বাংলার ভোর প্রতিবেদক
গত ৫ আগস্ট ছিনতাইকারীদের হাতে খুন যশোরের কেশবপুরের ইজিবাইক চালক সোহাগ হোসেন বায়জিদ (২৪)। এ সময় দেশের পরিস্থিতি টালমাটাল থাকায় আইনশৃংখলা বাহিনীর তৎপরতাও ছিল না। ফলে ক্লুলেস হত্যাকাণ্ডটির রহস্য উদঘাটন নিয়ে সংশয়ে ছিল পরিবার। এমন পরিস্থিতিতে সন্তান হত্যার রহস্য উদঘাটন ও বিচারের দাবিতে ৩ সেপ্টেম্বর যশোরের নবাগত পুলিশ সুপার জিয়াউদ্দিন আহম্মেদের কাছে যান পঙ্গু হায়দার আলী। সাক্ষাৎকালে এসপি কথা দেন ৭২ ঘন্টার মধ্যে সোহাগ হত্যার রহস্য উদঘাটন করবে পুলিশ। সেই কথা মত ৭২ ঘন্টার মধ্যেই ক্লুলেস এই হত্যাকাণ্ডের প্রধান অভিযুক্ত মনিরুল শেখকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। হত্যকাণ্ডের রহস্যও উদঘাটন হয়েছে।
বুধবার রাতে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার শিকড়ি এলাকায় অভিযান চালিয়ে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ সময় তার কাছ থেকে ছিনতাই করা ইজিবাইকটি উদ্ধার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানানো হয়। এ সময় পুলিশ সুপার জিয়া উদ্দিন আহম্মেদ ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোছাইন উপস্থিত ছিলেন। নিহত সোহাগ কেশবপুরের বুড়িহাটি গ্রামের হায়দার আলীর ছেলে। আর হত্যাকারী মনিরুল শেখ (২২) একই উপজেলার হাসানপুরের হাবিবুর শেখের ছেলে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ৫ আগস্ট ভোরে কেশবপুরের বুড়িহাটি গ্রামের হায়দার আলীর ছেলে সোহাগ হোসেন বায়জিদকে (২৪) অজ্ঞাত ব্যক্তি মোবাইল ফোনে হাসানপুর থেকে সাতক্ষিরা ঝাউডাঙ্গা বাজারে যাওয়ার কথা বলে ইজিবাইক ভাড়া করে। এরপর তাকে নিয়ে রওয়ানা দিলে পথিমধ্যে কেশবপুর উপজেলার কাবিলপুর পৌঁছালে বায়োজিদকে গলায় ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়। এরপর লাশ রাস্তার পাশে পুকুরে ফেলে দিয়ে ইজিবাইকটি ছিনতাই করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। ওই ঘটনায় নিহত বায়োজিদের পিতা বাদী হয়ে কেশবপুর থানায় মামলা করেন। এরপর ডিবি পুলিশের একটি টিম গতকাল রাতে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার শিকড়ি এলাকায় অভিযান চালিয়ে ঘাতক মনিরুলকে গ্রেফতার ও ছিনতাইকৃত ইজিবাইক উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, আসামি মনিরুল ছাগলের ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়ে সাতক্ষিরা ঝাউডাঙ্গা বাজারে ছাগল নিয়ে যাওয়ার কথা বলে ইজিবাইক ভাড়া করে। হাসানপুর বাজার থেকে ধনপোতা ঘেরের রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় ধারালো অস্ত্র দিয়ে চালক সোহাগের গলায় পোচ দিয়ে হত্যা করে লাশ রাস্তার পাশে পানিতে ফেলে দিয়ে ইজিবাইকটি নিয়ে শিকড়ি গ্রামে খোকনের বাড়িতে রেখে বিক্রির চেষ্টা করে।
যশোরের নবাগত পুলিশ সুপার জিয়াউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘নিহতের বাবা ৩ সেপ্টেম্বর আমার দপ্তরে এসেছিলেন। ওনাকে আমি কথা দিয়েছিলাম, আগামী ৭২ঘন্টার মধ্যে আপনার ছেলের হত্যার রহস্য ও জড়িতদের আটক করবো। যেেশারে যোগদানের পর প্রথম হত্যার মামলা এটি। তাই আমি এটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলাম। প্রথম চ্যালেঞ্জে আমি সফল হয়েছি।
তিনি বলেন, ‘আমাদের কার্যক্রম বন্ধ নেই। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সবর্দা তৎপর আছে জেলা পুলিশ। যেকোন অপরাধ সংঘটিত হওয়ার সাথে সাথে দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছেন তারা। তারই প্রমাণ এই কেশবপুরের আলোচিত ক্লুলেস হত্যার রহস্য উদঘাটন।’
এদিকে, একমাত্র উপার্জনক্ষম সন্তানের হত্যাকারীকে দেখতে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আসেন নিহত বায়জিদের পিতা মাতা ও স্ত্রী। স্ত্রীর কোলে ছিলেন দুই বছর বয়সী বায়জিদের সন্তানও। এ সময় তারা সন্তান হত্যার বিচারের দাবি জানান। বারবার ঘাতক মনিরুলের উদ্দেশ্যে করে তারা জানতে চান কেন তাদের ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে।
কান্নাজড়িত কন্ঠে নিহতের মা নাছিমা বেগম বলেন, ‘কেন আমার বুকটা খালি করে দিলি। তোর কি কোন মায়া দয়া নেই। আমার বায়জিদের ঘরে দুই বছর বয়সী ছেলে রয়েছে। তার কি হবে। আমার বায়জিদের ইজিবাইক চালিয়েই আমাদের সংসার চালাতো। এখন আমাদের কি হবে। কেন তুই এই নিষ্ঠুর কাজটা করলি।’

Share.
Leave A Reply Cancel Reply
Home
News
Notification
Search
Exit mobile version