপক্ষ অনেক ভাল খেলে। কখনও টস গুরুত্বপূর্ণ হয়ে যায়। কখনও সুযোগ কাজে লাগানো যায় না ঠিক মতো। এ সব খেলায় থাকবেই। কিন্তু চেষ্টা থামালে চলবে না। এখানে প্রতিটা দলই যথেষ্ট শক্তিশালী। কাউকে হালকা ভাবে নেওয়া যায় না। বিশেষ করে ঘরের মাঠে সব দলকেই হারানো বেশ কঠিন।’
ধোনির দেখানো পথেই আগামী দিনে চলতে চান রুতুরাজ। যতদিন ধোনি খেলবেন, তত দিন মাঠেও তার পরামর্শ নেবেন তিনি। আরও ভাল করে নেতৃত্বের পাঠ নিতে চান তিনি। মাঠেও দেখা গেছে, ধোনি কিভাবে রুতুরাজকে গাইড করছেন। পরামর্শ দিয়ে সব সময়ই ধোনি রুতুরাজকে নেতৃত্ব শেখাচ্ছেন।