মনিরুজ্জামান মনির
যশোর সদর উপজেলার লেবুতলা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলিমুজ্জামান মিলন ও তার ভাই তারিকুজ্জামান রিপন ছিলেন এলাকার ত্রাস। তাদের নেতৃত্বে গড়ে উঠেছিল ত্রাসের রাজত্ব। বোমাবাজি, চাঁদাবাজি, মানুষ জখম, জমি দখল, মিথ্যা নাশকতা মামলায় মানুষকে ফাঁসিয়ে ফায়দা লুটতেন তারা।
সাবেক এমপি কাজী নাবিল আহমেদের আস্থাভাজন পরিচয়ে এলাকায় নানা অপকর্মের মাস্টারমাইণ্ড হিসেবে অবতীর্ণ হন মিলন। তার অপকর্ম বাস্তবায়নে ছিল নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী। যার সদস্য ছিলেন এনামুল মাস্টার, মিলন পোদ্দার, আকরাম, সঞ্জয় কর্মকার, জয়নাল মেম্বর, এমদাদুল, বাক্কার, তহিদুল, বুলু, ছাক্কার, সরোয়ার, হবিবার, চেয়াম্যানের ভাই রিপন, জালাল, হেকমত, শরিফুল গাজী, সাবেক ইউপি সদস্য খায়রুল, জহুরুল, মুহিনসহ আরো অনেকে। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর আলিমুজ্জামান মিলন পলাতক রয়েছেন। মিলন পালিয়ে গেলেও তার ক্যাডার বাহিনীর সদস্যরা রয়েছে বহাল তবিয়তে। ইতিমধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের কেউ কেউ মামলা করেছেন।
এ বিষয়ে আন্দোলপোতা গ্রামের বাসিন্দা মেহেদী হাসান মিন্টু জানান, মিলন চেয়াম্যানের নেতৃত্বে একটা সন্ত্রাসী বাহিনী ছিল। তার বাহিনীর সদস্যরা ২০১০ সালে জুলফিক্কার আলী ফক্কার ভাইকে রামদা দিয়ে কুপিয়ে জখম করে। শুধু তাই না পরিষদে কোন কাগজে স্বাক্ষর করতেও ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা দিতে হত।
করুনা খাতুন নামক এক নারী জানান, আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় আসার পর অধিকাংশ নিরিহ পরিবারে নির্যাতন শুরু হয়। আমার ছোট ভাই তো কোন দিন বাড়িতে আসতে পারেনি মিলন বাহিনীর নির্যাতনের ভয়ে।
লেবুতলা এলাকার আলমগীর হোসেন জানান, আওয়ামী দুঃশাসন আমলে মিলন চেয়ারম্যানের লোকজন এবং তার ভাই রিপনের অত্যাচারে আমরা ঘরে থাকতে পারিনি। সব সময় সাধারণ লোকজনের ভয়ভীতির উপর রাখতো। প্রকাশ্যে দিনের বেলায় অনেক মানুষের কাছ হতে টাকা জোর করে হাতিয়ে নিয়েছে। আমার কাছ থেকেও ৬০ হাজার টাকা নিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, মিলন চেয়ারম্যানের লোকজনের কারণে আমরা সাত বছর বাড়ি ছাড়া ছিলাম। জমি থেকে ধান কাটাসহ গোয়াল ঘর থেকে ৪টি বড় গরু খুলে নিয়ে যায়। তারপরও এদের একবার ২ লাখ, আরেকবার ৮ লাখ টাকা চাদা দেয়া লাগছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক লেবুতলা ইউনিয়নের একটি গ্রামের বাসিন্দা বিএনপির কর্মী জানান, আওয়ামী লীগের প্রোগ্রামে না যাওয়ায় মিলন চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে সরোয়ার, হবিবার, চেয়াম্যানের ভাই রিপন, ছাক্কার, তহিদুল, জালাল, বুলু, হেকমত, শরিফুল গাজী ও বাক্কার মিলে রামদা দিয়ে আমার শরীরে ১৩টি কোপ দেয়। ওই সময় আমার বাঁচার মত কোন উপায় ছিল না। কোন রকম সুস্থ হওয়ার পর ১৫ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয়।
আরেক ভুক্তভোগী জুলফিক্কার আলী জানান, মিলন চেয়ারম্যান ক্ষমতার দাপটে লেবুতলা ইউনিয়নকে কৌশলে জিম্মি করে রাখত। তার নেতৃত্বে আমাকে মারার ষড়যন্ত্র করছিল। সরোয়ার, হবিবার, চেয়াম্যানের ভাই রিপন, ছাক্কার, তহিদুল, জালাল, বুলু, হেকমত, শরিফুল গাজী ও বাক্কারসহ আরো অনেকে মিলে আমাকে রামদা দিয়ে কুপিয়ে ছিল। আমাকে আল্লাহ বাঁচিয়ে রাখছে। ২০১০ সালে দুপুরে মেয়ের বাড়িতে যাওয়ার পথে এ সন্ত্রাস বাহিনী কুপিয়ে মৃত ভেবে মাঠের মধ্যে ফেলে রেখে যায়। মামলা করলেও চেয়ারম্যানের চাপে তা উঠিয়ে নিতে হয়। তারপরও আমাদের বাড়িতে থাকতে দেয়নি। এমনকি বাড়িতে যা কিছু ছিল, সব কিছু লুট করে নিয়েছিল। আমার মেয়েকেও অত্যাচার করেছে। ৫ তারিখের পরে আমি গ্রামে এসেছি।
লেবুতলা ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি আব্দুল মান্নান জানান, আলিমুজ্জামান মিলন চেয়ারম্যান ভোটের সময় লোক দিয়ে বোমা তৈরি করত। এমন কি ভোটের সময় ওই বোমা বিস্ফোরিত হয়ে দু’জন লোকও মারা যায়। তার লোকজন এ বোমা নিয়ে গোটা ইউনিয়নে মহড়া দিত। সাধারণ লোকজন ও বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা নাশকতা মামলা দিয়ে পুলিশ দিয়ে হয়রানি করত।