বাংলার ভোর প্রতিবেদক
বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ বরণ করে নিতে প্রস্তুতি চূড়ান্ত করেছে উদীচী যশোর জেলা সংসদ। এবারে পৌর উদ্যানে দিনব্যাপি থাকছে সংগঠনটির বর্ষবরণের অনুষ্ঠানমালা। টানা ৪৮ বছরের ধারাবাহিকতায় উৎসবে মাতবে হাজারও ছেলে-মেয়ে, শিক্ষার্থী ও শিল্পীরা। উৎসবের ২ দিন আগে শনিবার সাংবাদিক সম্মেলনের মধ্য দিয়েই এ কথা জানান নেতৃবৃন্দ। এ সময় লিখিত বক্তব্য পাঠ করে আসিফ আকবর নিপ্পন। বক্তব্য রাখেন এবং সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রর্শেন উত্তর দেন উদীচীর সভাপতি ও বর্ষবরণ উৎসব উৎযাপন পরিষদের আহবায়ক অ্যাড. আমিনুর রহমান হিরু, সাধারণ সম্পাদক ও বর্ষবরণ উৎসব উদযাপন পরিষদের সদস্য সচিব সাজ্জাদুর রহমান খান বিপ্লব, সংগঠনটির সহসভাপতি রজিবুল আলম টিলন, কোষাধ্যক্ষ ফারুক সিদ্দিকী চন্দন, সুকান্ত দাস, আলমগীর কবির, রিয়াদুর রহমানসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ এ সময় উপস্থিত ছিলেন। “নবজাগরণে বাজুক ঢাক, এসো, এসো হে বৈশাখ” এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে উদীচী যশোর জেলা সংসদ প্রতিবারের মতো এ বছরও যশোর পৌর উদ্যানে আয়োজন করতে চলেছে বর্ষবরণ উৎসব ১৪৩২।
৪৮ বছর পূর্বে শহরের পৌর উদ্যানে উদীচী যশোরের আয়োজনে শুরু হওয়া বর্ষবরণ অনুষ্ঠান বিগত বছরের মতো এবারও ১৪৩২ বাংলা নববর্ষের পহেলা তারিখ ভোর ৬:৩১ মিনিটে যশোর পৌরউদ্যানে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়ে দুই পর্বে অর্থাৎ ভোর ৬:৩১ থেকে সকাল ১০:৩০ পর্যন্ত এবং বিকেল ৪:০১ মিনিট থেকে সন্ধ্যা ৭ টা পর্যন্ত চলবে।
১৯৭৩ সালে উদীচী যশোর প্রথম বারেরমতো বর্ষবরণ আয়োজন শুরু করে। তবে প্রথম বছর ঘরের মধ্যে, পরের বছর গাড়িখানা রোডের ক্যালট্যাক্স পেট্রোলপাম্পের সামনে এবং তার পরের বছর ১৯৭৬ সাল হতে উদীচী যশোরের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ডা. কাজী রবিউল হকের পরামর্শে যশোর পৌরউদ্যানের দুই পুকুরের মাঝখানে সাঁকোর উপরে এবং ধীরে ধীরে বর্তমান মঞ্চে। যশোরের এই উৎসবের পথিকৃৎ উদীচী যশোর। যা এখন যশোরবাসীর প্রধান এবং প্রাণের উৎসব। উদীচীর এ আয়োজন ৪৯ বছরে পা রাখতে চলেছে। ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতে পৌরউদ্যান পরিণত হয় বাঙালীর মিলন মেলায়। যশোর শহরে এদিন সর্বত্রই উৎসবের আমেজ বিরাজ করে।
উৎসব সফল করতে বর্ষবরণ উৎসব উদযাপন পরিষদের পাশাপাশি গঠন করা হয় ৮ টি উপ-পর্ষদ। প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও বর্ষবরণের নান্দনিক আমন্ত্রণপত্র প্রস্তুত এবং বিতরণ ইতিমধ্যেই শেষ পর্যায়ে।
উৎসব অনুষ্ঠানে ভোরের প্রকৃতির স্নিগ্ধ আমেজ, শ্রোতার স্পর্শকাতর হৃদয় এবং সঙ্গীতকে এক সুরে বাঁধতে ভৈরবী রাগের মধ্য দিয়ে শুরু হবে বৈশাখের আহ্বান পর্ব। এরপর থাকবে সেই চিরায়ত রবিঠাকুরের “এসো হে বৈশাখ, এসো এসো”। এরপর বাংলার পাঁচ গীতিকবি রবীন্দ্র-নজরুল, রজনীকান্ত সেন, দ্বিজেন্দ্রলাল রায় এবং অতুল প্রসাদ এঁর গান নিয়ে পরের পরিবেশনা। এ ছাড়াও শিশুতোষ পরিবেশনা, বাংলা হারানো দিনের গান, জীবনমুখি গান, লোকসংগীত, আধুনিক ও লোকনৃত্য, পর্যায়ক্রমে সাম্প্রদায়িকতা ও সামাজিক অসংগতির এবং ফিলিস্তিনী জনগণের গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী গণসংগীত ছাড়াও উদীচী গোপালগঞ্জ জেলা সংসদের পরিবেশনায় পল্লিকবি জসীম উদ্দীন রচিত বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ “নকশী কাঁথার মাঠ” এর উপর নির্মিত গীতিনৃত্যনাট্য পরিবেশিত হবে।
এবছর উদীচীর সমগ্র আয়োজনে প্রায় তিন শতাধিক শিল্পী ও কলাকুশলীর অংশগ্রহণে দিনব্যাপি অনুষ্ঠান করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতিবছরের মতো এবারও নববর্ষকে ঘিরে ডা. রবিউল নববর্ষ পদক-১৪৩২ প্রদান করা হবে। এবার এই পদকের জন্য মনোনীত হয়েছেন উদীচী যশোর জেলা সংসদের বর্তমান কার্যকরী কমিটির সদস্য ও সাবেক সভাপতি সোমেশ মুখার্জী। অনুষ্ঠানস্থলের সার্বিক শৃংখলা রক্ষায় গঠিত হয়েছে স্বেচ্ছাসেবক দল।
উদীচীর শতাধিক কর্মী স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে অনুষ্ঠানস্থলে ছোট ছোট উপদলে ভাগ হয়ে মাঠের সার্বিক শৃংখলা নিশ্চিত করার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবে। সেই সাথে জেলা পুলিশ প্রশাসন আইন শৃংখলা বাহিনীর মাধ্যমে মাঠের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে।