বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোর জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের নেতা সাইফুজ্জামান পিকুল ও তার সহযোগী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনিয়ম, লুটপাট, দুর্নীতি তদন্তের উদ্যোগ নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অনুসন্ধানের স্বার্থে চার কর্মকর্তা-কর্মচারিকে তলব করেছে দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা। তারা হলেন, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (নাম উল্লেখ নেই), সহকারী প্রকৌশলী মো. ওহিদুজ্জামান, ভারপ্রাপ্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা লুৎফর রহমান ও অফিস সহায়ক সরোয়ার উদ্দিন। গত ১৪ জানুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত যশোর জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক আল আমিন স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত নোটিশ ইস্যু করা হয়েছে।
দুদকের নোটিশে বলা হয়েছে, সড়ক, মহাসড়কের সরকারি হাজার হাজার গাছ বিক্রি ও বিভিন্ন প্রকল্পের কোটি কোটি টাকা লোপাট, নিয়োগ বাণিজ্য, জমি ইজারা ও দোকান বরাদ্দের টাকা আত্মসাতপূর্বক নিজের নামে ও পরিবারের সদস্যদের নামে জ্ঞাত আয় বর্হিভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ বিষয়ে অনুসন্ধানপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে চার কর্মকর্তা-কর্মচারীর বক্তব্য শ্রবণ ও গ্রহণ করা প্রয়োজন।’ গত ২৩ জানুয়ারি তারিখে তাদেরকে দুদকে হাজির হওয়ার নোটিশ দেয়া হয়। তবে পরবর্তীতে তারিখ পরিবর্তন করে ৩ ফেব্রুয়ারি নির্ধারণ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আছাদুজ্জামান রোববার বিকেলে বলেন, দুদকের ইস্যুকৃত নোটিশ পেয়েছি। তারা আমাদের বক্তব্য শুনবেন।’
জানা যায়, ২০১৭ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি মারা যান যশোর জেলা পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান শাহ হাদিউজ্জামান। ওই বছরের ১৭ এপ্রিল উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সাইফুজ্জামান পিকুল। ২০২২ সালের ১৭ অক্টোবর দ্বিতীয় মেয়াদে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন পিকুল। দুই দফায় প্রায় সাড়ে ৭ বছর তিনি চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর আত্মগোপনে চলে গেছেন সাইফুজ্জামান পিকুল।
অভিযোগ রয়েছে, যশোর-খুলনা মহাসড়ক, যশোর-ঝিনাইদহ ও যশোর-নড়াইল মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কের হাজার হাজার গাছ বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়েছেন সাবেক চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিকুল সিণ্ডিকেট। প্রকল্প বরাদ্দে ২৫ শতাংশ কমিশন দিত হত। ভুয়া প্রকল্প তৈরি করে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন পিকুল সিন্ডিকেট। বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল নির্মাণ প্রকল্পে সরকারি বরাদ্দ থাকলেও জেলা পরিষদ থেকে একাধিকবার বরাদ্দ দিয়ে টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। প্রতিবছর শীতবস্ত্র বিতরণ, ইফতার, দরিদ্রদের ঈদসামগ্রি বিতরণ ও দরিদ্রদের আর্থিক সহায়তার বরাদ্দের বেশির ভাগ আত্মসাৎ হয়েছে। জেলা পরিষদের মালিকানাধীন যশোর শহরের খাজুরা বাসস্ট্যাণ্ড ও যশোর টাউন মাঠসংলগ্ন মার্কেটের দোকান বরাদ্দের নামে প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা ঘুষ আদায় করা হয়েছে। গাছ বিক্রি, দোকান বরাদ্দ, ভুয়া প্রকল্প, নিয়োগ বাণিজ্য, কমিশন বাণিজ্যের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা কামিয়েছেন পিকুল সিণ্ডিকেট। সাইফুজ্জামান পিকুলের অনিয়ম, দুর্নীতির সহযোগি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন জেলা পরিষদের দায়িত্বপালন করা একাধিক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, সহকারী প্রকৌশলী ওয়াহিদুজ্জামান, প্রশাসনিক কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) লুৎফর রহমান সরদার ও অফিস সহায়ক সরোয়ার উদ্দিন। গত ২ ডিসেম্বর অফিস আদেশে প্রধান সহকারী (ভারপ্রাপ্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা) লুৎফর রহমান সরদারকে নড়াইল জেলা পরিষদে ও অফিস সহায়ক সরোয়ার উদ্দিনকে মেহেরপুর জেলায় বদলি করা হয়েছে। মূলত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর ভেঙে পড়ে পিকুল সিন্ডিকেট। তাদের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ বেরিয়ে আসে। এরপর দুদক তাদের দুর্নীতি অনুসন্ধানের উদ্যোগ নিয়েছে।