বাংলার ভোর ডেস্ক
সংখ্যালঘুদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহে ধর্মীয় নেতাদের খোলাখুলি আলোচনার আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, যাতে প্রকৃত অপরাধী শাস্তি পায় এবং মানুষ আনন্দিত হয় যে তাদের অভিযোগের প্রতিকার হয়েছে। বৃহস্পতিবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ধারাবাহিক সংলাপের অংশ হিসেবে ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে মত বিনিময়ের শুরুতে তিনি এ কথা বলেন। দেশের চলমান পরিস্থিতিতে ‘জাতীয় ঐক্য’ প্রতিষ্ঠায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকের এদিন ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছেন প্রধান উপদেষ্টা। এর আগে মঙ্গলবার সংলাপের অংশ হিসেবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেয়া ছাত্রনেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। এদিনের সংলাপের শুরুতে প্রধান উপদেষ্টা সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর সত্যতা যাচাইয়ের জন্য তথ্যপ্রবাহের নির্ভরযোগ্যতা নিশ্চিত করতে জোর দেন এবং দোষীদের শাস্তির আওতায় এনে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বর্তমানেই সমস্যার সমাধান করতে হবে, ভবিষ্যতের জন্য অপেক্ষা নয়। প্রধান উপদেষ্টা শপথ গ্রহণের সময়ের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, ‘আমি সবার কাছে আন্তরিক আহ্বান জানিয়েছিলাম। বলেছিলাম, আমরা একটি পরিবার। আমাদের ধর্ম, মত, রীতিনীতি ভিন্ন হতে পারে, কিন্তু আমরা একই পরিবারের সদস্য। শত পার্থক্য সত্ত্বেও আমরা পরস্পরের শত্রু নই। জাতীয়তা ও পরিচয়ের প্রশ্নে আমরা একসাথে। আমরা বাংলাদেশি, এক পরিবারের অংশ।’ ‘শপথ নেওয়ার পর থেকেই সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচারের খবর শুনতে পেলাম। এতে মন খারাপ হয়ে গেল। এরপর আমি ঢাকেশ্বরী মন্দিরে গিয়ে একই কথা বললাম। বললাম, সবার সমান অধিকার । সংবিধান আমাদের সেই অধিকার দিয়েছে। নাগরিক হিসেবে এটা আমাদের প্রাপ্য, আর রাষ্ট্রের দায়িত্ব তা নিশ্চিত করা। আমরা আন্তরিকভাবে চেষ্টা করেছিলাম যেহেতু রাষ্ট্রের দায়িত্ব আমাদের হাতে, এটা আমাদেরই দায়িত্ব নিশ্চিত করা। সংবিধান নাগরিককে যে দায়িত্ব দিয়েছে সেই দায়িত্বগুলো তার কাছে পৌঁছে দেওয়া।‘’
এরপরও সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার খবরের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমি সবার সঙ্গে বসেছিলাম এবং আলোচনা করেছি কীভাবে এটা থেকে পাওয়া যায়।’’
দুর্গাপূজার সময়ের প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের নিশ্চিত হতে হবে যেন হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর কোনো হামলা না হয়। সবাই এ বিষয়ে আন্তরিক ছিল। কয়েক হাজার পূজামণ্ডপে শান্তিপূর্ণভাবে উৎসব উদযাপিত হয়েছে। তবে তাঁতীবাজারে একটি ককটেল হামলার ঘটনা ঘটেছিল। সেটিই একমাত্র ঘটনা। এতে কিছুটা তৃপ্তি পেয়েছিলাম যে একসাথে আনন্দ সহকারে উৎসব উদযাপন করতে পেরেছি।’’
তিনি বলেন, ‘‘এখন আবার নতুন কথা সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হচ্ছেৃ। বিদেশি প্রচারমাধ্যমে এটি প্রচারিত হচ্ছে। আমি খোঁজ নিচ্ছি, কেন এমন হচ্ছে। আসলে ঘটনাগুলো সত্যি না কি ভুল তথ্য প্রচারিত হচ্ছে?
”আমি খোঁজ নিচ্ছি কেন হচ্ছে, কী হচ্ছে, হচ্ছে না কি হচ্ছে না। না কি তথ্য আমরা পাচ্ছি, তা ভুল। কাজেই সেই তথ্যের উপর ভরসা করে বসে থাকলে, অন্ধের মত বসে থাকা। তথ্যর মধ্যে গড়মিল কেন? ওরা যা বলছে তা মিথ্যাচার. না আমরা যা বলছি তা মিথ্যাচার, সত্যটা কোথায়।
“প্রকৃত তথ্য জানতে অনেক সময় সরকারি দপ্তরের উপর ভরসা রাখা যায় না। কর্তা যা চায় সেভাবেই বলে। আশঙ্কা কথা মন খুলে বলতে চায় না, কর্তা নারাজ হবে। ”আমি আসল খবর জানতে চাই, সেই প্রক্রিয়াটি প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। শুধু আজকের জন্য না।‘‘
তিনি বলেন, “ঘটনা ঘটতে পারে তাতক্ষণিকভাবে খবর পাওয়া যায়, যেদিক থেকেই হোক। দোষী দোষীই, তাকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।‘‘
মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ”প্রথম কথাটা হল না হওয়ার পরিবেশ সৃষ্টি করা। আর হয়ে গেলে তাৎক্ষণিক প্রতিকারের ব্যবস্থা করা। আমি যা বলছি তা দেশের বেশির ভাগ মানুষ মনে করে। আমরা এক পরিবারের মানুষ হিসেবে সামগ্রিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারি। সেখানে তথ্য ও প্রতিকার হল বড় বিষয়।
”আমি পেলাম তথ্য কিন্তু প্রতিকার পেলাম না। সমস্যা হয়ে গেলে সমাধান করতে হবে। আজকের আলোচনা খোলাখুলি, আমরা সবাই আলোচনা করব। আমাদের লক্ষ্যে কোনো গোলমাল নেই। তথ্য প্রবাহ কীভাবে পাব, দোষীকে কীভাবে ধরব, যাতে সবাই সঠিক তথ্যটা পেয়ে যায়। এমন বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলতে চাই, যার নাম দিয়েছি নতুন বাংলাদেশ।
”এটা আমাদের করতে হবে। আপনাদের কথা বলে সন্তুষ্ট করে আজকের মত বিদায় দিলাম তা নয়। এটা দ্রুত করতে হবে। ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে দেখলে হবে না, আমাদের বর্তমানেই করে যেতে হবে। এটিই আমাদের নতুন বাংলাদেশের উদ্দেশ্য।”
শিরোনাম:
- লাইসেন্স বাদেই সেচ কার্যক্রমের অভিযোগ
- যশোরে দুই লাখ দুস্থ পরিবারের জন্য সরকারি কম্বল বরাদ্দ ১০ হাজার পিস!
- যশোরে অস্ত্রগুলিসহ সাবেক কাউন্সিলর- সেনা সদস্যসহ আটক ৪
- ঝিকরগাছায় বিস্ফোরক আইনের মামলা বিদেশে থেকেও আসামি দুইজন !
- চৌগাছা থানার ওসি পায়েল হোসেন ক্লোজড; দেড় মাসেই অভিযোগের পাহাড়
- চাঁদার জন্য আমার ছেলেডারে মেরে ফেললো; ২১ বছর পর বাবার মত একই পরিণতি ছেলের
- মৃত্যুর ৭ দিন পর লাশ এলো দেশে, নিজ গ্রামে দাফন
- বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে দৃষ্টিশক্তি হারানো শাহীনকে বিজিবির অর্থ সহায়তা