♦ দুই উপজেলায় ২৭ প্রার্থীর ভাগ্যনির্ধারণ আজ
বাংলার ভোর প্রতিবেদক
৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদের প্রধম ধাপের ভোট গ্রহণ আজ। এই নির্বাচনের যশোরের থেকে ২৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। দুই উপজেলাতেই এবার সম্পূর্ণ ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) পদ্ধতিতে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ হবে। দুই উপজেলাতে ৫ লাখ ৮১ হাজার ৬৮৯ জন ভোটার ২৬০টি কেন্দ্রের ১৬০৫টি কক্ষে ভোট প্রদান করবেন। ২৬০ জন প্রিজাইডিং অফিসার ও ১৬০৫ জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার দায়িত্ব পালন করবেন। ভোটের দিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দুই উপজেলায় ১৮৬৮ পুলিশ ও ৩৬শ’ আনসার, ৪০ জন র্যাব ও চার প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন থাকবে।
এ বিষয়ে যশোরের পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার বলেন, ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন থেকে যশোর জেলা পুলিশকে সার্বিক দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনের চুড়ান্ত প্রস্তুতি আমরা গ্রহণ করেছি। নির্বাচন কমিশন চাই একটি অবাধ, সুষ্ট, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। নির্বাচন কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। যেহেতু ৪টি ধাপে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। উপজেলা নির্বাচন জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে আমাদের কাছে সহজতর হয়েছে। আমরা মনিরামপুর ও কেশবপুরে ৫ জন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও দুইজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সার্কেল) সহ ১৮শ পুলিশ সদস্য মোতায়েন করছি। পাশাপাশি ৩ হাজার ৬শ’ আনসার সদস্য থাকবে।
এছাড়াও নির্বাচনে বিজিবি, র্যাব মোবাইল ও স্ট্যাকিং ফোর্স হিসাবে দায়িত্ব পালন করবে। তাছাড়া এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবে। সব বাহিনী মিলে আমাদের প্রায় সাড়ে ৫ হাজার সদস্য মোতায়েন থাকবে।
তিনি বলেন, নির্বাচন ঘিরে নিরাপত্তার চাদরে মনিরামপুর কেশবপুর মোড়ানো থাকবে। নিবাচনী পরিবেশ ভন্ডুল করতে পারে এমন কোনো পরিস্থির অবতারণা হবে না। সুষ্ঠ নির্বাচন করার জন্য আমরা বদ্ধপরিকর।
মঙ্গলবার ইভিএম মেশিন বাদে অন্যান্য নির্বাচনী সরঞ্জাম কেন্দ্রে কেন্দ্রে পৌঁছে গেছে। নির্বাচন ঘিরে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। যদিও এখনো কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার অভিযোগ পাওয়া যায়নি। বিএনপিসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলের প্রার্থী না থাকায় অনেকটা নিরুত্তাপ নির্বাচন হতে যাচ্ছে উপজেলা দুটিতেই। এছাড়াও ভোটারের উপস্থিতিও কম থাকবে বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের। যদিও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে মরিয়া। ইতিমধ্যে দলটির নেতারা কর্মীদের ডেকে ভোটারের উপস্থিতি বাড়াতে নির্দেশনাও দিয়েছেন।
জানা গেছে, কেশবপুর উপজেলায় মোট ভোটার ২ লাখ ২০ হাজার ৯৫৪ জন। উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী হলেন, আব্দুল্লাহ নুর আল আহসান দোয়াত কলম, এসএম মাহবুবুর রহমান মোটরসাইকেল, কাজী মুজাহীদুর ইসলাম হেলিকাপ্টার, নাসিমা আক্তার সাদেক শালিক, ইমদাদুল হক আনারস ও মফিজুর রহমান ঘোড়া মার্কা। উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ) আব্দুল্লাহ আল মামুন তালা, পলাশ কুমার মল্লিক উড়োজাহাজ, আব্দুল লতিফ রানা মাইক, মনিরুল ইসলাম টিউবওয়েল ও সুমন সাহা চশমা প্রতীক। উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান (মহিলা) মনিরা খানম কলস ও রাবেয়া খাতুন ফুটবল প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদ ছাড়া দুটি ভাইস চেয়ারম্যান পদে ডজনখানিক নেতা প্রার্থী হলেও ভোটাদের ভাবনা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন। এ পদে সাতজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও লড়াইয়ে এগিয়ে রয়েছেন চারজন। শেষ পর্যন্তকে বিজয়ের মালা পরবেন, তা নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে চলছে নানা সমীকরণ।
ভোটাররা যে চারজনের মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্ভাবনা দেখছেন তারা হলেন সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল হালিমের ছেলে মঙ্গলকোট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ-নূর-আল আহসান বাচ্চু (দোয়াত-কলম), উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান কাজী রফিকুল ইসলামের ছেলে উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক কাজী মুজাহিদুল ইসলাম পান্না (হেলিকপ্টার), বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক নাসিমা আকতার সাদেক (শালিক) এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক মফিজুর রহমান (ঘোড়া)।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কেশবপুরের রাজনীতিতে ফিরে আসার সুযোগ নিতে চাচ্ছে হালিমের পরিবার। তার একমাত্র ছেলে বাচ্চু চেয়ারম্যান পদে ব্যাপক প্রচারণা চালিয়েছেন। রাজনীতিতে নিজেদের অবস্থান ফিরিয়ে আনতেই তিনি প্রার্থী হয়েছেন। এ ছাড়া বর্তমান চেয়ারম্যান যুদ্ধাহত বীরমুক্তিযোদ্ধা কাজী রফিকুল এবার প্রার্থী না হয়ে তাদের পরিবারের রাজনৈতিক ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য ছেলে কাজী মুজাহিদুল ইসলাম পান্নাকে প্রার্থী করেছেন। তিনি দীর্ঘদিন রাজনীতির মাঠে। দুই বারের ভাইস চেয়ারম্যান নাসিমা প্রয়াত শিক্ষামন্ত্রী এএসএইচকে সাদেক ও প্রয়াত প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক পরিবারের সদস্য হিসেবে তাদের অসমাপ্ত কাজ শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রচারণা চালিয়েছেন। অন্যদিকে মফিজুর সবার আগেই নির্বাচনের মাঠে নেমেছেন। এলাকার ব্যাপক উন্নয়নসহ বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি চষে বেড়িয়েছেন নির্বাচনী মাঠ।
এর মধ্যে কেশবপুর উপজেলায় ভোট কেন্দ্র ৯৫ ভোট কক্ষ ৬৭০। ৯৫ জন প্রিজাইডিং অফিসার ও ৬৭০ প্রিজাইডিং অফিসার দায়িত্ব পালন করবেন।
এদিকে কেশবপুরে নিরুত্তাপ ভোটের সম্ভবনা থাকলেও কিছুটা উত্তাপ ছড়ানোর শঙ্কা রয়েছে মণিরামপুর উপজেলাতে। কেননা উপজেলার নির্বাচনে স্থানীয় যে রাজনীতির গ্রুপিং দ্বন্দ্ব যে আবারও প্রকাশ্য এসেছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন প্রচার প্রচারণাতেও প্রার্থী ও কর্মী সমর্থকদের মধ্যে সেটি লক্ষ করা গেছে। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বি করছেন ১৪জন প্রার্থী। টানা ১৫ দিনের প্রচার প্রচারণাতে সকল প্রার্থী ছুটেছেন গ্রামগঞ্জে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে।
মণিরামপুরে যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তারা হলেন, চেয়ারম্যান পদে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও দলের উপজেলা সিনিয়র সহসভাপতি আমজাদ হোসেন লাভলু (আনারস) ও সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক ফারুক হোসেন (মোটরসাইকেল) ও ঘোড়া প্রতীকে সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মিকাইল হোসেন। তবে শেষ সময়ে মিকাইল অসুস্থার অজুহাতে মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রার্থী প্রভাষক ফারুককে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। তবে ইভিএম মেশিনে তার প্রতীক থাকছে। ভাইস চেয়ারম্যান পুরুষ পদে চারজন প্রার্থী। তারা হলেন যুবলীগ নেতা মঞ্জুর আক্তার (চশমা), সন্দীপ ঘোষ (টিউবওয়েল), খেদাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হক (তালা) ও সাবেক ছাত্র নেতা শরিফুল ইসলাম (টিয়া পাখি)।
মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ছয়জন প্রার্থী রয়েছেন। তার হলেন বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান কাজী জলি আক্তার (কলস), আমেনা বেগম (হাঁস), সুরাইয়া আক্তার ডেইজি (ফুটবল), মাহবুবা ফেরদৌস পাপিয়া (বৈদ্যুতিক পাখা), মাজেদা খাতুন (পদ্মফুল) ও জেসমিন বেগম (প্রজাপতি)। উপজেলাতে ১৪ জন প্রার্থীর মধ্যে মূলত নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখছেন চেয়ারম্যান পদে। ভোটার ও নেতাকর্মীরা বলছেন, স্থানীয় রাজনীতি মূলত দুটি গ্রুপে বিভক্ত। একটি পক্ষের নেতৃত্ব দেন বর্তমান এমপি ইয়াকুব আলী ও অপরটি সাবেক সাংসদ প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টচার্য্য। স্থানীয় রাজনীতির আধিপত্য বজায় রাখতে শীর্ষ দুই নেতা দুটি প্যানেল ঘোষণা করেছেন। বর্তমান এমপি ইয়াকুব আলীর চেয়ারম্যান প্রার্থী প্রভাষক ফারুক, ভাইস চেয়ারম্যান পুরুষ শরিফুল ইসলাম ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আমেনা খাতুন। অপরদিকে নিজের আধিপত্য বজায় রাখতে সাবেক সাংসদ প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টচার্য্যও প্যানেল ঘোষণা করেছেন। চেয়ারম্যান পদে আমজাদ হোসেন লাভলু, ভাইস চেয়ারম্যান মঞ্জুর আক্তার (চশমা) ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান কাজী জলি আক্তার। ইতোমধ্যে নিজ প্যানেলের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে তিনি বিভিন্ন ইউনিয়নে সভা সমাবেশও করেছেন। দুই বলয়ের একক প্রার্থী ঘোষণা নিয়ে অভ্যন্তরীণ ‘বিদ্রোহ’ দেখা দিয়েছে। তাই শীর্ষ দুই নেতার সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে দুই বলয়ের আরও অর্ধডজন প্রার্থী হয়েছেন। কেউ কাউকে ছাড় দিতে রাজি নন। উপজেলা নির্বাচন ঘিরে আধিপত্যের লড়াই শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে ঠেকবে সেটি দেখার অপেক্ষায় মণিরামপুরবাসী। মণিরামপুর উপজেলা নির্বাচনে ১৬৫ ভোট কেন্দ্রে ও ৯৩১টি কক্ষে ভোট গ্রহণ অুনষ্ঠিত হবে। সেখানে ১৬৫ জন প্রিজাইডিং অফিসার ও ৯৩১ সহ-প্রিজাইডিং অফিসার দায়িত্ব পালন করবেন। এ উপজেলায় মোট ভোটার ৩লাখ ৬০হাজার ৭৩৫ জন ভোটার ভোটাধিকার প্রযোগ করবেন।