বাংলার ভোর ডেস্ক
দিনভর অবরুদ্ধ করার পর রাত ১০টার দিকে শিক্ষার্থীদের ধাওয়ার মুখে সচিবালয় এলাকা ছাড়ল আন্দোলনরত আনসার সদস্যরা। এ ঘটনায় সাংবাদিকসহ অন্তত ৩৫ জন শিক্ষার্থী আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
নানা দাবিতে আন্দোলনরত আনসারা রোববার বেলা ১২টা থেকে সচিবালয় ঘেরাও করে রাখেন। ফলে সচিবালয়ের ভেতরে আটকা পড়েন কয়েকজন উপদেষ্টা, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কসহ অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। রাত সাড়ে ৮টার দিকে সচিবালয়ে অবরুদ্ধ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ নিজের ফেসবুক আইডিতে এক পোস্টে তাদের উদ্ধার করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, সবাই রাজুতে আসেন। স্বৈরাচারীশক্তি আনসার হয়ে ফিরে আসতে চাচ্ছে। দাবি মানার পরও আমাদের সবাইকে সচিবালয়ে আটকে রাখা হয়েছে। এতে ছড়িয়ে পড়ে তুমুল উত্তেজনা। খবর পেয়ে তাদের উদ্ধারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে শিক্ষার্থীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে রাজু ভাস্কর্যে জড়ো হয়ে সচিবালয়ের দিকে ছুটে যান।
পৌনে ১০টার দিকে তারা সচিবালয়ে পৌঁছালে আন্দোলনতর আনসার সদসস্যের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীদের ধাওয়ার মুখে আন্দোলনকারী আনসার সদস্যরা প্রেসক্লাবের সামন দিয়ে নিরাপদ এলাকায় চলে যান। রাত সাড়ে ১০টার দিকে সচিবালয়ের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে সেনাবাহিনী। এরপর অবরুদ্ধ উপদেষ্টা, মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা বের হয়ে যান।
রোববার সকাল ৮টার দিকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের সড়কে অবস্থান নিয়ে সমাবেশ শুরু করেন আনসার সদস্যরা। তাদের সমাবেশের কারণে তোপখানা রোড থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পর্যন্ত সড়ক বন্ধ করে দেয় পুলিশ। এই সমাবেশে যোগ দিতে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকায় আসেন আনসার সদস্যরা। এক পর্যায়ে তারা ছড়িয়ে পড়েন পুরো এলাকায়। ১২টার দিকে তারা সচিবালয় ঘেরাও করেন। এসময় আন্দোলনরত আনসার সদস্যরা কয়েকবার বিদ্যুৎ ভবনের পাশের গেইট দিয়ে সচিবালয়ে প্রবেশের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। তাদের ঘেরাওয়ের কারণে সচিবালয় থেকে কেউ বের হতে বা প্রবেশ করতে পারেননি। পরে বিকাল ৩টার দিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা তাদের সঙ্গে কথা বলে সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দপ্তরে যান। বৈঠক শেষে বিকেলে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর অধীন সাধারণ আনসার সদস্যদের দাবি-দাওয়ার বিষয়ে সুপারিশ প্রণয়নের লক্ষ্যে কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কিন্তু তা মানতে নারাজ আন্দোলনকারী আনসাররা। তাদের ভাষ্য, এখনই সব দাবি মেনে নিতে হবে। দাবি আদায়ে অনঢ় আনসার সদস্যরা সচিবালয় ঘেরাও করে রাখলে রাত পর্যন্ত সচিবালয়ের ভেতর থেকে বের হতে পারেননি কয়েকজন উপদেষ্টা, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারী।
এদিকে, গতকাল সকাল ১০ টা থেকে আনসার সদস্যদের বিক্ষোভের কারণে গুলিস্তান শিশুপার্ক, মতিঝিল শাপলা চত্বর, কাকরাইল, মালিবাগ মৎস্য ভবন ও শাহবাগ, পল্টন, হাইকোর্ট মোড়, শান্তিনগরসহ সব এলাকায় মোড় পর্যন্ত তীব্র যানজট তৈরী হয়। তীব্র যানঝটের কবলে অনেক মানুষ কর্মস্থলেও ঠিকমতো পৌছাতে চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েছে পথচারীরা। আনসার সদস্যরা সকাল ৯ টায় প্রথমে প্রেসক্লাবের সামনে রাস্তা অবরোধ করে। এরপর হাই কোর্ট মোড়, সচিবালয়ে সামনের সড়ক ব্যারিকেড দিয়ে যানচলাচল বন্ধ করে দেয়। এ সময় তারা অ্যাম্বুলেন্স, স্কুল কলেজ বাস এবং সরকারি জরুরি সেবার গাড়িও চলাচল করতে দেয়নি।
এ সময় সচিবায়লয়ের গেটের সামনে অবস্থান নেওয়ায় কার্যত সচিবালয়ে কেউ প্রবেশ করতে এবং বের হতে পারেনি। আনসার দিনভর এ বিক্ষোভের কারণে তৈরী হয় ব্যাপক জনদুর্ভোগ। আনসার সদস্যরা এ সময় বিভিন্ন যানবাহন চলাচলে বাধা তৈরী করার পাশাপাশি বেপরোয়া আচরণও করে। এদিকে, গতকাল বিকেলে আনসারদের কয়েকজন সমন্বয়কারীদের সঙ্গে বৈঠক করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো: জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। পরে সাধারণ আনসারদের রেষ্ট্ প্রথা বাতিল করে দাবী দাওয়ার বিষয়ে একটি প্রতিবেদন দিনে কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি গঠনের পর প্রথমে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিলেও পরে আনসার সদস্যরা তাদের আন্দোলন স্থগিত করে। আনসার সদর দপ্তর সূত্র জানিয়েছে, সাধারণ আনসাররা যে দাবি দাওয়া জানিয়েছে এর মধ্যে যেগুলো কিভাবে সমাধান করা যায় তার জন্য আনসার ভিডিপি মহাপরিচালকের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এরপরও কতিপয় আনসার সদস্যআন্দোলন অব্যাহত রাখেন।
আনসারদের রেস্ট প্রথা বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে গতকাল বিকেলে সচিবালয়ে উপদেষ্টার কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের জানান উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, তিন উপদেষ্টা এবং অন্যান্য সহকর্মী সবার সঙ্গে আলোচনা করে আমরা একটা সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি- এখন থেকে আনসারে রেস্ট প্রথা থাকবে না। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে আনসার সদস্যদের বৈঠক শেষে রেস্ট প্রথা বাতিলের ঘোষণা দেওয়ার পর সুপারিশ প্রণয়নে সাত সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ কমিটিকে আগামী সাত দিনের মধ্যে সরকারের কাছে প্রতিবেদন পেশ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে বিশ্রাম প্রথা বাতিল করার কথা জানানো হলেও তারা তা মানেন না জানিয়ে চাকুরী জাতীয় করণের একদফা দাবীতে অনড় থাকে। পরে কমিটি গঠন করে প্রতিবেদনের পেক্ষিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানানোর পর আন্দোলনের সমন্বয়কারীরা আন্দোলন-কর্মসূচি স্থগিত করার ঘোষনা দেন। তারপরও আন্দোলনকারী আনসার সদস্যরা সচিবালয়ের সামনে ঘেরাও কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।