বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যৌতুক না দেওয়ায় অন্তঃসত্বা স্ত্রীকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িত প্রধান আসামী নিহতের ঘাতক স্বামী ইব্রাহিম প্রধানিয়াকে (৩৮) যশোরের বেনাপোল থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৬। শুক্রবার (১০মে) মধ্যেরাত দেড়টার দিকে বেনাপোল ডিগ্রী কলেজ এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
ঘাতক ইব্রাহিম প্রধানিয়া চাঁদপুর জেলার মতলব দক্ষিণ উপজেলার বকচর এলাকার আব্দুল মোতালেবের ছেলে। স্ত্রীকে হত্যার পর গ্রেফতার এড়াতে তিনি বেনাপোল এলাকায় আত্মগোপনে ছিলেন।
র্যাব-৬ যশোর ক্যাম্পের অধিনায়ক মেজর মো. সাকিব হোসেন জানান, গত ১০ এপ্রিল ঈদুল ফিতরের দিন চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ এলাকায় স্বামী কর্তৃক নিজ স্ত্রী খাদিজা আক্তারকে (২৩) শারীরিক নির্যাতন পূর্বক শরীরে ডিজেল ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করে। চাঞ্চল্যকর ও স্পর্শকাতর এই হত্যাকান্ডের বিষয়ে নিহত গৃহবধূর বাবা বাদী হয়ে মতলব দক্ষিণ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত গৃহবধূর শাশুড়ী মামলা রুজুর পরপরই গ্রেফতার হলেও মূল অপরাধী ঘাতক স্বামী ঘটনার পরপরই নিজেকে আত্মেগোপন করে। ঘটনাটি স্পর্শকাতর ও হৃদয় বিদারক হওয়ায় সারাদেশে ব্যাপক আলোরণ সৃষ্টি হয়। আলোচিত হত্যাকান্ডের মূল অপরাধী ঘাতক স্বামীকে গ্রেফতারের জন্য অত্র মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা র্যাব-৬, যশোর ক্যাম্পের সহযোগীতা চান। এই ঘটনার মূল পলাতক আসামিকে গ্রেফতারে র্যাব-৬ যশোর ক্যাম্প গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করে।
এরপর গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শুক্রবার মধ্যেরাত দেড়টার দিকে বেনাপোল ডিগ্রী কলেজ এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রধান আসামি ঘাতক স্বামী ইব্রাহিম প্রধানিয়াকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় র্যাব।
অধিনায়ক জানান, মামলা সূত্রে জানা যায় যে, হত্যাকান্ডের শিকার গৃহবধূ খাদিজা আক্তারের সাথে ইব্রাহিম প্রধানিয়ার পারিবারিক ভাবে গত চার বছর পূর্বে বিবাহ হয় এবং তাদের পরিবারে দুইটি পুত্র সন্তান আছে। গত এক বছর যাবৎ স্ত্রীকে তার বাবার বাড়ি থেকে যৌতুক হিসেবে ফার্নিচার নিয়ে আসার জন্য তার স্বামী ও শাশুড়ী বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করতো এবং মাঝে মধ্যে শারীরিক নির্যাতন করতো। ওই গৃহবধূর বাবা হতদরিদ্র হওয়ায় ভিকটিমের শ্বশুর বাড়িতে তাদের দাবীকৃত ফার্নিচার দিতে না পারায় গৃহবধূকে শারীরিক নির্যাতন করার ফলে এলাকায় স্থানীয় মেম্বার ও মুরব্বীদের নিয়ে একাধিকবার সালিশী বৈঠক করা হয়। সালিশী বৈঠকে ওই গৃহবধূর স্বামী ও শাশুড়ী গৃহবধূর সাথে ভালো ব্যবহার করার অঙ্গিকার করলেও পরবর্তীতে তারা আবারো বিভিন্ন অযুহাতে তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতো। গত ঈদুল ফিতরের দিন রাতে ঈদ উপলক্ষে বাড়িতে কোন ধরনের ঈদের বাজার না করার বিষয়কে কেন্দ্র করে গৃহবধূকে তার স্বামী ও শাশুড়ী মিলে নির্যাতন করে এবং এক পর্যায়ে বাড়িতে থাকা ডিজেল ওই গৃহবধূর শরীরে ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় গৃহবধূর ডাক-চিৎকারে প্রতিবেশীরা এসে আগুন নিভায়। কিন্তু ততক্ষণে তার প্রায় সম্পূর্ণ শরীর আগুনে পুড়ে যায়। পরবর্তীতে অগ্নিদগ্ধ ওই স্ত্রীকে শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিট, ঢাকায় চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয় এবং চিকিৎসারত অবস্থায় ১২ এপ্রিল মধ্যরাতে গৃহবধূ মারা যান।
তিনি আরও জানান, গ্রেফতারকৃত আসামিকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে এবং সে আরো জানায়, গ্রেফতার এড়ানোর জন্য যশোরের বেনাপোল ডিগ্রী কলেজ এলাকায় বসবাসরত তার আত্মীয়ের বাড়িতে নিজেকে আত্মগোপনে রেখেছিল। গ্রেফতারকৃত আসামীকে অত্র মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে।