বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি দীপঙ্কর দাস রতন এবং সাধারণ সম্পাদক তপন কুমার ঘোষের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন পূজা পরিষদের নেতৃবৃন্দ। বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রেসক্লাব যশোরে নেতৃবৃন্দ এই সংবাদ সম্মেলন করেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সদর উপজেলা কমিটির সভাপতি রবিন কুমার পাল।
সদর উপজেলা কমিটির সভাপতি রবিন কুমার পাল বলেন, গত ১৪ মে বিনয় কৃষ্ণ মলি¬ক নামে এক ব্যক্তি যশোর সদর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালতে পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি ও সম্পাদকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা (সি আর ১৮৪২/২৫) দায়ের করেন। এই মামলায় ‘মনগড়া মিথ্যা অভিযোগ’ আনা হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ একটি ‘সম্পূর্ণ দল নিরপেক্ষ মানবাধিকার সংগঠন’।
সংগঠনটি যেকোনো প্রকার ধর্মীয় বৈষম্য, নির্যাতন ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ও প্রতিকারের কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করা এবং সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্তদের সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করে। সংগঠনটি ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি পরিষদ’ গঠন করেছে, যার নেতৃত্বে মুসলিম সম্প্রদায়ের ব্যক্তিরা রয়েছেন। প্রতি বছর দুর্গাপূজার আগে পূজা পরিষদ আয়োজিত সম্প্রীতি শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন কোনো ইসলামী ব্যক্তিত্ব। এছাড়া, পবিত্র ঈদের আগে মুসলিম সম্প্রদায়ের সাথে উৎসবের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয় এবং স্বাস্থ্য ক্যাম্পসহ সেবামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে।
তিনি উল্লেখ করেন, বিগত দুর্গাপূজার আগে ‘বৈষম্য বিরোধী সনাতন সমাজ’ নামে একটি সংগঠন তৈরি করে কতিপয় ব্যক্তি পূজা উদযাপন পরিষদের বিরুদ্ধে ব্যাপক কুৎসা রটনা শুরু করে। এতে দুর্গাপূজার নিরাপত্তা ও সম্প্রীতির পরিবেশ বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। এ অবস্থায় পূজা উদযাপন পরিষদ জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের কাছে কয়েকজন সম্পর্কে সতর্ক থাকার জন্য চিঠি প্রদান করে, যার মধ্যে বিনয় মল্লিকের নামও ছিল।
তিনি অভিযোগ করেন, কসবা পুলিশ ফাঁড়ির সরকারি জায়গায় বিনয় মল্লিকসহ অনেকের দোকান সরানোর সময় বিনয় মল্লিক দীপঙ্কর দাস রতনকে টেলিফোনে এসপিকে সাম্প্রদায়িক আখ্যায়িত করে আন্দোলনে যেতে বলেন। কিন্তু দীপঙ্কর দাস রতন এতে অসম্মতি জানালে বিনয় মল্লিক ক্ষুব্ধ হন এবং তখন থেকেই তিনি পূজা উদযাপন পরিষদের বিরুদ্ধে ‘ক্রমাগত মামলা এবং কুৎসা রটিয়ে’ চলেছেন।
পূজা পরিষদ নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, গেল বছরের ৫ আগস্ট যখন বিভিন্ন স্থানে পূজা উদযাপন পরিষদের জেলা নেতৃত্বের কাছে ভীতিকর সংবাদ আসছিল, তখন জেলা নেতৃত্ব তাৎক্ষণিকভাবে প্রশাসনকে অবহিত করে। যশোরের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তায় সহযোগিতা করেন। পূজা উদযাপন পরিষদ ও উপদ্রুত এলাকাগুলো পরিদর্শন করে তথ্যপত্র তৈরি করে কেন্দ্রীয় কমিটিতে প্রেরণ করে। এই তথ্যপত্রে সরকার বা কোনো রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে একটি বাক্যও প্রয়োগ করা হয়নি। শুধুমাত্র দুর্বৃত্তায়নের কথা বলা হয়েছে।
পরিষদ মনে করে, বিনয় কৃষ্ণ মলি¬ক এবং তার সহযোগীরা সমাজ স্বীকৃত ব্যক্তিত্ব নয় এবং তাদের এ ধরনের কর্মকাণ্ড প্রশাসন ও রাজনৈতিক দলসমূহের সাথে পূজা উদযাপন পরিষদের দূরত্ব সৃষ্টি করার অপচেষ্টা মাত্র।
তাই বিনয় মলি¬কের দায়েরকৃত মামলাকে উদ্দেশ্যমূলক এবং মিথ্যা হিসেবে গ্রহণ করে সনাতনী জনগোষ্ঠীর এই সংগঠনকে দেশোন্নয়নের কাজে উদ্বুদ্ধ করা এবং মুষ্টিমেয় মামলাবাজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানানো হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সহ সভাপতি অধ্যক্ষ জয়ন্ত কুমার বিশ্বাস, জেলা কমিটির যুগ্ম সম্পাদক রতন আচার্য, দেবাশীষ রাহা, মহিলা সম্পাদিকা অর্চনা অধিকারি, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অঞ্জন সাহা, পূজা পরিষদ নেতা শ্যামল ঘোষ, সুকুমার অধিকারী, দুলাল সমাদ্দার প্রমুখ।