কাজী নূর
যশোরের বাজারে সবজির দাম স্থিতিশীল থাকলেও অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে মাছের দাম। কমেছে কাঁচা মরিচ, ভোজ্যতেলের দাম। বিক্রেতারা বলছেন, রাষ্ট্রীয় নির্দেশে ইলিশ সরবরাহ বন্ধ সেই সাথে বাজারে অন্যান্য মাছের সরবরাহ কমায় দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে মাছের দাম বৃদ্ধিতে অসন্তোষ প্রকাশ করে ভোক্তারা বলছেন, মগের মুল্লুকের মতো যার যেমন ইচ্ছা, মাছের দাম হাঁকিয়ে দিচ্ছে। এতে আমাদের সাধারণ মানুষদের করণীয় কিছু নেই। এসব যন্ত্রণা সয়ে যাওয়া বা মাছ খাওয়া বন্ধ করা ছাড়া আমাদের কোন উপায়ন্তর নেই।
শুক্রবার ছুটির দিন হিসেবে বড় বাজারে হরেক রকম মাছের সরবরাহ বৃদ্ধি পেলেও দাম ভোক্তাদের নাগালের বাইরে। লক্ষ্য করা গেছে, বিক্রেতারা মাছের পসরা সাজিয়ে বসলেও দাম শুনে ফিরে যাচ্ছেন অসংখ্য ক্রেতা।
শহরের রবীন্দ্রনাথ সড়কের বাসিন্দা ব্যবসায়ী অলোকানন্দ মজুমদার বলেন, সময়টা যাচ্ছে মগের মুল্লুকের মতো। ব্যবসায়ীরা ইচ্ছমতো দাম হাঁকাবে আর আমাদের সেটি কিনতে হবে এটা হতে পারে না। কিন্তু আমাদের মতো সাধারণ মানুষদের এতে করণীয় কিছু নেই। মাছ না কিনে বাড়িতে ফিরে এটাই হোক আমাদের প্রতিবাদের ভাষা। ১৮০ টাকা কেজির ব্রয়লার কিনে খাবো। তবু অস্বাভাবিক দামে মাছ নয়।
মাছ বিক্রেতা শামছুর আলী বিশ্বাস বলেন, শুক্রবার হিসেবে আজ আড়তে মাছের আমদানি সন্তোষজনক। তবুও বেশি দাম দিয়ে মাছ কিনতে হয়েছে। যেমন দামে কিনি সামান্য লাভ রেখে বিক্রি করি। এছাড়া দোকান ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, খাজনাসহ নানা খরচ রয়েছে।
শামছুর বিশ্বাস আরো বলেন, ক্রেতারা বোঝে না যে, মাছের দাম বৃদ্ধি বা হ্রাস করা আমাদের হাতে না। তবুও অনেকের অনেক কটু কথা সয়ে দীর্ঘকাল ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছি।
শুক্রবার সকালে যশোর বড়বাজার হাজী মোহাম্মদ মহসিন রোড ও ঘোপ বাবলাতলা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে কাঁচা মরিচের দাম সর্বোচ্চ ১৬০ টাকা কেজি। যা গত কয়েকদিনের ব্যবধানে তিন ভাগের দুই ভাগ দাম হ্রাস পেয়েছে। কাঁচা মরিচের আড়তদার কালীবাড়ি এলাকার বিধান সাহা জানান, দুর্গাপূজার ছুটির পর ভারতীয় কাঁচা মরিচ আমদানির ফলে দাম অনেক কমেছে। এছাড়া বর্তমানে কুমড়ো ৪০ টাকা, পেঁপে ২০ টাকা, কচুর মুখি ৩০ টাকা, ধুন্দল ৪০ টাকা, আমড়া ৫০ টাকা, ওল ৮০ টাকা, পুঁইশাক ২০ টাকা, কুশি ৬০ টাকা, ঝিঙে ৮০ টাকা, কচুর লতি ৭০ টাকা, উচ্ছে ৮০ টাকা, শষা ৪০ টাকা, কাকরোল ৬০ টাকা, বেগুন ১২০ টাকা, ঢেরষ ৬০ টাকা, পটল ৫০ টাকা, কলা ৪০ টাকা, বরবটি ৪০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া প্রতি পিস লাউ ৫০ টাকা, চাল কুমড়ো ৪০ টাকা এবং সবুজ শাক ২০ টাকা আটি বিক্রি হচ্ছে।
অপরদিকে, আগাম শীতকালীন সবজির সরবরাহ কিছুটা হ্রাস পেয়েছে বলে লক্ষ্য করা গেছে। বর্তমানে বাঁধা কপি ১০০ টাকা, ফুলকপি ২৫০ টাকা, শিম ২০০ টাকা, টমেটো ১০০ টাকা, জলপাই ৪০ টাকা, পুঁইশাকের মিচুড়ি ১২০ টাকা, মেটে আলু ১০০ টাকা, বিটরুট ১৪০ টাকা, মুলো ৪০ টাকা, গাজর ১৪০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া পালং শাক ৩০ টাকা আটি বিক্রি হচ্ছে।
বড় বাজারের বিক্রেতা ইন্তাজ আলী বলেন, প্রায় সব রকম কাঁচা সবজির দাম স্থিতিশীল রয়েছে। গ্রীস্মকালীন কিছু সবজি শেষের পথে, এগুলোর সরবরাহ কম আবার চাহিদা বেশি তাই দামও বেশি। এ সপ্তাহে আগাম শীতকালীন সবজির সরবরাহ কিছুটা হ্রাস পাওয়ায় দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। আশা করা যায় আবহাওয়া স্বাভাবিক থাকলে সবজির দাম আরো কমবে।
মাছের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে রুই মাছ ৪৫০ টাকা, কাতলা ৪৫০ টাকা, হরিণা চিংড়ি ৯০০ টাকা, টেংরা ৬৫০ টাকা, নাইলোটিকা ১৭০ টাকা, পাবদা ৪০০ টাকা, শিং ৪৫০ টাকা, গলদা চিংড়ি ১২০০ টাকা, পাঙাশ ২৮০ টাকা, কৈ ২৬০ টাকা, বেলে ১২০০ টাকা, সিলভার কার্প ১৯০ টাকা, বাটা, ২৫০ টাকা, পারশে ৬০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
মাছ বিক্রেতা লোকনাথ সাধু বলেন, আজ অনেক বেশি দামে মাছ কিনতে হয়েছে। কিনতে এলেও ক্রেতারা দাম শুনে ফিরে যাচ্ছেন। খেয়াল করে দেখেন ছুটির দিন তাই ক্রেতার সংখ্যা অনেক। কিন্তু বিক্রি হচ্ছে না তেমন। মুরগি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে মুরগি ব্রয়লার ১৮০ টাকা, লেয়ার ৩৩০ টাকা, সোনালী ২৬০ টাকা, দেশি ৬০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
চালের বাজার ঘুরে দেখা গেছে বর্তমানে, স্বর্ণা ৫০ টাকা, মিনিকেট ৬৩ টাকা, আটাশ ৫৮ টাকা, বাসমতী ৮০ থেকে ৮২ টাকা, নাজিরশাইল ৮০ টাকা, কাজললতা ৫৬ থেকে ৫৮ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান আর জি রাইসের মালিক অধীর অধিকারী বলেন, চালের দাম আর বাড়বে না। হয়ত আরো ২/১ টাকা কমতে পারে। ভারত থেকে চাল আমদানির ফলে বাজার স্থিতিশীল রয়েছে।
এদিকে, ভোজ্যতেল সয়াবিনের দাম কেজিতে ২ টাকা কমে ১৮৮ টাকা ও বোতলজাত সয়াবিন ১৯০ টাকা লিটার বিক্রি হচ্ছে।
সরিষার তেল ২৩০ টাকা, পাম তেল ১৭২ টাকা, সুপার ১৭৮ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া আটা ৪৫ টাকা, ময়দা ৫৫ টাকা, দেশি মসুরির ডাল ১৪০ টাকা, মোটা মসুরির ডাল ১০০ টাকা, ছোলার ডাল ১২০ টাকা, দেশি মুগ ডাল ১৫০ টাকা, এলসি মুগ ডাল ১২০ টাকা, সাদা চিনি ১০৫ টাকা, লাল চিনি ১৩০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। আলু ২০ টাকা, পেঁয়াজ ৭০ টাকা, আদা ১৮০ টাকা, রসুন ১২০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
ভাই ভাই স্টোরের মালিক ওবায়েদ বলেন, সবকিছুর দাম স্থিতিশীল রয়েছে। সয়াবিন তেলের দাম আরো একটু কমতে পারে। তবে গরম মশলার দাম দিন দিন নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে।
ডিমের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে, গ্রেড অনুযায়ী লাল ডিম ৩৪, ৩৮, ৪২ টাকা, সাদা ৩৬ থেকে ৩৮ টাকা, হাঁস ৬০ থেকে ৬৪ টাকা, সোনালী ৪৮ টাকা ও কোয়েল ১০ টাকা হালি বিক্রি হচ্ছে। ডিম বিক্রেতা সজীব হোসেন বলেন, উৎপাদন ও সরবরাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। সামনে ডিমের দাম কিছুটা কমতে পারে।