বাংলার ভোর প্রতিবেদক
ইউনিয়ন পর্যায়ে শিশু কল্যাণ বোর্ড চালু করা জরুরি হয়ে পড়েছে। শিশুদের সুরক্ষায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে ইউনিয়ন শিশু কল্যাণ বোর্ড। উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে শিশু কল্যাণ বোর্ড থাকলেও ইউনিয়ন পর্যায়ে না থাকায় তৃণমূলের শিশুদের সুরক্ষায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। শিশু সুরক্ষায় সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।
সোমবার রাইটস যশোরের মুক্তি সাউথ এশিয়া প্রকল্পের আওতায় শিশু পাচার ও নিপীড়ন প্রতিরোধ বিষয়ক অ্যাডভোকেসি সভায় অংশগ্রণকারীরা এই সুপারিশ করেন।
সুপারিশমালায় বলা হয়, শিশু আইন-২০১৩ অনুযায়ী জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে শিশু কল্যাণ বোর্ড রয়েছে। কিন্তু ইউনিয়ন পর্যায়ে শিশু কল্যাণ বোর্ড নেই। এতে তৃণমূল পর্যায়ের শিশুদের সুরক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া যাচ্ছে না। তাই শিশুদের সুরক্ষা ও সর্বোত্তম সেবা নিশ্চিত করার জন্য ইউনিয়ন পর্যায়ে কল্যাণ বোর্ড গঠনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। ইউনিয়ন শিশু কল্যাণ বোর্ড তৃণমূলের মানুষের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করবে। তাদের মাধ্যমে চিহ্নিত শিশুদের সুরক্ষায় জেলা ও উপজেলা কল্যাণ বোর্ডের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবে ইউনিয়ন শিশু কল্যাণ বোর্ড। এতে শিশু অধিকার নিশ্চিত হবে।
প্রেসক্লাব যশোরের সাধারণ সম্পাদক এসএম তৌহিদুর রহমান বলেন, শিশু সুরক্ষায় ইউনিয়ন পর্যায়ে কল্যাণ বোর্ড গঠনের দাবি উঠেছে। এটা অবশ্যই যৌক্তিক। ইউনিয়ন শিশু কল্যাণ বোর্ডে গ্রামপুলিশ, স্কুল শিক্ষক, এলাকার গণমান্য ব্যক্তিকে সম্পৃক্ত করতে পারলে উদ্যোগ সফল হবে। শিশু সুরক্ষায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে ইউনিয়ন শিশু কল্যাণ বোর্ড।’
তিনি আরও বলেন, শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় ব্যবহার করার জন্য পাচার করা হয়। আর পাচারের অন্যতম কারণ বাল্য বিবাহ ও দারিদ্রতা। বাল্যবিয়ের শিকার নারীদের পাচার করা হয় যৌনকাজে ব্যবহার করার জন্য। এটা প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। শিশু সুরক্ষায় সরকারের বিভিন্ন বিভাগ কাজ করছে। সরকারি একাধিক কমিটিও আছে। কিন্তু সেই কমিটিগুলো কার্যকর নয়। নিয়ম রক্ষার কমিটিতে পরিণত হয়েছে।
জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা সাধন কুমার দাস বলেন, দেশে শিশু সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে ১৭টি মন্ত্রণালয় কাজ করছে। প্রত্যেকে আলাদাভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও স্ব-স্ব উদ্যোগে কাজ করছে। একই ছাতার নিচে সব প্রতিষ্ঠানের সমন্বিতভাবে কাজ করা দরকার।
জেলা প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান কর্মকর্তা শাহরিয়ার হাসান বলেন, বর্তমানে দেশে ৩৫ লাখ ৯০ হাজার শিশু ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে নিয়োজিত আছে। গত দশ বছরে ৮৬ হাজার শিশুর ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে অংশগ্রহণ বেড়েছে। শিশুদের মূলধারায় ফিরিয়ে এনে মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে হবে। তাদেরকে বিকল্প কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে হবে। কর্মসংস্থান ও পুনর্বাসন ছাড়া শিশু পাচার, ঝূঁকিপূর্ণ পেশায় নিয়োজিত রোধ করা যাবে না।
রাইটস যশোরের নির্বাহী পরিচালক বিনয়কৃষ্ণ মল্লিকের সভাপতিত্বে অ্যাডভোকেসি সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন যশোর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আক্তার, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার আবদুল আহাদ, জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা সাধন কুমার দাস, প্রেসক্লাব যশোরের সাধারণ সম্পাদক এসএম তৌহিদুর রহমান। সঞ্চালনা করেন রাইটস যশোরের উপপরিচালক এসএম আজাহারুল ইসলাম। কর্মশালায় সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান প্রতিনিধি, গণমাধ্যমকর্মী, আইনজীবী অংশ নেন।