বাংলার ভোর প্রতিবেদক
রক্তমাখা স্কুলড্রেস, পাশে পড়ে ছিলো নতুন বইগুলো। যেন সদ্য সাজানো ভবিষ্যতের প্রতিচ্ছবি। কিন্তু সবকিছু থেমে গেল এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায়। বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে যশোর-ঝিনাইদহ মহাসড়কের চুড়ামনকাটি বাজার এলাকায় ঘটে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। রাস্তা পার হওয়ার সময় রূপসা পরিবহনের একটি বাসের ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই গুরুতর আহত হয় উর্মি খাতুন (১৪)। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
উর্মির নিথরদেহ ট্রলি করে হাসপাতালের মর্গে নিয়ে যাচ্ছে স্বেচ্ছাসেবকরা। ট্রলির পিছু ধরে স্বজনদের চিৎকার কান্নার রোল। এ যেন নিয়তির এক নির্মম পরিহাস।
নিহত উর্মি যশোর সদর উপজেলার বিজয়নগর গ্রামের রবিউল ইসলামের মেয়ে। সে ছাতিয়ানতলা মাদ্রাসার নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।
হাসপাতাল চত্বরে প্রত্যক্ষদর্শী ও স্বজনরা জানান, উর্মি প্রতিদিনের মতো আজও বই হাতে মাদ্রাসায় যাচ্ছিল। হঠাৎ একটি বাস বেপরোয়া গতিতে এসে ধাক্কা দেয়। মাথা ও পায়ে গুরুতর আঘাত পেয়ে সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।
এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সহপাঠী, শিক্ষক ও প্রতিবেশীরা কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। একটি সম্ভাবনাময় জীবন অকালে থেমে গেল শুধু মাত্র বেপরোয়া গাড়ি চালনার কারণে।
স্থানীয়রা দ্রুত ওই রূপসা পরিবহনের বাস ও চালকের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছে। ঘাতক বাসটাকে হাইওয়ে পুলিশ কালিগঞ্জ বারোবাজার এলাকা থেকে আটক করেছে। তবে পালিয়ে গিয়েছে চালক ও হেলপার।
উর্মির চাচাতো ভাই নয়ন হাসান অসহায়ের মতো বলছিলেন, সকালেও আমাদের বোনটা হাসিমুখে বাড়ি থেকে বের হলো, কে জানতো আর ফিরে আসবে না। ঘাতক বাস চালক ও হেলপারের বিচার দাবি করেন তিনি।
ছাতিয়ানতলা মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল হাফিজুর রহমান বলেন, আগামিকাল এসএসসি পরীক্ষা শুরু। আজ (বুধবার) সকাল সকাল স্কুল ছুটি হয় ১২টার দিকে। হঠাৎ শুনি মাদ্রাসার এক শিক্ষার্থী সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে। আমরা তাৎক্ষণিক স্থানীয়দের সহযোগিতায় তাকে উদ্ধার করে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করি। অনেক চেষ্টা করেছি মেয়েটাকে বাঁচানোর জন্য। উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানোর প্রস্তুতিও চলছিলো। কিন্তু সময় দিলো না। উর্মিকে আমরা বাঁচাতে পারলাম না।
তিনি আরও বলেন, আমরা এখন আমাদের মেয়ে হত্যার নায্য বিচার চাই। আর যেন কোনো মায়ের কোল এভাবে খালি না হয়। অকালে ঝরে না পড়ে কোনো সম্ভাবনাময় জীবন।
এদিকে, সড়ক নিরাপত্তা ও দ্রুতগতির যানবাহনের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে এই মৃত্যু। উর্মির মতো আর কোনো শিক্ষার্থীকে যেন এমন করুণ পরিণতির শিকার না হতে হয়, সেই দাবিই এলাকাবাসীর মুখে মুখে।