বাংলার ভোর প্রতিবেদক
হিন্দু অধ্যুষিত যশোরের ভবদহ এলাকায় ‘হিন্দু সম্মেলন’ করেছে জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা। সোমবার বিকেলে অভয়নগর উপজেলার সুন্দলী বাজারে জামায়াতে ইসলামী সুন্দলী ইউনিয়ন সনাতন শাখার উদ্যোগে এই সম্মেলন হয়। সম্মেলনে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে যশোর-৪ আসনের জামায়াতের মনোনীত প্রার্থী অধ্যাপক গোলাম রসুল ও যশোর-৫ আসনের প্রার্থী অ্যাডভোকেট গাজী এনামুল হক উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সনাতনীদের বন্ধু হিসেবে পাশে থেকে সকল সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন দুই প্রার্থী। এ সময় সনাতনীদের সরব উপস্থিতি ও উলুধ্বনিতে প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে পুরো অনুষ্ঠান। পাশাপাশি ব্যতিক্রমী এ উদ্যোগ ও আশ্বাসে খুশি অংশগ্রহণকারীরাও।
অনুষ্ঠানে যশোর-৪ আসনে জামায়াতের মনোনীত প্রার্থী অধ্যাপক গোলাম রসুল বলেন, ‘হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষকে বিভিন্ন জায়গায় নাশকতার মামলা দেয়া হচ্ছে, অনেককেই গ্রেফতার করা হচ্ছে। আমি প্রশাসনকে বলতে চাই, নাশকতার মামলা বলে কোন মামলা হবে না। যদি মিথ্যা মামলা দিয়ে সনাতন ধর্মের মানুষকে গ্রেফতার করা হয়, তার দায়ভার প্রশাসনকে বহন করতে হবে। জামায়াতে ইসলামী তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে। আমরা চাই না, নিরাপরাধ মানুষকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হোক। এখানকার মানুষের চাওয়া নিরাপত্তা, নিরাপদ জনপদ। আমরা তাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় গেলে, অব্যশই সনাতন ধর্মাবলম্বী মানুষদের আমাদের উদারতা, ভালোবাসা দিয়ে তাদের দেখে রাখবো। তাদের বিপদে আপদে সবসময় বন্ধুর মতো দাঁড়াতে চাই। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা যেন নিরাপদে বসবাস করতে পারে; সেই ব্যবস্থা করবে জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা।
আরেক প্রার্থী গাজী এনামুল হক বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ জামায়াতকে ক্ষমতায় আনলে দুর্নীতিমুক্ত, চাঁদাবাজমুক্ত একটি সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়বে। আজ এই হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষদের এই সম্মেলনে আসতে একটি পক্ষ বাঁধা দিচ্ছে, হুমকি দিচ্ছে, তারাই ৫ আগস্টের পর থেকে চাঁদাবাজিতে লিপ্ত। আমরা চাঁদাবাজির কবর রচনা করে দিবো। হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষকে ভয় দেখিয়ে মামলার ভয় দেখিয়ে দমিয়ে রাখতে পারবে না। হিন্দু সম্প্রদায়ের পাশে জামায়াতের নেতাকর্মীরা বন্ধুর মতো মিশে থাকবে।’
সুন্দলী ইউনিয়ন সনাতন শাখার সভাপতি ডা. জগদীশ বিশ্বাসের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন যশোর জেলা জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক গোলাম কুদ্দুস, উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীর অধ্যাপক সরদার শরিফ হোসেন, শিক্ষাবিদ চিত্তরঞ্জন বিশ্বাস, সমাজসেবক কালীদাস ধর প্রমুখ।
হিন্দু অধ্যুষিত ভবদহ এলাকা যশোরের মণিরামপুর ও অভয়নগর উপজেলা দুটির সীমান্তবর্তী এলাকা সুন্দলীতে হিন্দু সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সনাতনীদের ঢল নামে সম্মেলনস্থলে।
জামায়াতের সমাবেশে নজিরবিহীনভাবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের এরকম ঢল নামার কারণ হিসেবে অংশগ্রহণকারীদের কেউ কেউ তুলে ধরেন ‘নিরাপত্তার আশ্বাসের’ কথা। তাদের ভাষায়, ৫ আগাস্টের পর হিন্দু বসতিগুলোয় এক ধরনের ভয়-আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। পরে জামায়াত নেতারা তাদের এসে ‘নিরাপত্তার আশ্বাস’ দিয়েছেন। তবে জামায়াত নেতাদের ভাষ্য, হিন্দু মুসলিমের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐক্যের বন্ধনে অটুট রাখতে এই সম্মেলন।
