বাংলার ভোর ডেস্ক

দেশে বর্তমানে বন্যাপ্লাবিত জেলার সংখ্যা ১১টি। ১২ লাখ ৭ হাজার ৪২৯টি পরিবার পানিবন্দি। বন্যায় এখন পর্যন্ত প্রাণ গেছে ২৭ জনের, আর ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা ৫৬ লাখ ১৯ হাজার ৩৭৫ জন। মঙ্গলবার সাংবাদিকদের এই তথ্য জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম। সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন উপদেষ্টা। সেখানে বিভিন্ন বাহিনীর ও সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

তিনি জানান, বন্যা আক্রান্ত জেলার মধ্যে রয়েছে ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, লক্ষ্মীপুর ও কক্সবাজার। এসব জেলার ৭৪টি উপজেলা বন্যাপ্লাবিত। ক্ষতিগ্রস্ত ইউনিয়ন ও পৌরসভার সংখ্যা ৫৪১টি।

বন্যায় এ পর্যন্ত যে ২৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে কুমিল্লায় ১০ জন, ফেনীতে ১ জন, চট্টগ্রামে ৫ জন, খাগড়াছড়িতে ১ জন, নোয়াখালীতে ৫ জন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১ জন, লক্ষ্মীপুরে ১ জন ও কক্সবাজারে ৩ জন মারা গেছে। এছাড়া মৌলভীবাজারে ২ জন নিখোঁজ আছেন।

উপদেষ্টা জানান, পানিবন্দি বা ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের জন্য মোট ৩ হাজার ৮৮৬টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে মোট ৫ লাখ ৯ হাজার ৭২৮ জন লোক এবং ৩৪ হাজার ৪২১টি গবাদিপশুকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। ত্রাণ উপদেষ্টা বলেন, কীভাবে বন্যা হলো, এটা রাজনৈতিক বন্যা পরিস্থিতি কিনা তা খতিয়ে দেখতে হবে। এ বিষয়ে তিনি সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

উপদেষ্টা জানান, ১১ জেলার ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসাসেবা দিতে মোট ৬২০টি মেডিক্যাল টিম চালু রয়েছে। সব বাহিনীর সহায়তায় ত্রাণ সহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত আছে। সরকার সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে ত্রাণ পৌঁছে দিচ্ছে। সব জেলা ও উপজেলায় পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী মজুত রয়েছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী রেজা জানান, বন্যাদুর্গত এলাকার কয়েক জায়গায় ফিল্ড হাসপাতাল প্রস্তুত আছে। সেনাবাহিনী ও জেলার সিভিল সার্জন কার্যালয়ের চিকিৎসকরা সেখানে সেবা দিচ্ছেন। পাশাপাশি স্থানীয় ক্লিনিক, হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বন্যার্তদের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকরা নির্দেশনা দিয়েছেন।

ব্রিফিংয়ে আরও জানানো হয়, বন্যার্তদের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে ছয় দিনে নগদ কালেকশন হয়েছে ৫ কোটি ৭৩ লাখ টাকার বেশি। এর মধ্যে ৬০ লাখ টাকার বেশি এসেছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে।

এছাড়া দেশের বন্যা উপদ্রুত এলাকায় সরকারি-বেসরকারিসহ সব পর্যায় থেকে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত আছে। বন্যা আক্রান্ত জেলাগুলোর জেলা প্রশাসককে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, মেডিক্যাল টিম ও স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে সমন্বয় করে একসঙ্গে কাজ করার প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বন্যা আক্রান্ত জেলাগুলোতে মোবাইল ও টেলিফোন যোগাযোগ পুনঃস্থাপন করা হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে কন্ট্রোল রুম সার্বক্ষণিক খোলা রয়েছে। তথ্য ও সহযোগিতার জন্য ০২৫৫১০১১১৫ নম্বর চালু রয়েছে। এছাড়া সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য-সহায়তা দিতে চাইলে আগ্রহী ব্যক্তিরা প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলের অ্যাকাউন্টে অর্থ সহায়তা পাঠাতে পারেন। হিসাবের নাম: ‘প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল’, ব্যাংক: সোনালী ব্যাংক করপোরেট শাখা, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, হিসাব নম্বর: ০১০৭৩৩৩০০৪০৯৩।

এছাড়াও যারা ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত হয়ে প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে সহায়তা (চেক/পে-অর্ডার/ব্যাংক ড্রাফটের মাধ্যমে) দিতে চান, প্রধান উপদেষ্টার পক্ষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সরকারি ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টার কার্যালয়ে এই সহায়তা গ্রহণ করবেন।
যারা ত্রাণ তহবিলে সহায়তা (চেক/পে-অর্ডার/ব্যাংক ড্রাফটের মাধ্যমে) দিতে ইচ্ছুক তাদের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব অঞ্জন চন্দ্র পাল (মোবাইল-০১৭১৮-০৬৬৭২৫) বা সিনিয়র সহকারী সচিব শরিফুল ইসলাম (মোবাইল-০১৮১৯২৮১২০৮)-এর সঙ্গে যোগাযোগ করার অনুরোধ করা যাচ্ছে।

Share.
Leave A Reply Cancel Reply
Exit mobile version