এস এম জালাল
যশোর জেলা বিএনপির সম্মেলনকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হয়ে উঠেছে। দীর্ঘ ১৬ পর পর হচ্ছে এ সম্মেলন। নতুন জেলা কমিটিতে ‘চমক’ থাকতে পারে। এসব কমিটিতে সাবেক ছাত্রদল ও যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতারা গুরুত্বপূর্ণ জায়গা পাবেন বলে মনে করছেন দলের অনেক সিনিয়র নেতা। তাদের মতে, বর্তমান বাস্তবতা ও বিশ্ব রাজনীতির গতিপথ মাথায় রেখে অপেক্ষাকৃত তরুণদের নেতৃত্বে আনা হতে পারে। সেক্ষেত্রে মেধা, পরিশ্রম ও ত্যাগকে বিবেচনায় রেখে গঠন হবে জেলা কমিটি। তরুণ নেতৃত্বে আস্থা রেখে দলকে পুনর্জাগরণের চেষ্টা চলছে বলে অভিমত এসব সিনিয়ার নেতাদের।
আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি সম্মেলনের সম্ভাব্য দিন নির্ধারণ করা হয়েছে।
জানা যায়, ২০০৯ সালে চৌধুরী শহিদুল ইসলাম নয়নকে সভাপতি ও অ্যাড. সৈয়দ সাবেরুল হককে সাধারণ সম্পাদক করে ১৪০ সদস্যের জেলা কমিটি ঘোষণা করা হয়। ২০১৮ সালে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে ৫৩ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। আহ্বায়ক হন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য প্রয়াত তরিকুল ইসলামের সহধর্মিনী অধ্যাপক নার্গিস বেগম। আর সদস্য সচিব করা হয় সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবুকে। কিন্তু পারিপার্শ্বিকতার কারণে তিন মাসের আহ্বায়ক কমিটি সাত বছর পার হলেও সম্মেলনের আয়োজন করতে পারেনি।
বিএনপি অঙ্গ সংগঠনের নেতারা বলছেন, সময়ের আলোকে প্রবীণদের পাশাপাশি নবীনদের সমন্বয় করা প্রয়োজন। এ জন্য দলের তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মতামতকে গুরুত্ব দিতে নেতা নির্বাচনের পুরো প্রক্রিয়া তাদের কাছে ছেড়ে দেয়া হক। মানুষের কাছে, দলের নেতা-কর্মীদের কাছে যিনি গ্রহণযোগ্য, তিনিই নেতা হবেন, এটাই গণতন্ত্রের নিয়ম, এটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য।
জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকন বলেন, ‘তরুণদের নেতৃত্বে আসার পথ থাকতে হবে। তাদের সুযোগ বাড়াতে হবে। তরুণদের মধ্যে যারা দক্ষ, যোগ্য এবং আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এসেছে তারা নিজের নেতৃত্ব ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠা করেছে। এ কারণে তাদের সুযোগটা বাড়ানো উচিত।
তিনি বলেন, প্রবীণ নেতাও খাকবেন। তাদের দক্ষতা এবং কাজ দেখানোর সুযোগ থাকে।
দলের নেতাকর্মীরা বলছেন, ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর বিএনপি দল গোছাতে বেশি তৎপর হয়েছে। ইতোমধ্যে উপজেলা পর্যায়ের অধিকাংশ ইউনিটের সম্মেলন সম্পন্ন হয়েছে। আগামী সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দলকে আরও সুসংগঠিত করার লক্ষ্যে জেলা কমিটির সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। সম্মেলনের মধ্যদিয়ে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন হবে। দল আরও শক্তিশালী হবে।
সম্প্রতি বিভিন্ন জেলা কমিঠিতে দেখা গেছে তরুণদের প্রভাব। যশোরে বাস্তবতায় এমনটি হলেও হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই। সেক্ষেত্রে দেখা গেছে যুবদল ও ছাত্রদলের শীর্ষ নেতারা যুবদলের আহবায়ক কমিটিতে স্থান পেয়েছেন। ফলে স্বেচ্ছাসেবক দলসহ বাকি অঙ্গ সংগঠনের নেতারা মূল দলে প্রবেশের প্রহর গুণছেন। জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি সফল ছাত্রনেতা ইঞ্জিনিয়ার রবিউল ইসলামের তৃণমূল পর্যায়ে রয়েছে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা। তৃণমূলের একাধিক নেতার সাথে কথা বলে জানা গেছে সর্বাধিক ভোটে তিনি সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হবেন। তারা বলেন রবিউল ইসলামের যোগ্যতা ও সততা তৃণমূলের তরুণ নেতাদের মন জয় করেছে।
সেক্ষেত্রে অতীত রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের সার্বিক দিক বিবেচনায় জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক প্রার্থী হিসাবে শক্ত অবস্থনে রয়েছেন রবিউল ইসলাম। ছাত্রদল দিয়ে শুরু করা তার ২৭ বছরের রাজনৈতিক জীবনের দলের প্রয়োজনে নিজেকে উৎসর্গ করে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া শেষ করেও কর্মজীবনে না গিয়ে বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠনের রাজনীতি করে চলেছেন। যার ফলশ্রুতিতে বর্তমান তিনি যশোর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। ২০১৯-২০২২ সাল পর্যন্ত স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটি সহ সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৭-২০১৯ সাল পর্যন্ত জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলেরর কেন্দ্রীয় কমিটি সহ সভাপতি (খুলনা বিভাগ) দায়িত্বে ছিলেন। ২০১০-২০১৮ সাল পর্যন্ত জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল যশোর জেলা শাখা সভাপতি। ২০০২-২০১০ সাল পর্যন্ত জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল যশোর জেলা শাখা সাধারণ সম্পাদক।
১৯৯৭-২০০১ সাল পর্যন্ত জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট সভাপতি। ১৯৯৯-২০০৪ সাল পর্যন্ত জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল যশোর পৌর শাখার যুগ্ম সম্পাদক। ১৯৯৯-২০০৩ সাল পর্যন্ত জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ৩ নম্বর ওয়ার্ড যশোর পৌর শাখার সভাপতি ছিলেন। ১৯৯৯-২০০০ সাল পর্যন্ত সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ছাত্র সংসদের নির্বাচিত ভিপি ছিলেন। ১৯৯৮-১৯৯৯ সালে সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট নির্বাচিত জিএস ছিলেন। ১৯৯৭-১৯৯৮ সাল পর্যন্ত ছিলেন একই কলেজের এজিএস। ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের আমলে হয়েছেন হয়রানির শিকার। ৩৪ টি মামলার আসামি হয়ে খেটেছেন দীর্ঘ কয়েদ জীবন।