বাংলার ভোর প্রতিবেদক
রাত পোহালেই ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদের দ্বিতীয় ধাপে যশোরের শার্শা, ঝিকরগাছা ও চৌগাছাতে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ইভিএম মেশিনের মাধ্যমে তিনটি পদে পছন্দের প্রার্থীদের ভোট প্রদান করবেন তিন উপজেলার ভোটাররা। চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও সংরক্ষিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২৮ প্রার্থী লড়ছেন।
ইতোমধ্যে অবাধ সুষ্ঠু গ্রহনযোগ্য ভোট গ্রহণের জন্য সকল প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। আজ সারাদিন কেন্দ্রে কেন্দ্রে যাবে নির্বাচন সামগ্রি।
এদিকে, রোববার মধ্যরাতেই শেষ হয়েছে ভোটের প্রচার-প্রচারণা। নির্বাচনে পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রাখতে ইতোমধ্যে মাঠে নেমেছে বিজিবি ও র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। নির্বাচনকে সামনে রেখে নিñিদ্র নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে উপজেলাগুলো। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে বলে জানা গেছে।
নির্বাচনের ভোটগ্রহণে কোথাও বাঁধা দান বা সুষ্ঠু পরিবেশের বিঘ্ন ঘটালে কঠোরভাবে দমন করা হবে। এজন্য ভোটপ্রদানে বাঁধা দান ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিনষ্টের ঘটনা ঘটলে জাতীয় জরুরি সেবার হটলাইন নাম্বার ৯৯৯ এ ফোন করার আহ্বান জানানোর অনুরোধ করেছেন প্রশাসন।
যশোর নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ৬ষ্ঠ উপজেলা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে যশোরের শার্শা, ঝিকরগাছা ও চৌগাছা উপজেলাতে নির্বাচন। তিন উপজেলাতে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান পুরুষ ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে করে মোট ২৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। শার্শা উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১১ জন। তাদের মধ্যে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন চারজন। তারা হলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান মিন্নু (মোটরসাইকেল), উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ ইব্রাহিম খলিল (ঘোড়া), উপজেলা যুবলীগ সভাপতি অহিদুজ্জামান অহিদ (আনারস) এবং সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন (দোয়াত কলম)।
ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ) পদে চারজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি আব্দুর রহিম সরদার (তালা), সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সরদার সাহরিন আলম বাদল (টিউবওয়েল), যুবলীগ নেতা তরিকুল ইসলাম মিলন (টিয়া পাখি) এবং শফিকুল ইসলাম মন্টু (চশমা)। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তিনজন। তারা হলেন বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী আলেয়া ফেরদৌস (হাঁস), নাজমুন নাহার (ফুটবল) এবং জেলা যুবমহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক শামিমা আলম সালমা (কলস)।
ঝিকরগাছা উপজেলায় প্রার্থী হয়েছেন ১১জন। তাদের মধ্যে চেয়ারম্যান পদে চারজন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে তিনজন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে চারজন রয়েছেন। বর্তমান চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম আনারস, বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান লুবনা তাক্ষী দোয়াত-কলম ও বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান সেলিম রেজা ঘোড়া প্রতীক। চেয়ারম্যান পদের অপর প্রার্থী ঝিকরগাছা উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি রেজাউল হোসেনের মোটরসাইকেল প্রতীক।
অন্যদিকে, ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাংবাদিক সৈয়দ ইমরান রশিদ (চশমা), পৌর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক কামরুজ্জামান মিন্টু (তালা) এবং ইদ্রিস আলী বিশ^াস (টিউবওয়েল)। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে যে চারজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তারা হলেন যশোর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাহানা আক্তার (ফুটবল), ঝিকরগাছা পৌরসভার কাউন্সিলর (পদত্যাগী) জেসমিন সুলতানা (কলস), আমেনা খাতুন (হাঁস) এবং আছিয়া বেগম (পদ্ম ফুল)।
এদিকে, চৌগাছা উপজেলাতে চেয়ারম্যান পদে ২ জন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন ছাত্রলীগের সাবেক নেতা শামীম রেজা। নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বর্তমান চেয়ারম্যান ও মৃধাপাড়া মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ ড. এম মোস্তানিছুর রহমান (মোটরসাইকেল) ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বীরমুক্তিযোদ্ধা এসএম হাবিবুর রহমান (আনারস) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ভোটযুদ্ধে মাঠে আছেন সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও নিহত যুবলীগ নেতা ইমামুল হাসান টুটুলের স্ত্রী আকলিমা খাতুন লাকি (কলস), যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক নাছিমা খাতুন (হাঁস), বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নাজনিন নাহার (বৈদ্যুতিক পাখা), যুব মহিলালীগ নেত্রী কামরুন্নাহার শাহিন (ফুটবল) ও রিপা ইসলাম (প্রজাপতি)।
ভোটের শেষ প্রান্তে এসে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী এবং কর্মী-সমর্থকদের উসকানিমূলক কথাবার্তা ভোটের মাঠে উত্তাপ ছড়াচ্ছে। এ কারণে ভোটের দিন সহিংসতার আশঙ্কা করছেন অনেকে। ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভোটকেন্দ্র দখল ও আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা এবং দলীয় রেষারেষির কারণে ভোটের দিন বিশেষ করে শার্শা ও ঝিকরগাছার প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘাতের আশঙ্কা রয়েছে। সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহনের জন্য প্রতিটি কেন্দ্রে প্রিজাইডিং অফিসার ও সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার দায়িত্ব পালন করবেন। এ তিন উপজেলায় কিছু ক্ষেত্রে আচরণবিধি লংঘন ও সংঘটিত নির্বাচনী অপরাধের কারণে গত ১৭ মে পর্যন্ত ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে প্রার্থী এবং কর্মী-সমর্থকদের ৭৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। নির্বাচনের দিন অন্য দুই উপজেলার চেয়ে শার্শা উপজেলায় নিরাপত্তা কর্মী মোতায়েন থাকবে বেশি।
তিন উপজেলায় মোবাইল টিম ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে ১ হাজার ৭১৮ জন পুলিশ, ৬০ জন র্যাব সদস্য এবং ৬০ জন আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া ৮ প্লাটুন বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে, তিন উপজেলায় অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনে প্রশাসন বদ্ধপরিকর। নির্বাচনের ভোটগ্রহণে কোথাও বাঁধা দান বা সুষ্ঠু পরিবেশের বিঘ্ন ঘটালে কঠোরভাবে দমন করা হবে। এজন্য ভোটপ্রদানে বাঁধা দান ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিনষ্টের ঘটনা ঘটলে জাতীয় জরুরি সেবার হটলাইন নাম্বার ৯৯৯ এ ফোন করার আহ্বান জানানো হয়েছে। রোববার ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের (২য় ধাপ) প্রেস ব্রিফিংকালে যশোরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার এই আহ্বান জানান। যশোর কালেক্টরেট ভবনের অমিত্রাক্ষর মিলনায়তনে রোববার বেলা ১১টার দিকে এই প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়।
প্রেস ব্রিফিংকালে যশোরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার বলেন, আগামী ২১ মে দ্বিতীয় ধাপের উপজেলার পরিষদ যশোরের তিন উপজেলার ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এই তিন উপজেলা শার্শা, ঝিকরগাছা ও চৌগাছায় ভোটারদের নিরাপত্তা এবং সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা সকল প্রকার প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। পুলিশ, বিজিবি, আনসার, র্যাব সদস্যরা ভোটারদের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করবে।
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, আমাদের সার্বক্ষণিক গোয়েন্দা নজরদারি থাকবে। গোয়েন্দা নজরদারির বাইরে যদি কেউ ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে আসতে বাঁধা প্রদান করে বা ভোটের সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিনষ্ট করার চেষ্টা করে তাহলে ভোটারদের কাছে অনুরোধ থাকবে তৎক্ষণাৎ জরুরি সেবা ৯৯৯ এ কল করে জানানোর জন্য। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নিবে।’
প্রেস ব্রিফিংয়ে যশোরে পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার বলেন, প্রত্যেক ভোটার যেনো নিরাপদে ভোট কেন্দ্রে আসতে পারেন, স্বাধীনভাবে ভোট দিয়ে নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারেন তা নিশ্চিত করতে প্রশাসন বদ্ধপরিকর। ভোটারদের যদি কেউ কেন্দ্রে আসতে বাধা দেয় কিম্বা ভোট নিয়ে কোনো ধরণের পরিবেশ বিনষ্টের চেষ্টা করে তাহলে তা আইনানুগভাবে দমন করা হবে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে আরও উপস্থিত ছিলেন তিন উপজেলার নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এসএম শাহীন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোসাইন, জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা আনিছুর রহমান, অতিরিক্ত নির্বাচন অফিসার আব্দুর রশিদ প্রমুখ।