বাংলার ভোর ডেস্ক
উৎসবমুখর পরিবেশে বাঙালির চিরায়ত লোকজ ঐতিহ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, মঙ্গল শোভাযাত্রা ও মেলাসহ নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে উদযাপিত হয়েছে বাংলার নববর্ষ ৪১৩১।
সাতক্ষীরা সংবাদদাতা
সাতক্ষীরায় উৎসবমুখর পরিবেশে বাঙালির চিরায়ত ঐতিহ্য তুলে ধরে নানা আয়োজনে উদযাপিত হয়েছে বাঙালির লোকজ ঐতিহ্য বহনকারী সাংস্কৃতিক উৎসব পহেলা বৈশাখ।
১৪ এপ্রিল জেলা প্রশাসনের আয়োজনে দিবসটি উপলক্ষে সকাল ৮টায় কালেক্টরেট পার্কে জাতীয় সংগীত ও বৈশাখের গান এসো হে বৈশাখ এসো এসো গানের মধ্যে দিয়ে দিবসের শুভ সূচনা হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে তিন দিনব্যাপি বৈশাখী মেলার ও মঙ্গল শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির। এ সময় অতিথি ছিলেন পুলিশ সুপার মতিউর রহমান সিদ্দিকী।
মঙ্গল শোভাযাত্রাটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে শহরের শহিদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে গিয়ে মেলা প্রাঙ্গনে গিয়ে শেষ হয় এবং সেখানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সরোয়ার হোসেন, স্থানীয় সরকার বিভাগ সাতক্ষীরা উপপরিচালক মাশরুবা ফেরদৌস, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বিষ্ণুপদ পাল, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) কাজী আরিফুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আতিকুল ইসলাম, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ভারপ্রাপ্ত কোহিনুর ইসলাম, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শোয়াইব আহমেদ, সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালযের প্রধান শিক্ষক এসএম আব্দুল্লাহ আল-মামুন, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শাহাজান আলী, জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ পরিচালক সন্তোষ কুমার নাথ, এনডিসি শাহ নেওয়াজ তানভীর, জেলা তথ্য অফিসার জাহারুল ইসলাম, ডিআইও-১ ইয়াসিন আলম চৌধুরী, সহ জেলার বিভিন্ন দপ্তরের প্রধান, বীর মুক্তিযোদ্ধা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
কোটচাঁদপুর
কোটচাঁদপুর সংবাদদাতা জানান, বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্য লোকজ উপকরণ গরুর গাড়ি, পুতুল, রঙিন প্লাকার্ডসহ নানা আয়োজনে সকালে উপজেলা পরিষদ চত্বর থেকে বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়ে শহর প্রদক্ষিণ শেষে সরকারি পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শেষ হয়।
পরে বিদ্যালয় মাঠে বর্ষবরণ উৎসবে উপজেলা নির্বাহী অফিসার উছেন মে’র সভাপতিত্বে ও উপজেলা তথ্য সেবা কর্মকর্তা তানিয়া সুলতানার সঞ্চালনায় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শরিফুন্নেছা মিকি, ভাইস চেয়ারম্যান রিয়াজ হোসেন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পিংকি, ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নানসহ উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণী পেশার মানুষ। এ সময় উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির উপস্থাপনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করা হয়। পরে দেশীয় হাডুডু ও লাঠি খেলা উপভোগ করেন অতিথিরা।
অভয়নগর
অভয়নগর সংবাদদাতা জানান, উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে নওয়াপাড়া শংকরপাশা সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠ থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রাটি উপজেলা পরিষদ চত্বরে এসে শেষ হয়। বর্ণিল সাজে মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কেএম আবু নাওশাদের সভাপতিত্ব উপজেলা পরিষদের চত্বরে বর্ষবরণ মঞ্চে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন যশোর-৪ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য এনামুল হক বাবুল। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন অভয়নগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি শাহ্ ফরিদ জাহাঙ্গীর।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন নওয়াপাড়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ রবিউল হাসান, উপজেলা পরিষদেও ভাইস চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান তারু, অভয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম আকিকুল ইসলাম, নওয়াপাড়া বাজার কমিটির সভাপতি গাজী নজরুল ইসলাম, উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মঈনুর জহুর মুকুল প্রমুখ। উপজেলা পরিষদ চত্বরে বর্ষবরণ মঞ্চে আলোচনা শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।
পাইকগাছা
পাইকগাছা প্রতিনিধি জানান, ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে, কঠোর ব্রত ও অনুশাসনের মধ্যে দিয়ে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে চড়ক পূজা উদযাপিত হয়েছে। চৈত্র মাসের শেষ দিন চৈত্র সংক্রান্তিতে পালিত হয় চড়ক পুজো। এটি মূলত বাঙালি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ লোক উৎসব।
উপজেলার গদাইপুরে ঐতিহ্যবাহী বাজারখোলা গাছতলা মন্দিরে ৩ দিনব্যাপি চড়ক পূজার শেষ ও চৈত্র মাসের শেষ দিন গদাইপুর ফুটবল মাঠে চৈত্র সংক্রান্তি মেলা বসে। মেলায় মৃৎশিল্প, লোহা, কুটির শিল্পসহ বিভিন্ন পণ্য ও মিষ্টান্ন দ্রব্য বিক্রি হয়। মেলায় নাগরদোলাসহ বিভিন্ন বিনোদনের ব্যবস্থা থাকায় শিশুদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়। মেলার সার্বিক পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিলেন, চৈত্র সংক্রান্তি মেলা ও বৈশাখী উৎসব উদযাপন কমিটির আহবায়ক সাংবাদিক প্রকাশ ঘোষ বিধান।
মাগুরা
মাগুরা প্রতিনিধি জানান, জেলা প্রশাসন মাগুরার আয়োজনে বর্ষবরণ উপলক্ষে তিন দিনব্যাপি মেলার আয়োজন করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার মেলার সমাপনী।
বর্ষবরণ উপলক্ষে ১৪ এপ্রিল বের হওয়া মঙ্গল শোভাযাত্রা কালেক্টর চত্ত্বর হতে শহরের ভায়নার মোড় হয়ে ঐতিহাসিক নোমানী ময়দানে গিয়ে শেষ হয়। এই শোভাযাত্রায় ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে মাগুরার সর্বস্তরের জনগণ বাঙালি সাজে ব্যানার, ফেস্টুন, মুখোশ, বেলুন, গরুর গাড়ি, ঘোড়ার গাড়ি ইত্যাদি নিয়ে অংশগ্রহণ করে।
এছাড়া ঐতিহাসিক নোমানী ময়দানে তিন দিনব্যাপি লোকজ মেলার উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবু নাসের বেগ। মেলা উদ্বোধন শেষে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে বীর মুক্তিযোদ্ধা আছাদুজ্জামান মিলনায়তনে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব তানিয়া ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. কলিমুল্লাহ, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা; সকল সরকারী বেসরকারী দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ; শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকবৃন্দ; সাংবাদিক ও সুধীবৃন্দ।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষে শিশু একাডেমির আয়োজনে বিভিন্ন প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
এছাড়া জেলা প্রশাসনের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে নিয়ে জেলা প্রশাসকের বাংলো ‘মাগুরা হাউজ’-এ বর্ষবরণ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পান্তা উৎসবের আয়োজন করা হয়।
কেশবপুরে
কেশবপুর ও পৌর প্রতিনিধি জানান, প্রশাসনের উদ্যোগে এ উপলক্ষে মঙ্গল শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পুরস্কার বিতরণের আয়োজন করা হয়। উপজেলা প্রশাসনের পাশাপাশি উপজেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, চারুপীঠ একাডেমিসহ বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পৃথকভাবে নববর্ষ উদযাপন করেছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তুহিন হোসেনের সভাপতিত্বে কেশবপুর পাবলিক ময়দানে বাংলা নববর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনের সংসদ সদস্য আজিজুল ইসলাম। বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন, পৌর মেয়র রফিকুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি তপন কুমার ঘোষ, উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নাসিমা সাদেক, কেশবপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) দেবাশীষ রায়, জেলা পরিষদের সদস্য টিপু সুলতান, উপজেলা নাগরিক সমাজের সভাপতি অ্যাডভোকেট আবু বক্কর সিদ্দিকী, সহকারী অধ্যাপক মশিউর রহমান, উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ স¤পাদক মোতাহার হোসাইন, চারুপীঠ একাডেমির পরিচালক উৎপল দে প্রমুখ।
এদিকে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সংগীত, নৃত্য, আবৃত্তি ও চিত্রাংকন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে সোমবার সকালে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন উপজেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা বিমল কুমার কুন্ডু।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, কেশবপুর উপজেলা শিশু একাডেমির শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা বিমল কুমার কুন্ড, কেশবপুর নিউজ ক্লাবের সভাপতি ও পৌর বাড়ি মালিক সমিতির সভাপতি মো. আশরাফুজ্জামান, উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. মাসুদুজ্জামান, উপজেলা যুব উন্নয়ন কমকর্তা পুলক কুমার শিকদার, কেশবপুর নিউজ ক্লাবের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও অবসরপ্রাপ্ত সেনা কল্যাণ সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক মোস্তাফিজুর রহমান মিন্টু প্রমুখ।