# জন্ম নিবন্ধন নিয়ে বিপাকে অভিভাবকরা
স্বাধীন মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ
টিকা কার্ডের অভাবে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন যশোর জেনারেল হাসপাতালে টিকা নিতে আসা অসংখ্য মানুষ। শুধু জেলা শহর নয়, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায় হাসপাতালেও ভোগান্তি বেড়েছে। বিশেষ করে শিশুদের জন্ম নিবন্ধনের ক্ষেত্রে এই কার্ডের অনুপস্থিতি বড় ধরনের সমস্যার সৃষ্টি করছে। যা নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা দেখা দিয়েছে। অনেকেই অভিযোগ করছেন, মূল টিকা কার্ড না থাকায় তাদের সন্তানদের জন্ম নিবন্ধন করাতে পারছেন না। এদিকে স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, টিকা কার্ড জাতীয়ভাবে ক্রয় বা মুদ্রণ বন্ধ থাকায় ফটোকপি দিয়েই কাজ চালিয়ে নিতে হচ্ছে।
যশোর জেনারেল হাসপাতালের টিকাকেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী কিশোরী ও মহিলাদের টিকা কার্ড থাকলেও, ০ থেকে ১৫ মাস বয়সী শিশুদের ইপিআই (সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি) টিকা কার্ডের সংকট প্রকট। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসের পর থেকে আর কোনো নতুন টিকা কার্ড আসেনি। প্রতিদিন প্রায় ১৫ থেকে ২০ জন শিশুকে টিকা দেওয়া হলেও তাদের হাতে মূল কার্ড তুলে দিতে পারছেন না সদর হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীরা। বাধ্য হয়ে ফটোকপি করা কার্ড দিয়েই কাজ চালাতে হচ্ছে। স্বাস্থ্যকর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া আছে অনলাইনে তথ্য এন্ট্রি করার। স্বাস্থ্য বিভাগের নিজস্ব ডিভাইসের মাধ্যমে জেলা শহর থেকে ইউনিয়নের ওয়ার্ড পর্যন্ত সেই কাজটি করছেন তারা।
এদিকে, মূল টিকা কার্ড না পেয়ে সদর হাসপাতালের টিকাদান কেন্দ্রে আসা বেশ কয়েকজন অভিভাবক তাদের ভোগান্তির কথা তুলে ধরেন।
শহরের চাঁচড়া এলাকা থেকে আসা শরিফা বেগম বলেন, আমার বাচ্চার জন্ম নিবন্ধন করাতে গেছি। টিকাকার্ড চাইলো। আমার কাছে তো ফটোকপি করা কার্ড। বললো অরজিনাল কার্ড ছাড়া জন্ম নিবন্ধন করা সম্ভব না। এখন কি করবো বুঝতে পারছি না।
মণিরামপুর এলাকার আরিফ হোসেন নামে অন্য একজন বলেন, আমার ছেলের বয়স এক বছর। সব টিকা দেয়া হয়েছে। কিন্তু জন্ম নিবন্ধন করতে গিয়ে দেখি টিকা কার্ড নেই। হাসপাতাল থেকে ফটোকপি কার্ড দিয়েছে। জন্ম নিবন্ধন অফিসে এটা মানছে না।
কুয়াদা থেকে আসা রেহেনা পারভীন বলেন, স্বাস্থ্যকর্মীরা বলে অনলাইনে সব ডেটা আছে। কিন্তু জন্ম নিবন্ধন করাতে গেলে তারা অনলাইনে ডেটা খুঁজে পায় না। টিকা কার্ড ছাড়া বাচ্চাকে জন্ম নিবন্ধন করাতে পারবো না।
যশোর জেনারেল হাসপাতালের টিকা কেন্দ্রের ইনচার্জ নুরুল আমিন জানান, প্রায় দেড় বছর ধরে আমরা ফটোকপি কার্ড দিয়ে চালাচ্ছি। প্রতিদিনের চাহিদা সিভিল সার্জনকে লিখিতভাবে জানাই। হাসপাতাল থেকেই আমাদের টিকাকার্ড ফটোকপি করে দেয়া হয়েছে। আমরা মূল কার্ড না পেয়ে ফটোকপিটাই মানুষকে দিচ্ছি।
যশোরের সিভিল সার্জন ডা. মাসুদ রানা জানান, টিকা কার্ডের সংকট সারাদেশব্যাপি। আস্তে আস্তে অনলাইন চালু হলে সহজে সব ডাটা পাওয়া যাবে। কার্ডের সংকটের বিষয়টা মন্ত্রণালয় জানে।
উল্লেখ্য, ইপিআই কর্মসূচির আওতায় বিভিন্ন সময় (প্রাপ্যতা অনুযায়ী) যক্ষ্মা, ডিফথেরিয়া, ধনুষ্টংকার, হুপিংকাশি, পোলিও, হেপাটাইটিস বি, হিমো-ইনফ্লুয়েঞ্জা বি, হাম ও রুবেলা এই ৯টি রোগের প্রতিষেধক টিকা প্রয়োগ করা হয়। টিকা প্রদানের পর নতুনদের পরবর্তী টিকাদানের তারিখ উল্লেখ করে কার্ড দেয়া হয়। এছাড়া পুরাতনদের কার্ডে পরবর্তী টিকাদানের তারিখ উল্লেখ করা হয়। পাশাপাশি ১৫ থেকে ৪৯ বছরের নারীদের পাঁচ ডোজ টিটি টিকা দেওয়া হয়।